মানবিক করিডোরের সাহায্যে ইটালিতে আসা আফগানদের জন্য অভ্যর্থনা রোমের ফিউমিচিনো বিমানবন্দরে। ছবি: আনসা
মানবিক করিডোরের সাহায্যে ইটালিতে আসা আফগানদের জন্য অভ্যর্থনা রোমের ফিউমিচিনো বিমানবন্দরে। ছবি: আনসা

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা প্রয়োজন, এমন ব্যক্তিদের সুরক্ষিত যাত্রাপথ চালুর দাবিতে 'মানবিক করিডোরের' প্রস্তাব আলোচিত হয়ে আসছিল। অবশেষে, ইটালিতে চালু হতে চলেছে এই প্রক্রিয়া।

গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার একটি নতুন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ইটালির কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় বেশ কিছু ধর্মীয় সংগঠন। এর ফলে মানবিক করিডোর চালু করে ইটালিতে এসে পৌঁছবেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার দাবি রাখা এক হাজার দুইশ আফগান।

ইটালির রাজধানী রোমে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে স্বাক্ষর হয় এই চুক্তি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইটালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী লুসিয়ানা লামোরগিসে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা। এছাড়াও, সেদিন উপস্থিত ছিলেন ইটালিয়ান বিশপস কনফারেন্স (সিইআই), এফসিইআই-সহ বেশ কিছু খ্রিষ্টান ধর্মগোষ্ঠীর সংগঠন। উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর হেলথ, মাইগ্রেশন অ্যান্ড পভার্টি (এনআইএইচএমপি) সংস্থাগুলির প্রতিনিধিরা।

গুরুত্বপূর্ণ এই অনুষ্ঠানে স্বাক্ষরিত হওয়া চুক্তিটির উদ্দেশ্য হচ্ছে পাকিস্তান, ইরানসহ দেশ থেকে আফগান নাগরিকদের নিরাপদ যাত্রার সম্ভাবনা দেওয়া। যে সকল আফগান নাগরিকরা বর্তমানে এই সব দেশে আছেন, আগামী দুই বছরের জন্য তাদের ইটালিতে নিরাপদ বাসস্থান দেওয়াই এই চুক্তির লক্ষ্য। প্রয়োজন অনুযায়ী, থাকার মেয়াদ বাড়িয়ে ৩৬ মাসও করা যেতে পারে বলে বলা আছে চুক্তিতে।

প্রোটেস্টান্ট গির্জার আওতায় থাকা সংস্থারা দায়িত্ব নেবে দুইশ আফগান নাগরিকের, ক্যাথলিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কারিটাস আরো তিনশজনের দায়িত্ব নেবে, এস এগিদিওর ওপর রয়েছে দুইশ আফগান নাগরিকের দায়িত্ব ও আরসি সংস্থার জন্য একশ আফগানের দায়িত্ব।

এছাড়া, ইটালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চারশ আফগান নাগরিকের দায়িত্ব নেবে ও সকলের বিমান যাত্রার খরচ বহন করবে।

'আমরা স্বাগত জানাই, যা অনেকেই করেন না'

ইটালিয়ান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী লামোরগিসে বলেন, "এই গ্রীষ্মে সামরিক বিমানে চেপে পাঁচ হাজার আফগান ইটালিতে এসেছেন। আজ আমরা যে চুক্তিতে সই করলাম, তার আওতায় আরো এক হাজার দুইশজন আফগান আসবেন। আমি আশা করছি যে সকলের সহায়তা এভাবেই চলতে থাকলে সংখ্যাটি দুই হাজারে পৌঁছবে। সাম্প্রতিক একটি আন্তর্জাতিক বৈঠকে আমি লক্ষ্য করলাম যে সব ইউরোপিয়ান রাষ্ট্র মোটেই সমানভাবে মানবাধিকারকে সম্মান করেনা, এদের স্বাগত জানাতে পারে না। সবাই অভ্যর্থনার পন্থা নিয়ে একমত নয়৷ অনেকের মতে, এইসব মানুষদের অর্থ বা সহায়তা দেওয়া উচিত, কিন্তু তাদের নিজেদের দেশেই।"

আফগান জনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "তারা অনেক অত্যাচার সয়েছে, অনেক কষ্ট করেছে। ইটালি সাদর অভ্যর্থনা জানানোর দেশ। আমরা আমাদের এসএআই নেটওয়ার্ক (অভ্যর্থনা ও ইন্টেগ্রেশন বিষয়ক ব্যবস্থা) আরো বড় করেছি, কারণ এতে করে সমাজে মিশতে পারার পথ নিশ্চিত থাকে। এতে করে ভাষা শেখা যায় আমাদের আইন ও নিয়ম বোঝা যায়। সরকারও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পের পাশে দাঁড়িয়েছে।"

ইউরোপের জন্য মডেল

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সান্ত'এগিদিও গোষ্ঠীর প্রেসিডেন্ট, মার্কো ইম্পালিয়াৎজো। মানবিক করিডোর প্রসঙ্গে ইটালিতে তিনি সব সময়েই সোচ্চার থেকেছেন। তিনি বলেন, "ইটালি এমন একটি দেশ যার বিবেক রয়েছে। এই চুক্তির মূলে রয়েছে ইটালিয়ানদের আবেগ, যা আগস্ট মাসে কাবুলের ভয়াবহ দৃশ্যের ছবি থেকে জন্ম নিয়েছিল। আমরা বোঝাতে চেয়েছিলাম যে যারা আফগানিস্তানে থেকে যাচ্ছেন, তাদের জন্যও আমরা ভাবছি। যারা পাশের দেশগুলিতে পালিয়ে যেতে পেরেছেন, তাদের কথাও ভাবছি।"

এফসিআইই ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েলে গারোনে বলেন, "মানবিক করিডোর মানে শুধুই জরুরি পরিস্থিতিতে সুবিধা দেওয়া নয়। এটা গোটা ইউরোপের জন্য একটা চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়াক, যেখানে শুধু জরুরি অবস্থাই নয়, বড় সামাজিক পরিবর্তনের ফলে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর স্থায়ী ব্যবস্থা হয়ে ওঠে।"

এসএস/কেএম (আনসা)

 

অন্যান্য প্রতিবেদন