লিবিয়ায় অভিবাসনপ্রত্যাশীরা| ছবি: রয়টার্স
লিবিয়ায় অভিবাসনপ্রত্যাশীরা| ছবি: রয়টার্স

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, লিবিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে অভিযান চালিয়ে প্রায় চার হাজার অভিবাসীকে আটক করেছে কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে রয়েছে বহু নারী ও শিশুও।

শুক্রবার লিবিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের শহর গারগারেশে অনথিভুক্ত অভিবাসন ও মাদক পাচারের তদন্ত করতে গিয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে এই অভিযানে কত মাদক পাচারকারী বা মানবপাচারকারী গ্রেপ্তার বা আটক হয়েছে, সেই তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

শুক্রবারে কর্তৃপক্ষ জানায় যে তারা পাঁচশ অভিবাসীকে আটক করেছে কিন্তু পরে তারা জানায় যে এই সংখ্যা চার হাজারে পৌঁছেছে।

জাতিসংঘের মতে, এই অভিযান চলাকালীন গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক অভিবাসী এবং আহত হয়েছে আরো ১৫ জন অভিবাসী। লিবিয়ায় জাতিসংঘের মানবতা বিষয়ক সমন্বয়কারী জর্জেট গ্যাগনন বলেন, "নিরস্ত্র অভিবাসীদের তাদের বাসায় ঢুকে মারা হয়, অত্যাচার করা হয়, গুলি করা হয়।"

লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলি থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত শহর গারগারেশ অভিবাসনপ্রত্যাশী ও শরণার্থীদের কেন্দ্র। গত কয়েক বছরে এমন অনেক অভিযান চালানো হলেও এর কোনোটিই এত ভয়াবহ আকার ধারণ করেনি।

নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের লিবিয়া কার্যালয়ের পরিচালক ডাক্স রক একটি বিবৃতি দিয়ে বলেন, "আমাদের কাছে খবর এসেছে যে প্রায় পাঁচশ অভিবাসী, যাদের মধ্যে শিশু ও নারীরা রয়েছেন, তাদের আটক করা হয়েছে। তারা বর্তমানে অত্যাচারিত হবার ঝুঁকিতে রয়েছেন। যে সকল অভিবাসীদের লিবিয়ায় থাকার অধিকার নেই, তারা প্রায়ই এমন অত্যাচারের শিকার হন। টাকা আদায়ের জন্য অত্যাচার, যৌন হয়রানি ও শারীরিক নির্যাতন লিবিয়ার আটক কেন্দ্রগুলিতে অহরহ ঘটছে।"

বিভিন্ন গণমাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত একটি ছবি দেখা যাচ্ছে, যেখানে অভিবাসীদের হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তোলা হচ্ছে।

মানব পাচারের কেন্দ্র যে লিবিয়ায়

জাতিসংঘ এই অভিযানের প্রেক্ষিতে সংশয় জানায় ও বলে যে, তারা এই বিষয়ে 'রীতিমত চিন্তিত'।

২০১১ সালে গাদ্দাফি সরকারের পতনের পর থেকে আফ্রিকা হয়ে মানবপাচার চক্রে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে লিবিয়া।

মানবপাচারের সাথে যুক্তরা লিবিয়ার এই টালমাটাল পরিস্থিতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই অঞ্চলকে আরো বিপজ্জনক করে তুলেছে। যে ছয়টি দেশের সাথে সীমান্ত ভাগাভাগি করছে লিবিয়া, সেখান থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের এনে ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় করে ইউরোপের উদ্দেশে ছেড়ে দেয় এই পাচারকারীরা।

লিবিয়ায় মানবপাচারের চক্রের হাতে থাকে বেশ কিছু আটক কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা, যেখানে কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে চলে অত্যাচার, জোর খাটিয়ে টাকা আদায় করা বা যৌন হয়রানির মতো কাজ।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের অভিযোগ, সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছেন শিশু ও নারী অভিবাসনপ্রত্যাশীরা।

এসএস/আরআর (এপি)

 

অন্যান্য প্রতিবেদন