জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুহারা মানুষদের সহায়তায় এক্ষুণি উদ্যোগ নিতে গ্লাসগোতে কপ ২৬ সম্মেলনে অংশ নেয়া বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর৷
সংস্থাটি জানিয়েছে, জলবায়ু সংকট এবং অভিবাসনে বাধ্য হওয়ার মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে যা এখন পরিষ্কার৷ তাই এভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষদের এবং তাদের আশ্রয়প্রদানকারীদের সহায়তায় বিশ্বনেতাদের দ্রুত উদ্যোগী হওয়া দরকার বলে মনে করছে ইউএনএইচসিআর৷ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোয় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতি মোকাবিলায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে চলার জন্য অর্থ সহায়তা করা প্রয়োজন৷
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত যেসব দেশ এবং সম্প্রদায় এখনো তেমন সহায়তা পায়নি, তাদের সহায়তার জন্য এই আহ্বান জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর৷
‘‘সম্প্রদায়নির্ভর অভিযোজন প্রকল্পগুলোর দিকে গুরুত্ব দেয়া উচিত যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষ প্রয়োজনীয় সহায়তা পায়, যাদের অনেকে ইতোমধ্যে একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন,’’ এক বিবৃতিতে লিখেছে সংস্থাটি৷
জলবায়ু সংকট বৈশ্বিক সমস্যা
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা যাদের সহায়তা করি তাদের অধিকাংশই জলবায়ু সংকটে সামনের দিকে থাকা দেশগুলো থেকে এসেছেন বা একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে আশ্রয় পেয়েছেন৷’’
তিনি বলেন, ‘‘তারা বন্যা, খরা এবং মরুকরণের মতো জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছেন৷ এতে করে তাদের জীবিকার পথ ধ্বংস হয়েছে, সহিংসতা সৃষ্টি হয়েছে এবং একপর্যায়ে তারা অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন৷ এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং উন্নয়নে আমাদের ধনীদের কাছ থেকে দ্রুত নতুন চিন্তা, উদ্ভাবন এবং অর্থায়ন দরকার৷’’
গ্লাসগোতে জলবায়ু সম্মেলনে বাস্তুচ্যুতদের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তুলে ধরছেন ইউএনএইচসিআর-এর বিশেষ উপদেষ্টা এন্ড্রু হারপার৷ সংস্থাটির সুরক্ষায় থাকা ৯০ শতাংশ শরণার্থী এবং দেশের মধ্যে বাস্তুচ্যুতদের সত্তর শতাংশই বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর বাসিন্দা৷
জলবায়ু শরণার্থী
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতিবছর ঘরবাড়ি হারাচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ৷ আফগানিস্তানে ৪০ বছর ধরে চলা যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরো বৃদ্ধি করেছে অত্যাধিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং খরা৷ দেশটিতে খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে এবং সেখানে শুধু দেশের মধ্যেই বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৩৫ লাখের মত৷
মোজাম্বিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই সহিংসতার কারণে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন সাত লাখ ৩০ হাজার মানুষ৷ আর সাহেলে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দেড় গুণ দ্রুত তাপমাত্রা বৃদ্ধি হচ্ছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন রিসোর্স পেতে প্রতিযোগিতাও বাড়ছে৷
হারপার বলেন, ‘‘আমরা আর আরো কপ এবং পূরণ করা হয়নি এমন আরো প্রতিশ্রুতির জন্য অপেক্ষা করতে পারবো না৷ বাস্তুচ্যুত এবং তাদের আশ্রয়দাতাদের এখনই সহায়তা দরকার যাতে তারা চরম আবহাওয়ার বিপরীতে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন৷’’
এআই/কেএম (আনসা)