আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হওয়া এক আফগানকে চলতি মাসের শেষ অবধি অস্ট্রিয়াতে থাকার অনুমতি দিয়েছে দেশটির সরকার৷ ইউরোপে আশ্রয় নেয়া আফগানদের আফগানিস্তানে ফেরত না পাঠাতে ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি বারবার আহ্বান জানাচ্ছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা৷
মানবাধিকার বিষয়ক ইউরোপীয় আদালত মঙ্গলবার আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হওয়া এক আফগানকে অস্ট্রিয়া থেকে আফগানিস্তানে এখনই ফেরত পাঠাতে নিষেধ করেছে৷ শরণার্থীদের সহায়তা করা একটি গোষ্ঠী জানিয়েছে এই তথ্য৷
আফগান ব্যক্তিটি নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি নন৷ তিনি বেসরকারি সংস্থা ‘কাউন্সিলিং ফর ডেসার্টার্স এন্ড রিফিউজিস’-এর সহায়তায় অস্ট্রিয়া থেকে জোরপূর্বক বিতাড়ন ঠেকাতে আইনি সহায়তা নিয়েছেন৷
অস্ট্রিয়া সরকার নিশ্চিত করেছে যে তারা মানবাধিকার আদালতের সাময়িক নির্দেশনা অনুসরণ করবে৷ আদালত আগামী ৩১ আগস্ট অবধি ওই আফগানকে আফগানিস্তানে ফেরত না পাঠাতে নির্দেশনা দিয়েছে৷
আদালত কী কারণ দেখিয়েছে?
স্ট্রাসবুর্গে অবস্থিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার আদালত অস্ট্রিয়ার কাছে জানতে চেয়েছে যে আফগানিস্তান প্রত্যাবাসন আগামী আট অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ রাখার আহ্বান জানানোর পরও কীভাবে এই আফগানকে সেদেশে ফেরত পাঠানো হবে৷
মানবাধিকার আদালত মনে করছে আফগান নাগরিককে মঙ্গলবার ফেরত পাঠানো হলে তা হতো ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার সনদ লঙ্ঘনের সামিল কেননা যুদ্ধক্ষেত্রে কাউকে ফেরত পাঠানোর উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷ আফগানিস্তানে সেনাবাহিনী এবং তালেবান জঙ্গিদের মধ্যে লড়াই ক্রমশ বাড়ছে বলেও আদালত উল্লেখ করেছে৷
আদালত জানিয়েছে যে বর্তমান রায়টি সুনির্দিষ্টভাবে অস্ট্রিয়াতে বসবাসরত আফগান নাগরিকটির জন্য প্রযোজ্য৷ জার্মানি আফগানদের আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো অব্যাহত রেখেছে৷
এই সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবসম্মত?
আফগানিস্তান থেকে আন্তর্জাতিক মিত্র বাহিনী ফেরত যাওয়া শুরু করার পর থেকে বিভিন্ন দেশে আশ্রয়প্রত্যাশী আফগানরাও দেশ ছাড়ছেন৷ তাদের অনেকে মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়ার আশা করছেন৷ এছাড়া অন্যান্য বিভিন্ন দেশেও নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করছেন অনেক আফগান৷
গত ২৫ জুলাই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, সেভ দ্য চিলড্রেন এবং কারিতাসসহ ৩৫টি শরণার্থী ও অভিবাসী বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা ইউরোপে আশ্রয় নেয়া আফগানদের আফগানিস্তানে ফেরত না পাঠাতে ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷
এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনগুলো জানিয়েছে যে আফগানদের তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত পাঠানোর মাধ্যমে তাদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলা হবে৷ তারচেয়ে আফগানিস্তানে পুনরায় শুরু হওয়া যুদ্ধকালীন নৃশংসতা বন্ধে উদ্যোগী হতে ইউরোপের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাগুলো৷
মানবাধিকার সংস্থাগুলো ধারণা করছে বিদেশি সেনারা আফগানিস্তান ত্যাগ করার সাথে সাথে পাঁচ লাখের মতো আফগানও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় খুঁজতে পারে৷
ফলে, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর ইউরোপে শরণার্থীদের যে ঢল নেমেছিল সেরকম পরিস্থিতি এড়াতে কাবুল এবং আফগানিস্তানের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দেয়ার পরিকল্পনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷
এআই/কেএম (রয়টার্স, এএফপি)