ফরাসি জাতীয় আশ্রয় আদালত (সিএনডিএ)’র আইনজীবীরা বলছেন ‘সংখ্যা নীতির’ ভিত্তিতে দেয়া রায়ের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। প্রতিবাদে দুই মাস ধরে ধর্মঘট করছেন আশ্রয় আদালতের আইনজীবীরা। ছবি: Twitter @Maître McClane
ফরাসি জাতীয় আশ্রয় আদালত (সিএনডিএ)’র আইনজীবীরা বলছেন ‘সংখ্যা নীতির’ ভিত্তিতে দেয়া রায়ের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। প্রতিবাদে দুই মাস ধরে ধর্মঘট করছেন আশ্রয় আদালতের আইনজীবীরা। ছবি: Twitter @Maître McClane

আশ্রয় আইনে “সংখ্যা নীতি” অনুসরণের অভিযোগে অক্টোবরের শুরু থেকে ফরাসি জাতীয় আশ্রয় আদালত (সিএনডিএ)-তে ধর্মঘট শুরু করেছিলেন আইনজীবীরা। ধর্মঘট শুরুর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও চলছে এই আন্দোলন।

ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের মামলার আপিল আবেদন যাচাই করার একমাত্র আশ্রয়স্থল সিএনডিএ।

সাধারণত আশ্রয় আদালতে দীর্ঘ ধর্মঘটের কথা কমই শোনা যায়। তবে, অক্টোবরের শুরু থেকে, ফরাসি জাতীয় আশ্রয় আদালত (সিএনডিএ) এর শত শত আইনজীবী প্রতিবাদস্বরূপ তাদের মক্কেলদের মামলা আদালতে লড়তে অস্বীকার করেছেন।

আইনজীবীদের অভিযোগ, আদালত সংখ্যার ভিত্তিতে আপিলের রায় দিচ্ছে এবং অনেক আবেদনকারীকে শুনানিতে না ডেকেই তাদের আপিল আবেদন অগ্রহণযোগ্য বলে প্রত্যাখান করা হচ্ছে। এটি একজন আশ্রয়প্রার্থীকে আদালতে উপস্থিত থেকে সশরীরে তার সমস্যার কথা বলার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। 


ফ্রান্সে আশ্রয় আবেদন জমা দেয়া ব্যক্তিরা প্রথম দফায় শরণার্থী এবং রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের জন্য নির্ধারিত ফরাসি দপ্তর (অফপ্রা)-তে সাক্ষাৎকার দিয়ে থাকেন। অফপ্রা কারো আবেদন প্রত্যাখান করলে সেক্ষেত্রে একজন আশ্রয়প্রার্থী আশ্রয় আইনের সর্বোচ্চ আদালত সিএনডিএ-তে অফপ্রার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ পান। 

ধর্মঘটকারীরা আদালতের বিরুদ্ধে যেই "সংখ্যা নীতি"র অভিযোগ তুলেছেন, তার প্রধান কারণ শুনানি ছাড়াই আপিল আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার ব্যাপক ভাবে বেড়ে যাওয়া। ফরাসি আইনি পরিভাষায় ‘অরদোনোন্স’ হিসেবে পরিচিত এসব প্রত্যাখানে বেশ উদ্বিগ্ন আশ্রয় আদালতে লড়াই করা আইনজীবীদের একটি বড় অংশ।


আশ্রয় আদালতের বিচারকরা মামলায় “পর্যাপ্ত গুরুতর উপাদান”" না থাকার অজুহাতে শুনানি ছাড়াই আদালতের সিদ্ধান্ত জারি করে আপিল আবেদন খারিজ করে দিচ্ছেন।

"ব্যয় সংকোচন নীতি"

আইনজীবী এবং উচ্চ আদালতের কর্মচারীরা আশ্বস্ত করেছেন, এই পদক্ষেপের ফলে সিএনডিএ বেশ কিছু সুবিধা পেতে শুরু করেছে। 

