দুই মাস ধরে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে অবস্থিত ইউএনএইসসিআর কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন অভিবাসীরা। ছবি: রয়টার্স
দুই মাস ধরে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে অবস্থিত ইউএনএইসসিআর কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন অভিবাসীরা। ছবি: রয়টার্স

তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন দাবিতে দুই মাস ধরে, শত শত অভিবাসী ত্রিপোলিতে অবস্থিত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) কার্যালয়ের সামনে আন্দোলন করছে। এসব দাবিসহ সার্বিক বিষয়ে ইনফোমাইগ্রেন্টস কথা বলেছে লিবিয়ায় নিযুক্ত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার মুখপাত্র ক্যারোলিন গ্লাকের সাথে।

ইনফোমাইগ্রেন্টস: ত্রিপোলিতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) অফিসের বাইরে অভিবাসীদের বিক্ষোভের সময় রবিবার সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা সহিংসতার জন্য ইউএনএইচসিআর এর নিরাপত্তা দলকে অভিযুক্ত করেছে। তারা অভিবাসীদের প্রতি জাতিসংঘের এই সংস্থার দায়িত্বের দিকেও আঙ্গুল তুলেছেন। আসলে কী ঘটছে সেখানে?

ক্যারোলিন গ্লাক: রবিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ত্রিপোলির সররাজ জেলায় আমাদের প্রধান কার্যালয়ের প্রবেশপথের সামনে বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, কারণ এখানেই ইউএনএইচসিআর আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয় আবেদন নিবন্ধন করে এবং পুনর্বাসন ও মানবিক প্রত্যাবাসন ফ্লাইটের জন্য শরণার্থীদের সাক্ষাৎকার পরিচালনা করে।

লিবিয়ান পুলিশ, জাতিসংঘ ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে আছে। তারাই মূলত আমাদের ভবনের প্রবেশপথে ছড়িয়ে পড়া আগুন নিভানোর জন্য বেরিয়ে আসে। এরপর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কয়েকজন পুলিশকে পাথর নিক্ষেপ করে। এরপরই দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়।

পুলিশ ভবনে প্রবেশ করলে বিক্ষোভকারীরা ভবনের দরজায় এবং কর্মকর্তাদের দিকে পাথর ছুড়তে থাকে। এই ঘটনায় আমরা গভীরভাবে দুঃখিত।

ইনফোমাইগ্রেন্টস: বিক্ষোভকারীদের প্রকাশিত একটি টুইট ভিডিওতে আমরা দেখতে পাচ্ছি পুলিশ আগ্রাসীভাবে অভিবাসীদের মারধর করছে।

ক্যারোলিন গ্লাক: ইউএনএইচসিআর উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানায়। আমরা সহিংসতা অনুমোদন করি না। এটি লিবিয়ায় অবস্থানরত শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না এবং কোন সমস্যারও সমাধান দেয় না।


আমরা আশ্রয়প্রার্থী এবং শরণার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করার অধিকারকে স্বীকৃতি দেই। তবে, ভবনের ভিতরে পুলিশ ও ইউএনএইচসিআর সদস্যদের উপর পাথর ছোড়ায় আমরা হতবাক।

আমরা আশ্রয়প্রার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বিষয়েও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তারা জানিয়েছে, কয়েকজন ব্যক্তি সাহায্য ও সহায়তা চাওয়ার জন্য অভিবাসীদেরকে আমাদের ভবনে প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছে।

ইনফোমাইগ্রেন্টস:বেশ কিছু অভিবাসী ইনফোমাইগ্র্যান্টসকে জানিয়েছেন, ‘‘নিরাপত্তা বাহিনী, স্থানীয় মিলিশিয়া এবং ইউএনএইচসিআরের কয়েকজন সদস্য অভিবাসীদের নিয়মিত হয়রানির করছে’’।

ক্যারোলিন গ্লাক: আমরা আমাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে আসা যেকোন অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে নিয়ে থাকি। যখনই আমরা কোন প্রাসঙ্গিক এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য পাই, তাৎক্ষনিক মহাপরিদর্শকের কার্যালয়ে জানিয়ে সতর্ক করা হয় যাতে অভিযোগগুলির মূল্যায়ন করে সম্ভাব্য অসদাচরণের ঘটনাগুলি খুঁজে বের করতে পারে৷

ইনফোমাইগ্রেন্টস: ত্রিপোলিতে ইউএনএইচসিআর প্রাঙ্গণের সামনে দুই মাস ধরে অবস্থানরত বিক্ষোভকারীদের ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

