পুলিশকর্মীদের সাথে ফেরত যাওয়ার পথে এক আফগান  যুবক৷ ছবি: মাইকেল কাপেলের/ডিপিএ/পিকচার অ্যালায়েন্স
পুলিশকর্মীদের সাথে ফেরত যাওয়ার পথে এক আফগান যুবক৷ ছবি: মাইকেল কাপেলের/ডিপিএ/পিকচার অ্যালায়েন্স

মঙ্গলবার আফগান নাগরিকদের দেশে ফেরত পাঠাতে প্রথম যাত্রীবাহী বিমান ছাড়ার কথা থাকলেও, আপাতত ‘ব্যবস্থাপনাগত’ জটিলতার কারণ দেখিয়ে তা বন্ধ রাখছে জার্মান কর্তৃপক্ষ৷

সোমবার জার্মান কর্তৃপক্ষ জানায় যে, আফগানিস্তান থেকে আসা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে যাদের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, তাদের এখনই ফেরত পাঠাবে না তারা৷

জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট জেহোফারের মুখপাত্র জানান, কিছু ‘ব্যবস্থাপনাগত’ সমস্যার কারণেই এই ‘প্রত্যর্পণ কর্মসূচি’ পিছিয়ে দেওয়া হলো৷

১ মে থেকে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে একাধিক রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির সামরিক বাহিনী৷

প্রত্যর্পণের সব পথই বন্ধ?

শুধু প্রত্যর্পণের জন্য নির্দিষ্ট বিমান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা৷ সংস্থাগুলি মনে করে, আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিম্নগামী হওয়ার ফলেই প্রত্যর্পণ পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে জার্মানি৷

কিন্তু বার্তাসংস্থা এএফপি জার্মান কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানায় যে, ফেরত পাঠানো অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সাথে থাকা জার্মান পুলিশকর্মীদের নিরাপত্তার কথা মাথা রেখেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷

পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় রাজধানী কাবুলগামী সব বিমান ১ থেকে ৬ মে পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে৷

কিন্তু বার্তাসংস্থা ডিপিএ-কে কর্তৃপক্ষ জানায়, আফগানিস্তানে প্রত্যপর্ণের নীতি বহাল রাখছে জার্মানি৷

আফগানিস্তানে জার্মানি যে কারণে

আফগান সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ন্যাটোর শরিক হিসাবে তাদের ‘রেজোলিউট সাপোর্ট’ মিশনের সদস্য হয় জার্মান সামরিক বাহিনী৷ সেকারণেই তাদের পাঠানো হয়েছিল আফগানিস্তানে৷

গত মাসে, জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী আনেগ্রেট ক্রাম্প-কারেনবাওয়ার বলেন যে, জার্মান সামরিকবাহিনীকে যে সকল আফগান স্থানীয় মানুষেরা সাহায্য করেছিলেন, তাদের পাশে সবরকম সাহায্য নিয়ে থাকবে বার্লিন৷

কিছু বিতর্কিত ঘটনা থাকলেও, এমন বেশ কিছু আফগানকে জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় দেবার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে৷

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩ সাল থেকে মোট ৭৮১জনকে জার্মানিতে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷

এই আফগানদের জার্মানিতে নতুন জীবন কিছুটা সহজ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ৷

 ৯/১১- এর পর যা

২০০১ সালের ৯/১১ হামলার পর, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ তালেবানের মতো আরো কয়েকটি চরমপন্থি ইসলামি জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেবার কথা বলেন৷

এরপর, ২০১৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রথমবারের মতো সামরিক পদক্ষেপ থেকে সরে আসার আভাস দেন৷

বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন যে, তিনি শীঘ্রই এই ‘অশেষ যুদ্ধের’ অবসান ঘটাবেন ও ৯/১১-র দুই দশক পূর্তির আগেই আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের কাজ সম্পন্ন করবেন৷

মার্কিন-সমর্থিত সামরিক জোটের প্রায় নয় হাজার ৬০০ সদস্যকে সরানোর এই পরিকল্পনায় সায় দিয়েছেন জোট সদস্য রাষ্ট্রগুলির নেতৃত্ব৷

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, তালেবানের পুনরায় শক্তিশালী হয়ে উঠবার আশঙ্কার কথাও বলছেন অনেকে৷

এসএস/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)

 

অন্যান্য প্রতিবেদন