জাতিসংঘের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে লিবিয়ায় অভিবাসীদের অত্যাচারের সাথে জড়িত রয়েছে রাশিয়াও। অন্যদিকে, পশ্চিম লিবিয়ার তীরে ভেসে এসেছে ১৭টি মৃতদেহ। দেশটিতে সব মিলিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিতিশীল ও ভীতিকর পরিবেশ।
মঙ্গলবারে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট’ জানায় যে দেশটির পশ্চিম তীরে ভেসে এসেছে ১৭টি লাশ, যাদের প্রত্যেকেই ইউরোপগামী অভিবাসনপ্রত্যাশী বলে তাদের ধারণা।
জাভিয়া শহরের কাছে মৃতদেহগুলো ভেসে আসলে সেই শহরের কর্তৃপক্ষের তরফে তাদের দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম বলছে, এই বছর বিভিন্ন নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত ১,১০০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু ঘটেছে।
অভিবাসীদের মানবেতর জীবন ও রাশিয়া
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লিবিয়ার কারাগারে সম্ভবত অভিবাসী ও অন্যান্য বন্দিদের প্রতি এমন আচরণ করা হয়েছে যা মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধের সমান। মোহাম্মাদ আউয়াজারের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি এই প্রতিবেদনের জন্য গবেষণা করে ও মোহাম্মদের মতে, তাদের কাছে এখন সন্দেহভাজনের একটি গোপন তালিকা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, "আমাদের তদন্ত জানাচ্ছে যে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মদতে এখানে আন্তর্জাতিক মানবতা আইন লঙ্ঘন হয়েছে এবং যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে।"
এই প্রতিবেদনে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কারাবন্দিদের ওপর গুলি চলার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে ভাগনার নামের এক রাশিয়ান সিকিউরিটি সংস্থার ভাড়াটে খুনিদের।
প্রতিবেদনে বলা হয়, "আমাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে ভাগনারের কর্মীদের যুদ্ধাপরাধ ও খুনের সাথে যুক্ত থাকার।"
শুধু তাই নয়, তদন্তকারীরা একটি ট্যাবলেট খুঁজে পান, যা ভাগনারের কর্মীরা ফেলে গিয়েছিল। সেই ট্যাবলেটে ছিল ৩৫টি সাধারণ নাগরিক ভবনের চারপাশে থাকা অসংখ্য ল্যান্ডমাইনের উল্লেখ। রাশিয়ায় তৈরি হওয়া এই ধরনের ল্যান্ডমাইন ২০২০ সালের জুন মাস থেকে এই অঞ্চলে বিভিন্ন সংঘর্ষে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, জানাচ্ছে প্রতিবেদনটি।
অভিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে লিবিয়ার সাথে একটি চুক্তি করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যার পর থেকেই বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীদ্বারা সংগঠিত অপরাধের সাথে ইইউ'র জড়িত থাকার কথা শোনা গেছে।
চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল লিবিয়ান সাগর সীমান্ত রক্ষীদের সাথে, যেখানে বলা হয় আন্তর্জাতিক সাগরে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের থামিয়ে লিবিয়ার আটককেন্দ্রে তাদের নিয়ে যাবার কথা।
কিন্তু এই প্রতিবেদনের এক গবেষক চালোকা বেয়ানির মতে, "এটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সাগরে যে 'পুশব্যাক' নীতি চালু করেছে, তা মানবাধিকারের বিরোধী। শুধু তাই নয়, এর ফলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের লিবিয়ায় আটক করে রাখাও বাড়ছে।"
সবচেয়ে ভয়াবহ যা
মোহাম্মাদ আল-কানি নামের এক কমান্ডার জুলাই মাসে লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির অভিযানে মারা যান। জাতিসংঘের গবেষণা অনুযায়ী, লিবিয়ায় অভিবাসীদের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছেন এই কমান্ডার। টারহুনা শহরে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে তিনি নির্দেশ দেন গণহত্যা করতে, যার পর মৃতদের গণকবর দেওয়া হয়।
তদন্তকারীদের একজন ট্রেসি রবিনসন বলেন, "টারহুনাতে যে ভয়াবহতার সাথে অত্যাচার করা হয়েছে, তার আরো বেশি করে তদন্তের প্রয়োজন।" কিন্তু লিবিয়ান কর্তৃপক্ষের তরফে এ বিষয়ে কোনো স্পষ্টীকরণ দেওয়া হয়নি।
২০১১ সালে গাদ্দাফি সরকারের পতনের পর থেকেই অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে দেশটির বাস্তবতা। রাশিয়া, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তুরস্কের সহায়তায় বিভিন্ন গোষ্ঠী ক্ষমতার লড়াই লড়ছে এখানে। ২০২০ সালে যুদ্ধবিরতির পর থেকে নির্বাচনের অপেক্ষায় লিবিয়া।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোববার জানায় যে দেশ ছেড়ে চলে গেছে বেশ কিছু বিদেশি যোদ্ধা৷ বর্তমানে আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রার্থনা করছে লিবিয়া যাতে করে সমস্ত বিদেশি যোদ্ধাদের লিবিয়া থেকে বের করা যায়।
এসএস/এআই (এএফপি,আরএফআই)