ক্যারোলিন গ্লাক: উত্তেজনা প্রশমন করতে এবং সমাধানের চেষ্টা করার জন্য আমরা বিক্ষোভকারীদের সাথে আলোচনার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বেশিরভাগ অভিবাসী তৃতীয় কোন দেশে উচ্ছেদ ও পুনর্বাসনের অনুরোধ করে। কিন্তু, আমরা সবার কাছে এই বিকল্পগুলি দিতে সক্ষম নই, কারণ বিভিন্ন দেশের দেওয়া কোটা সীমিত৷ তাই শুধু সবচেয়ে বেশি দুর্বল ও ঝুঁকিতে থাকা উদ্বাস্তু ও শরণার্থীদের তৃতীয় দেশে পাঠানো সম্ভব হয়।

ইউএনএইচসিআরকে বিভিন্ন দেশের দেয়া স্বল্প কোটার কারণে বিশ্বব্যাপী মোট অভিবাসীদের মাত্র এক শতাংশেরও কম শরণার্থীকে ইউএনএইচসিআর-এর পুনর্বাসনের সুবিধা দেয়া সম্ভব হয়।

সররাজে আমাদের অফিসের সামনের আন্দোলনের ঘটনা আমাদেরকে ১ ডিসেম্বর থেকে দৈনন্দিন কার্যক্রম স্থগিত করতে বাধ্য করেছে। এটি শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের সার্বিক আশ্রয় আবেদন নিবন্ধন, পুনর্বাসন এবং প্রত্যাবাসন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে৷ 

যদি আমরা দ্রুত সররাজ নিবন্ধন কেন্দ্র পুনরায় চালু করতে না পারি, তাহলে ভবিষ্যতে পুনর্বাসন ফ্লাইটগুলি আয়োজন করা কঠিন হয়ে যাবে। প্রকৃতপক্ষে, আমরা এই মুহূর্তে ভুক্তভোগীদের নিবন্ধন নথি প্রদান করতে অক্ষম। এই নথির সাহায্যে কোন অভিবাসী পুনর্বাসন বা মানবিক প্রত্যাবাসনের জন্য যোগ্য কিনা সেটি পরীক্ষা করা হয়।

আন্দোলনের ফলে বারবার কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় নভেম্বর মাসে প্রায় ২০০ আশ্রয়প্রার্থী এবং উদ্বাস্তুদের সাক্ষাৎকার বাতিল করা হয়েছিল।

আমরা বারবার জোর দিয়ে বলেছি, লিবিয়া আশ্রয় আবেদনের জন্য যোগ্য দেশ নয়। এখানে শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী এবং অভিবাসীদের নিরাপত্তা নেই।

যারা লিবিয়ায় ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বসবাস করছেন তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সমাধান প্রয়োজন।

ইনফোমাইগ্রেন্টস: ত্রিপোলিতে সিডিসি নামে পরিচালিত ইউএনএইচসিআর ডে সেন্টারটি দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। সবকিছু সত্ত্বেও সিডিসি কার্যক্রম কি অব্যাহত আছে?

ক্যারোলিন গ্লাক: আমাদের অংশীদারদের সহায়তায় ডে সেন্টারের কার্যালয়ের বাইরে অন্য একটি স্থানে আমরা জরুরি সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছি। আপাতত, প্রিপেইড কার্ড, খাদ্য প্যাকেজ এবং ইউএনএইচসিআরের দেয়া বিভিন্ন নথির পুনঃনবায়নের আবেদনগুলো আমরা সেখানে পরিচালনা করছি।

অক্টোবর থেকে, আমরা ত্রিপোলি শহরে বসবাসকারী দুই হাজার জনেরও বেশি মানুষকে নগদ সহায়তা প্রদান করেছি, পাশাপাশি এক হাজার জনেরও বেশি মানুষ খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন।

আমরা স্বীকার করি যে, আমরা উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন এবং আমরা যা করছি তা যথেষ্ট নয়। ডে সেন্টারটি মূলত লিবিয়ায় ইউএনএইচসিআর-এর মূল কার্যক্রমের ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওয়ান-স্টপ-শপের পরিষেবাগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের জন্য সরবরাহ করা হয়।

আমরা বিকল্প পন্থায় বা অংশীদারদের সহায়তায় আগামী মাসগুলিতে কীভাবে সহায়তা কার্যক্রম প্রসারিত করা যায় সেটি বিবেচনা করছি৷


এমএইউ/এফএস


 

অন্যান্য প্রতিবেদন