আবারও গ্রিসের লেসবস দ্বীপ সফরের ঘোষণা দিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। সফরের অনেকটা জুড়েই যে থাকবে শরণার্থী ও অভিবাসীদের ভূমিকা, তা তিনি আগেই স্পষ্ট করলেন। সর্বশেষ ২০১৬ সালে দ্বীপটিতে গিয়েছিলেন তিনি৷
ক্যাথলিক বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি পোপ ফ্রান্সিস সর্বদাই তার কথাবার্তায় তুলে ধরেছেন অভিবাসীদের প্রতি তার সমর্থনের কথা। তার স্পষ্ট অবস্থান, সমাজে "স্বাগত, সুরক্ষিত, সমর্থিত ও একত্রিত’’ করতে হবে অভিবাসীদের।
২০১৬ সালে গ্রিসের লেসবস দ্বীপ সফর শেষে ফেরার সময় তার বিমানে করে তিনি ইটালিতে নিয়ে এসেছিলেন তিনটি সিরিয়ান মুসলিম পরিবারকে, যাদের ঘরবাড়ি বোমা হামলায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আসন্ন গ্রিস সফরেও পোপ বিশ্বের নজর অভিবাসী সংকটের দিকে টানতে চাইবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রোববার সাপ্তাহিক প্রার্থনা সভাতেও পোপ ইংলিশ চ্যানেলে প্রাণ হারানো অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য শোকপ্রকাশ করেন। সাথে তিনি পোল্যান্ড ও বেলারুশ সীমান্তে অবস্থানরত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দুর্দশার কথাও বলেন।
এর আগে শনিবার একটি ভিডিও বার্তায় পোপ জানান যে কীভাবে ভূমধ্যসাগর অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য একটি কবরস্থানে পরিণত হয়েছে। তিনি এটাও বলেন যে ইউরোপে এসে শরণার্থীরা 'অভ্যর্থনার বদলে বিরূপ আচরণ ও অত্যাচারের শিকার' হন।
পোপের জীবনেও অভিবাসন
আর্জেন্টিনায় বসতি গড়া এক ইটালিয়ান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন পোপ ফ্রান্সিস। ২০১৩ সালে পোপ নির্বাচিত হবার পর থেকেই তিনি অভিবাসন বিষয়ে সোচ্চার রয়েছেন।
এদিকে, সাইপ্রাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভ্যাটিকানের সাথে তারা কিছু অভিবাসী পরিবারকে রোমে স্থানান্তর করার বিষয়ে আলোচনা করছেন। ফলে ২০১৬ সালে যেভাবে তিন পরিবারকে আশ্রয় দেন পোপ, একইভাবে আসন্ন গ্রিস-সাইপ্রাস সফরেও হয়তো এমন কোনো দৃশ্যের দেখা মিলতে পারে বলে অনেকের ধারণা।
আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে পোপের এই সফর, যেখানে তার প্রথম গন্তব্য সাইপ্রাস। ভূমধ্যসাগরের মাঝে এই দ্বীপরাষ্ট্রে পাঁচ দিন কাটিয়ে এরপর তিনি রওয়ানা দেবেন গ্রিসের উদ্দেশ্যে। সেখানে দু'রাত কাটিয়ে ঘরে ফিরবেন তিনি।

পোপের সফরের যেমন প্রভাব
পোপের সফরের পর কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট না হলেও অভিবাসীরা আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন। কঙ্গো থেকে আসা লেসবস দ্বীপের বাসিন্দা আশ্রয়প্রার্থী টাঙ্গো মুয়াকা খ্রিষ্টান। ৩০ বছর বয়েসি এই আশ্রয়প্রার্থী বলেন, "পোপের উপস্থিতি আমাদের মানসিক শক্তি দেবে। কিছুটা হলেও আশা ও স্বস্তি দেবে।"
এবিষয়ে একমত মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কর্মী ইভা কোসেও। তিনি বলেন, "যখন মানুষ কষ্টে আছেন, তাদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, তখন পোপ তাদের পাশে দাঁড়ালে তা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। পোপের শেষ গ্রিস সফরের পর থেকে এখন পর্যন্ত এখানে অসংখ্য আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জোর করে তুরস্কে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। শিশুদের মাথার ওপর ছাদ নেই, স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা, খাবার নেই। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাদের আইনি জটিলতার ফলে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হয়না।"
কিন্তু গ্রিক কর্তৃপক্ষ সব অভিযোগের দায় নিতে নারাজ। লেসবস দ্বীপের মাভ্রোভৌনি শিবিরের ডেপুটি ডিরেক্টর দিমিত্রিস ভাফেয়াস বলেন, "পোপের বার্তা অবশ্যই একটি ধর্মীয় বার্তা। কিন্তু বাস্তবের প্রেক্ষিতে দেখলে গ্রিস তার ভূমিকা পালন করেছে। ফলে, পোপ এখানে এলে সুখী মানুষের দেখা না পেলেও শান্ত পরিস্থিতি দেখতে পাবেন তা নিশ্চিত।"
এসএস/এআই (এএফপি, এপি)