সিরিয়া থেকে তুরস্কে আসা শরণার্থীদের জন্য প্রথমে সাদর অভ্যর্থনার পরিবেশ থাকলেও সময়ের সাথে সাথে তা বদলেছে৷
যত বেশি সংখ্যক শরণার্থী এসেছেন তুরস্কে, তত কমেছে তাদের প্রতি স্থানীয়দের উষ্ণতা, এমনটাই মত সেখানে বসবাসকারী সিরিয়ানদের৷
একদিকে কঠিন হচ্ছে তুরস্কের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ফলে অভিবাসীবিরোধী জনমত বাড়ছে পাল্লা দিয়ে৷ বর্তমানে দেশটিতে দেখা দিয়েছে বেকারত্ব, খাদ্য সংকট ও আকাশছোঁয়া বাসার দামের মতো নানা সংকট৷ ফলে, দেশের সাধারণ জনগণের ক্ষোভ অনেকটাই গিয়ে পড়ছে দেশটির ৫০ লাখ বিদেশি বাসিন্দাদের ওপর৷ এদের মধ্যে প্রায় ৩৭ লাখই যুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে পালিয়ে আসা৷
বিলকেনট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও তুরস্কের বিরোধি দলের পরামর্শদাতা সেলিম সাজাক বলেন, ‘‘সবাই ভেবেছিল এই শরণার্থীরা সাময়িকভাবে থাকবে৷ আমার মতে, খুব সম্প্রতি তুরস্কের স্থানীয়রা বুঝেছে যে এই শরণার্থীরা ফিরে যাবে না৷ এখনই তারা এই সব শরণার্থীদের অর্থনৈতিক প্রতিযোগী হিসাবে, প্রতিবেশী হিসাবে, সহকর্মী হিসাবে দেখতে শুরু করেছে৷’’
শুধু সাজাক নন, সম্প্রতি তুরস্ক ঘুরে এসে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার ফিলিপো গ্রান্দিও বলেন যে, বেশি সংখ্যক শরণার্থী থাকার ফলে তুরস্কে নানা ধরনের সামাজিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, বিশেষ করে বড় শহরগুলিতে৷
আফগানিস্তানে তালেবান শাসন চালু হওয়াতে বর্তমান পরিস্থিতি আরো ধোঁয়াশার দিকে যাচ্ছে৷ সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে বর্তমানে তুরস্কে প্রায় তিন লাখ আফগান শরণার্থী রয়েছে, যাদের বেশির ভাগের পরিকল্পনা ইউরোপে পৌঁছানোর৷
আক্রান্ত ও ভীত
আগস্ট মাসে আংকারার আলতিনদাগ অঞ্চলে এক দল সিরিয়ান যুবকের সাথে হাতাহাতির ঘটনায় মারা যায় এক তুর্কি কিশোর৷ তারপর থেকে শুরু হয় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দাঙ্গা৷ শয়ে শয়ে মানুষের দল ভেঙে দেয় সিরিয়ানদের দোকানপাট৷ তালা ভেঙে ঢুকে পড়ে বহু সিরিয়ানদের বাসায়৷
এক ৩০ বছর বয়সী সিরিয়ান নারী তার চার সন্তান নিয়ে নিজের বাসার বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন৷ এক হামলাকারী তাদের বারান্দা দিয়ে দরজা ভেঙে বাসায় ঢোকে৷ সেই ঘটনা আজও সেই নারী ও তার পাঁচ বছরের ছোট কন্যা সন্তানকে রাতে ঘুমোতে দেয় না৷ তাদের কাছে সেই দিনটি এখনও দুঃস্বপ্নের মতো ফিরে ফিরে আসে৷
সিরিয়ানদের বিরুদ্ধে তুরস্কে অভিযোগ শোনা যায় যে, তারা সেই দেশে ঠিক মতো মিশতে পারেনি৷ স্থানীয় মিষ্টি বিক্রেতা কেরেম পাসাওগলুর ইচ্ছা, যত দ্রুত সম্ভব দেশ ছেড়ে যাতে সিরিয়ানরা চলে যায়৷ রাস্তায় সার বেঁধে তুর্কি ভাষার বদলে আরবি ভাষায় লেখা দেওয়াল লিখন দেখতে ভালো লাগে না তার৷ তিনি বলেন, ‘‘সবে আমরা সিরিয়ানদের সাথে থাকতে অভ্যস্ত হতে শুরু করলাম আর এখন আরো আফগান আসা শুরু করছে৷ এটা আমাদের জন্য খুবই কঠিন৷’’
যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা সিরিয়ান নারী হারিয়েছেন ঘর, বাড়ি, দেশ ও নিজের স্বামীকেও৷
কিন্তু তুরস্কে এসেও শান্তি পাচ্ছেন না তিনি৷ তানা বলেন, ‘‘আমি এখন শুধু আমার সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভাবি৷ আমি যেভাবে পারি, তাদের পাশে থাকতে চেষ্টা করি৷ কিন্তু তাদের অনেক মানসিক সমস্যা হচ্ছে আর আমি জানিনা কীভাবে সেটা থেকে তাদের বের করে আনব৷ আমার আর লড়বার শক্তি নেই৷ আমি ক্লান্ত৷’’
এসএস/আরআর (এপি)