সোমবার গ্রিসের অভিবাসন মন্ত্রণালয় এক ঘোষণায় জানিয়েছে, তুরস্ক এখন থেকে বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ‘নিরাপদ তৃতীয় দেশ’ হিসাবে স্বীকৃতি পাবে। এসব দেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থী এবং নির্বাসিতদের জন্য এই সিদ্ধান্তে কী পরিণতি হতে পারে সেটি ব্যাখ্যা করেছেন ফরাসি থিংক ট্যাংক ‘ইফ্রির’ অভিবাসন ও নাগরিকত্ব বিষয়ক গবেষক মাথিয়েউ তার্দি।
গ্রিসের অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী নটিস মিতারাকিস তার টুইটার অ্যাকাউন্টে বলেছেন, ‘‘তুরস্ককে নিরাপদ তৃতীয় দেশ হিসাবে মনোনীত করা অবৈধ অভিবাসন প্রবাহ এবং মানব পাচার নেটওয়ার্কের অপরাধমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ৷’’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক ফরাসি থিংক ট্যাংক ইফ্রির অভিবাসন এবং নাগরিকত্ব বিষয়ক গবেষক মাথিয়েউ তার্দি এ ব্যাপারে ইনফোমাইগ্রেন্টসের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। এ সিদ্ধান্তের ফলে আশ্রয় আবেদনের উপর কী প্রভাব পড়তে পারে তা ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। পাঠকদের জন্য পুরো সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হলোঃ
ইনফোমাইগ্রেন্টস: ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতামত বা অনুমতি ছাড়াই গ্রিস কি সিরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও সোমালিয়া থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থী যারা গ্রিসে অবস্থান করছেন তাদের জন্য তুরস্ককে ‘নিরাপদ তৃতীয় দেশ’ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিতে পারে?
মাথিয়েউ তার্দিঃ হ্যাঁ, কারণ আশ্রয় এবং অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়ে প্রত্যেক সদস্য দেশ তাদের নিজ অবস্থান থেকে দায়বদ্ধ। সুতরাং, কোনো সদস্য রাষ্ট্র চাইলে কোন দেশটি ‘নিরাপদ তৃতীয় দেশ’ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে । অন্যদিকে, নিরাপদ তৃতীয় দেশ নির্ধারণের ব্যাপারে ইউরোপীয় স্তরে কিছু সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড রয়েছে যার সাহায্যে একটি দেশকে ‘নিরাপদ তৃতীয় দেশ’ হিসেবে ঘোষণা করতে কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে সেটির নির্দেশনা দেয়।
তৃতীয় নিরাপদ দেশ নির্ধারণের মানদণ্ডের প্রশ্নটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ তুরস্কে শরণার্থীদের জীবনমান নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। যদিও তুরস্ক ১৯৫১ সালের জেনেভা কনভেনশনের লিখিত শর্তগুলো মেনে চলার কথা বলে কিন্তু, তারা এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারি দেশ নয়৷ কারণ, ১৯৫১ সালের জেনেভা কনভেনশটি মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে শুধু ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য ছিল। সুতরাং ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতার কারণে তারা এই চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে ১৯৬৭ সালের নিউ ইয়র্ক প্রটোকলের ফলে সবার জন্য এই চুক্তিতে আসার সুযোগ থাকলেও তুরস্ক এখনো স্বাক্ষর করেনি।
অন্যদিকে, একজন ফরাসি হিসাবে আমি জেনেভা কনভেনশনের অধীনে তুরস্ককে শরণার্থীদের সুরক্ষার জন্য প্রশ্ন করতে পারি তবে একজন আফগান নাগরিক হিসাবে পারব না। আইনগতভাবে এর কোন ভিত্তি নেই।
জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, শরণার্থীদের স্বীকৃতি দেয়ার পুরোপুরি নিশ্চয়তা না থাকলেও অভিবাসন এবং আশ্রয় বিষয়ক তুরস্কের জাতীয় আইনটি ইউরোপীয় মানদণ্ডের সাথে অনেকটা সামঞ্জস্যপূর্ণ।
তুরস্কে অবস্থানরত সিরীয় নাগরিকদের অস্থায়ী সুরক্ষা বা শরণার্থী মর্যাদা রয়েছে।
এছাড়া, আফগানিস্তানে এবং ইরানে ফেরত পাঠানোর অনেক নজিরও দেখা গেছে ।
ইনফোমাইগ্রেন্টস: এই সিদ্ধান্তের ফলে এসব দেশ থেকে আগত আশ্রয়প্রার্থীদের উপর কী প্রভাব পড়তে পারে?
মাথিয়েউ তার্দিঃ কোন ইইউ সদস্য রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে পৌঁছানোর আগে একটি ‘নিরাপদ তৃতীয় দেশ’ পার হয়ে আসা একজন আশ্রয়প্রার্থীকে আবার সেই দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
তার আশ্রয় আবেদন অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে এবং কোন জোরালো নিরীক্ষা হবে না। এক্ষেত্রে আশ্রয়প্রার্থীকে পার হয়ে আসা নিরাপদ তৃতীয় দেশে আশ্রয় আবেদন করা উচিত ছিল বলে বিবেচনা করা হবে।
অর্থাৎ, এর অর্থ হচ্ছে তুরস্ক হয়ে আসা আগতদের আশ্রয়ের আবেদন কোন প্রকার যাচাই বাছাই করবে না গ্রিস।
ইনফোমাইগ্রেন্টস: ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং তুরস্কের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিতে কি এই বিষয়টি ছিল না?
মাথিয়েউ তার্দিঃ ২০১৬ সালের ইইউ-তুরস্ক চুক্তিটির হয়েছিল ‘নিরাপদ তৃতীয় দেশ’ ধারণার উপর ভিত্তি করে। এই চুক্তির মাধ্যমে গ্রিসকে তুরস্ককে একটি ‘নিরাপদ তৃতীয় দেশ’ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে সেসময় গ্রিক বিচার বিভাগ তুরস্ককে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ‘নিরাপদ’ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি। যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে তুরস্ক হয়ে আসা অনেক অভিবাসী গ্রিসে আশ্রয় আবেদন করেছিলেন।
এখন তুরস্ককে নিরাপদ তৃতীয় দেশের স্বীকৃতির বিষয়টি গ্রিক সরকার আইনে নিয়ে আসায় আদালত বা বিচার বিভাগের হাতে আর কোন সুযোগ থাকল না।
ইনফোমাইগ্রেন্টস: তুরস্ক কি এই সিদ্ধান্ত সাদরে গ্রহণ করবে এবং গ্রিসে আসা অভিবাসীদের পুনরায় গ্রহণ করবে?
গ্রিসের এই পদক্ষেপ তুরস্ক এত সহজে না মানার সম্ভাবনা আছে। তুরস্ক এত সহজে অভিবাসীদের ফেরত নাও নিতে পারে।
আরও পড়ুন>>>>গ্রিস থেকে পুশব্যাক হওয়া ৩,৭৬৩ অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে তুর্কি কোস্টগার্ড
আঙ্কারা উলটো গ্রিসের এই সিদ্ধান্তকে ইইউকে চাপে ফেলতে ব্যবহার করতে পারে। যেভাবে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তারা গ্রিস অভিমুখে সীমান্ত খুলে দিয়েছিল।
এমএইউ/এফএস