সিএনডিএ-এর রাপোর্টার এবং উচ্চ আদালতের কর্মরত ব্যক্তিদের ইউনিয়ন এফও-এর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ইভা হং-বাউভার্ট অক্টোবরের শেষ দিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ব্যাখ্যা করেছেন, "শুনানি ছাড়াই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে শুনানির জন্য প্রয়োজনীয় তিন বা চারজন ব্যক্তিকে টাকা দিতে করতে হয় না। যার ফলে ব্যয় কমে এসেছে এবং দ্রুততর সিদ্ধান্ত দেয়া হচ্ছে।"

একটি সাধারণ আপিল আবেদন শেষ করতে যেখানে কয়েক মাস সময় লাগে, সেখানে শুনানি ছাড়াই আদেশ জারির ক্ষেত্রে মাত্র পাঁচ সপ্তাহ সময় লাগছে আদালতের।

আরও পড়ুন>>ফ্রান্সে অনেক বাংলাদেশির আশ্রয়ের আবেদন শুনানি ছাড়াই বাতিল

 আশ্রয় আদালতের আইনজীবী সুহিলা নাদোর ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, "এর ফলে একটি মামলার প্রক্রিয়াকরণ এবং আশ্রয়প্রার্থীদের অভ্যর্থনা কেন্দ্রে কাটানো সময় দুটোই কমে আসছে, যার ফলে মামলার পরিসংখ্যানও কমে আসছে আদালতের কাছে।”

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে যোগ করেন, “আশ্রয় আইনকে পাশ কাটিয়ে সংখ্যাই এখন মূল আদর্শ হয়ে উঠেছে।" 

সিএনডিএর রাপোর্টার ইভা হং-বাউভার্ট সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জোর দিয়ে বলেছিলেন, "মানুষ কেন নিপীড়নের ফলে দেশ ছেড়ে চলে আসল কিংবা নির্যাতিত হলো, এসব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে শুধুমাত্র শুনানি কমিয়ে আনাকেই প্রধান্য দেয়া হচ্ছে।”

অরদোনোন্সের বর্ধিত ব্যবহার

আইনজীবীদের মতে, গত বারো মাসে শুনানি ছাড়াই আদেশ বা অরদোনোন্সের ব্যবহার ব্যাপক হারে বেড়েছে। আইনজীবী সুহিলা নাদুর উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশি আবেদনকারীদের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, "আমি সিএনডিএ-তে ২০ বছরে ধরে আশ্রয়প্রার্থীদের মামলা লড়ছি। এর আগে আমি কখনো বাংলাদেশিদের ‘অরদোনোন্স’ পেতে দেখিনি। কিন্তু গত বছরের শেষ থেকেদেড় হাজারেরও বেশি অরদোনোন্স শুধুমাত্র বাংলাদেশিদের জন্য জারি করা হয়েছে।"

আরেক আইনজীবী উদ রিমেলহোর চেম্বারেও আমরা একই অবস্থা দেখতে পেয়েছি। বিদেশিদের অধিকারে বিশেষজ্ঞ এই আইনজীবী অক্টোবরের শেষ দিকে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে ব্যাখ্যা করেছিলেন, "আগে আমি খুব কমই অরদোনোন্স পেয়েছি। কিন্তু এই গ্রীষ্মে আমার অনেক মক্কেলদের আবেদন শুনানি ছাড়াই প্রত্যাখান হয়েছে। এখন গড়ে মাসে তিন বা চারটি আবেদনের ক্ষেত্রে এরকম সিদ্ধান্ত আসছে, এটি বিশাল! "

তবে সিএনডিএ-র ভাইস-প্রেসিডেন্ট ইসাবেল দেলি অক্টোবরের শেষে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, অরদোনোন্স ব্যবহারের হার বাড়েনি। আমাদের কাছে এখনও এই বছরের সর্বশেষ তথ্য নেই।" 

ধর্মঘটরত আইনজীবীরা ফরাসি বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ শাখা কাউন্সিল অফ স্টেট বা কনসেই দেতার সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করেছে। তারা দ্রুত একটি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। তবে কাউন্সিল অফ স্টেটের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত চলমান ধর্মঘট আগামী ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে বলে জানা গেছে।


এমএইউ/এসএস


 

অন্যান্য প্রতিবেদন