বসনিয়ার বিহাচ শহরকে মানব পাচারের মূল কেন্দ্রস্থল বলেছে ইউরোপোল। ছবিতে বিহাচের একটি পরিত্যক্ত কারখানায় লুকিয়ে রাখা অভিবাসীদের খোঁজা হচ্ছে। ছবিঃ Marko Djurica/Reuters
বসনিয়ার বিহাচ শহরকে মানব পাচারের মূল কেন্দ্রস্থল বলেছে ইউরোপোল। ছবিতে বিহাচের একটি পরিত্যক্ত কারখানায় লুকিয়ে রাখা অভিবাসীদের খোঁজা হচ্ছে। ছবিঃ Marko Djurica/Reuters

বলকান অঞ্চল থেকে শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশীকে ট্রাকে করে অমানবিক অবস্থায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে পাচারের সাথে জড়িত এমন একটি মানবপাচারকারী গ্যাংকে ভেঙে দিতে সফল হয়েছে স্প্যানিশ পুলিশ। স্পেন কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার জানায়, ইউ-ভুক্ত নয়টি দেশের পুলিশের সমন্বয়ে অভিযানটি পরিচালিত হয়েছে।

গত আট মাসে বলকান অঞ্চলের মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্তত ৪০০ জন পাকিস্তানি নাগরিককে পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে আটককৃত গ্যাংটির বিরুদ্ধে। ট্রাকের পিছনে চাপিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ইউ অঞ্চলে আনার জন্য জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২০,০০০ ইউরো পর্যন্ত অর্থ নেয়ার অভিযোগ আছে চক্রটির বিরুদ্ধে। 

স্পেন জাতীয় পুলিশ বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, “পাচার চক্রটি প্রতিটি ট্রাকে সাধারণত ৮ বর্গ মিটার আয়তনের জায়গায় ৫০ জনেরও বেশি লোক বহন করা হয়।” 

একটি গাড়িতে ৭৭ জন অভিবাসীকে পাচারের দৃশ্য। ছবিঃ রয়টার্স ভিডিও থেকে স্ক্রীনশট।
একটি গাড়িতে ৭৭ জন অভিবাসীকে পাচারের দৃশ্য। ছবিঃ রয়টার্স ভিডিও থেকে স্ক্রীনশট।


প্রমাণ হিসেবে একটি পাচারের ক্ষেত্রে, ছোট ট্রাকের আঁটসাঁট পিঠের বগিতে চারটি শিশু সহ ৭৭ জন লোক থাকার ছবি দেখানো হয়েছে।


ইউরোপোল প্রতিনিধি মারিয়াস ক্রিস্টিয়ান রোমান বলেছেন, “এই চক্রের কারণে পাচার হওয়া অভিবাসীদের "জীবন অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে ছিল কারণ তাদেরকে ইউরোপীয় সড়কে উচ্চ অত্যন্ত গতিতে পরিবহন করা হয়েছিল।”

পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি বলেছে, “কিছু ক্ষেত্রে অভিবাসীদের শ্বাস নেওয়ার জন্য ট্রাকের পিছনে গর্ত করতে হয়েছিল।”

ইইউ-জুড়ে অভিযান

স্পেন, বসনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়া, ফ্রান্স, গ্রীস, ইটালি ও রোমানিয়া সহ নয়টি দেশের পুলিশ এবং ইইউ অপরাধ সংস্থা ইউরোপোলের যৌথ সহায়তায় মাসব্যাপী এই অভিযানটি পরিচালিত হয়েছে, এপি রিপোর্ট।

অভিযানে ১২ জন স্প্যানিশ নাগরিকসহ ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে। ইউরোপোল চক্রটির মূল হোতাকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে , যাকে রোমানিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অবশ্য তার জাতীয়তা প্রকাশ করা হয়নি। তবে রয়টার্স জানিয়েছে, তাকে স্পেনে স্থানান্তর করা হয়েছে।

তদন্তকারীদের মতে, পাচারকারীরা পাকিস্তান থেকে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জড়ো করে বলকান অঞ্চলের মাধ্যমে ইইউতে পাঠাত। স্প্যানিশ পুলিশ এবং ইউরোপোলের মতে, বসনিয়ার বিহাচ শরণার্থী শিবিরটি নেটওয়ার্কের প্রধান কেন্দ্রস্থল ছিল। তবে অভিবাসীরা কীভাবে বসনিয়ায় পৌঁছেছিল তা স্পষ্ট নয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অভিবাসীরা পাচারকারীদের দ্বারা হেঁটে হেঁটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র ক্রোয়েশিয়া থেকে বসনিয়াকে আলাদা করা পাহাড় অতিক্রম করেছিল। পরবর্তীতে স্প্যানিশ ট্রাক চালকরা পাকিস্তানি অভিবাসীদের সেখান থেকে ক্রোয়েশিয়া-স্লোভেনিয়া সীমান্তে নিয়ে যেত।

সেখানে থেকে অভিবাসীদের আবার হাঁটতে হতো এবং স্লোভেনিয়ান ভূখণ্ডের ভিতরে পুনরায় ট্রাকে যোগ দিতে হযতো। সেখান থেকে তাদেরকে ইইউতে চূড়ান্ত গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হতো।

ইউরোপ জুড়ে ব্যয়বহুল পাচার

পুলিশ জানিয়েছে, বসনিয়া থেকে স্লোভেনিয়া যাওয়ার জন্য চোরাকারবারীরা জনপ্রতি তিনশ ইউরো অর্থ নিয়ে থাকে। বসনিয়া থেকে ইটালি পর্যন্ত আসতে দিতে হয় পাঁচ থেকে আট হাজার ইউরো এবং পাকিস্তান থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চূড়ান্ত গন্তব্য দেশ পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্যাকেজ বারো থেকে বিশ হাজার ইউরো পর্যন্ত দাবি করে থাকে।

বসনিয়ার একটি ক্যাম্পে একজন পাকিস্তানি অভিবাসী। ছবিঃ  Jelena Prtoric/ InfoMigrants
বসনিয়ার একটি ক্যাম্পে একজন পাকিস্তানি অভিবাসী। ছবিঃ Jelena Prtoric/ InfoMigrants


পাচারের কাজে ব্যবহৃত ট্রাকগুলি স্পেন থেকে ভাড়া করা হয়েছিল বলে জানা গেছে এবং ট্রাক চালকরা তাদের বহনকারী মালামালের ধরণ সম্পর্কে সচেতন ছিলেন।

স্প্যানিশ পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী, একটি গাড়ি তাদের সামনে সম্ভাব্য নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য প্রতিটি ট্রাকের সাথে ছিল।

ধারণা করা হচ্ছে এই অপরাধী চক্রটি মাদক পাচার কার্যক্রমের সাথেও জড়িত।সাম্প্রতিক মাসগুলিতে ইইউ-তে প্রায় চারশজনকে পাচার করে এই চক্রটি কমপক্ষে ২ মিলিয়ন ইউরো উপার্জন করেছে।

পুলিশ মুখপাত্ররা অবশ্য উল্লেখ করেছেন, এইভাবে পাচার হওয়া মোট অভিবাসীর সংখ্যা সম্ভবত অনেক বেশি, কারণ তারা বছরের পর বছর ধরে আড়ালে এসব কাজ করে আসছে।


এমএইউ/এসএস (রয়টার্স, এপি)


 

অন্যান্য প্রতিবেদন