অভিবাসী ও শরণার্থীদের উদ্ধারকারী জাহাজ জিওব্যারেন্টস বুধবার জানায় যে তারা ভূমধ্যসাগরে অভিযান চালিয়ে ৯৯ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। এছাড়া দশজনের মরদেহ পাওয়া গেছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স (এমএসএফ) ভূমধ্যসাগরে উদ্ধারকারী জাহাজ জিওব্যারেন্টস পরিচালনা করে। বুধবার একটি ভিডিও প্রকাশ করে সংস্থাটি জানায় যে সাগরে ভাসমান একটি নৌকায় বহু অভিবাসনপ্রত্যাশীকে গাদাগাদি করে থাকতে দেখেছে তারা।
সাব-সাহারান আফ্রিকা থেকে আসা এই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে ৯৯জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেন জিওব্যারেন্টসের কর্মীরা। জাহাজেটিতে বর্তমানে রয়েছেন মোট ১৮৬জন অভিবাসনপ্রত্যাশী, যার মধ্যে আছেন বহু নারী ও শিশু। জিওব্যারেন্টসে থাকা কনিষ্ঠতম অভিবাসনপ্রত্যাশীর বয়েস মাত্র দশ মাস।
উদ্ধার কাজ শেষ হবার পর বহু অভিবাসনপ্রত্যাশীই আর আবেগ ধরে রাখতে পারছিলেন না। নীচের ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক কিশোরের উদ্ধারকর্মীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলার দৃশ্য।

২৪ ঘণ্টায় তৃতীয় উদ্ধার অভিযান
এমএসএফ সংস্থার ইটালি কার্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ডঃ ক্লাউদিয়া লোদেসানি সংস্থাটির তরফে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "গতরাতের অভিযান মিলিয়ে গত চব্বিশ ঘণ্টায় মোট তিনটি উদ্ধার অভিযান চালিয়েছে জিওব্যারেন্টস। ৯৯জনকে বাঁচাতে পারলেও ভিড়ে ঠাসা নৌকার একদম তলায় পড়েছিল দশজন অভিবাসনপ্রত্যাশীর লাশ।"
ইটালির সংবাদমাধ্যম রাই বলছে যে এই দশজনের প্রাণ হারানোর কারণ হয়তো যাত্রাকালীন ধাক্কাধাক্কি বা কাঠের নৌকার তলায় থাকা বিষাক্ত গ্যাস হতে পারে। সংস্থাটির মতে, নৌকাটি পথভ্রষ্ট হয়ে অন্তত তেরো ঘণ্টা ধরে ভাসছিল।
নিহতের আত্মীয়রাও ছিলেন নৌকায়
জিওব্যারেন্টসের পক্ষে ফুলভিয়া কোন্তে জানান যে কর্মীদের প্রায় দুই ঘণ্টা লেগে যায় নৌকা থেকে মৃতদেহগুলি জাহাজে আনতে। তিনি জানান, একই নৌকায় সেই সময়ে উপস্থিত ছিলেন মৃতের পরিবারের সদস্যরাও।
একটি প্রেস বিবৃতিতে এমএসএফ জানায় যে নৌকাটিতে ফুটো থাকার কারণে সেটিতে পানি উঠছিল। নৌকার যাত্রীরা প্রথমে 'অ্যালার্ম ফোন' সংস্থার সাথে যোগাযোগ করেন কারণ এমএসএফ সেখানে পৌঁছানোর আগেই নৌকার নীচের দিকে থাকা যাত্রীরা 'অসাড় হয়ে পড়েন'।
প্রাণে বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের মতে, নৌকার নীচের বিষাক্ত গ্যাসে ঢাকা অংশে প্রায় ১৩ ঘণ্টা ধরে আটকে ছিলেন সেই যাত্রীরা।
এক যাত্রী আবদুলায়েকে এমএসএফ কর্মীরা শেষবারের মতো তার পরিবারের মানুষকে দেখতে অনুমতি দেন। আবদুলায়ে (নাম পরিবর্তিত) বলে, "এরা আমার ভাই। আমরা একসাথে লিবিয়া থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম। আমাকে জানাতে হবে তাদের পরিবারকে। একবার আমাকে দেখতে দিন।"
এমএসএফের পরিসংখ্যান বলছে, জিওব্যারেন্টসে থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছে মোট ১৫২জন পুরুষ, ৩৪জন নারী ও ৬১জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। এরা এসেছেন মূলত গিনি, নাইজেরিয়া, আইভরি কোস্ট, সোমালিয়া ও সিরিয়া থেকে।
সমালোচনার তির কর্তৃপক্ষের দিকে
মঙ্গলবার দুপুরে বিপন্ন এই নৌকাটি বিষয়ে প্রথম সতর্ক করে অ্যালার্ম ফোন সংস্থা। খবর পেয়ে লিবিয়ার তটের কাছে উরে যায় উদ্ধারকারী বিমান সি-বার্ড।
সি-বার্ড এই নৌকার উপস্থিতি নিশ্চিত করলে সেখানে পৌঁছায় জিওব্যারেন্টস।
লোদেসানির মতে, সাগরে এইসব মৃত্যু ঠেকাতে কর্তৃপক্ষের উন্নাসিকতা মেনে নেওয়া যায় না। তার মতে, "এই দশটি মৃত্যু চাইলেই ঠেকানো যেত। ২০২১ সালে দাঁড়িয়েও আমাদের বছরে এক হাজারের বেশি মৃত্যু দেখতে হচ্ছে, যা ঠেকানোর রাজনৈতিক মানসিকতা বর্তমানে নেই।"
একটি টুইট করে লোদেসানি বলেন, "যারা এই পথে আসতে গিয়ে মারা গেছেন, তারা বিপন্ন হলেও স্বপ্ন দেখতেন। এই সব মানুষের আশা ছিল যে নিজেদের পরিবারের জন্য কিছু করতে পারবেন তারা। এরা আমাদের সবার মতো হাসতে জানা, কাঁদতে পারা, কর্মক্ষম মানুষ।এদের বেঁচে থাকা উচিত ছিল।"
এমা ওয়ালিস/এসএস (এএফপি)