ফ্রান্সে বসবাসরত শরণার্থীদের জন্য চাকরি পাওয়ার বিষয়টি বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে । অনেকের ভাগ্যে চাকরি জুটলেও তা তাদের পেশাগত যোগ্যতার সাথে বেমানান। ফলে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে অনেক শরণার্থীর মাঝে। একটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণা বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস (ইফ্রি)-এর এক গবেষণা বলছে, ফ্রান্সে বসবাসরত শরণার্থীদের ৪২ শতাংশ লোক শরণার্থী হিসেবে মর্যাদা পাওয়ার এক বছরের মধ্যে চাকরি খুঁজে পেয়েছেন।
কিন্তু তারা প্রায়ই নিজ দেশে অর্জিত দক্ষতার তুলনায় অনেক নিম্নমানের কাজ পান। এমন পেশাগত অবমূল্যায়নের ফলে শরণার্থীরা হতাশ ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
শরণার্থী ও রাষ্ট্রবিহীন ব্যক্তিদের জন্য নির্ধারিত ফরাসি দপ্তর (অফপ্রা) এবং জাতীয় আশ্রয় আদালত (সিএনডিএ) ২০২০ সালে ২৪,১৮১টি আশ্রয় আবেদন অনুমোদন দেয় ।
আশ্রয় আবেদন অনুমোদনের পর দেশটিতে স্থায়ীভাবে থাকার উদ্দেশ্যে নতুন জীবন শুরু করা এসব শরণার্থীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় একটি চাকরি খুঁজে পাওয়া।
ইফ্রি-এর গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, শরণার্থী মর্যাদা পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশ ব্যক্তি তাদের বসবাসের অনুমতি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে একটি চাকরি খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছেন। আর এসব ব্যক্তিদের প্রতি চারজনের মধ্যে একজন স্থায়ী চাকরি পেয়েছেন।
গবেষণা প্রতিবেদনটির চিত্র প্রাথমিকভাবে আশা যোগায়। কারণ এটি মূলত ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এলিপা-২ জরিপের তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
তবে প্রতিবেদনে এটিও উঠে এসেছে যে, ফ্রান্সে থাকা শরণার্থীদের কাজের পরিবেশ 'অনিশ্চিত, অনিরাপদ এবং অসন্তোষজনক'।
কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, শরণার্থীদের মধ্যে বেশ বড় একটি অংশ পেশাগত অবমূল্যায়নের কারণে হতাশায় ভুগছে। অর্থাৎ নিজ দেশ থেকে যে পেশাগত যোগ্যতা তারা অর্জন করেছিল সে তুলনায় ফ্রান্সে আসার পর পাওয়া চাকরি নিম্নমানের।
যোগ্যতার তুলনায় নিম্নমানের চাকরি পাওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গবেষণা দলের অন্যতম প্রধান কর্মকর্তা সোফি বিলং বলেন , "যারা নিজ দেশে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন তারা ফ্রান্সে এসে সাধারণ কর্মী হয়ে কাজ করতে বাধ্য হন। অনেক প্রাক্তন উদ্যোক্তা এখানে এসে নিজে কর্মচারী হয়ে যান।"
শরণার্থীদের মধ্যে যদি ১০ শতাংশ ব্যাক্তিও তাদের নিজ দেশে বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় কর্মরত ছিলেন বলে ধরে নেয়া হয়, সেক্ষেত্রে বর্তমান প্রতিবেদন অনুযায়ী তাদের মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ ব্যক্তি তাদের কাঙ্ক্ষিত পেশায় কাজ খুঁজে পেয়েছেন।
'তাড়াহুড়ো করে' চাকরি অনুসন্ধান
সোফি বিলং জানান, শরণার্থীদের পেশাগত অবনমনের একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত,“আশ্রয় আবেদন জমাদানের শুরু থেকেই শরণার্থীদের জন্য অপেক্ষার সময় শুরু হয়ে যায়। এ সময় তাদের কাজের অনুমতি থাকে না।”
মূলত আশ্রয়প্রার্থী থাকা অবস্থায় কাজের অনুমতি না থাকায় তারা কোন প্রকার কারিগরি প্রশিক্ষণ অথবা শিক্ষানবিস হিসেবে কাজ করার সুযোগ থাকে না। যার ফলে ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্র নিয়ে অনশ্চিয়তার মধ্যে দিন কাটাতে হয় তাদের। পাশাপাশি একটি ভালো চাকরি খুঁজে পেতে ফরাসি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের ব্যাপারটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
তিনি আরও যোগ করেন, “যদিও এই সময়টি একজন ব্যক্তির জন্য খুবই মূল্যবান। কারণ এই সময় একটি পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি নিতে হয়। কিন্তু তারা শরণার্থী মর্যাদা পাওয়ার আগ পর্যন্ত নিশ্চিত থাকেন না তারা বৈধতা পাবেন কি না। বর্তমান পরিস্থিতিতে বৈধতাপ্রাপ্তির পরে তাড়াহুড়ো করে একজন আবেদনকারীকে নিজের খরচ জোগাতে দ্রুত একটি চাকরি খুঁজে বের করতে হয়। দুর্ভাগ্যবশত, রাতারাতি একটি কাঙ্ক্ষিত চাকরি খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়।”
গবেষকের মতে, “শ্রমবাজারের বড় একটি অংশ শরণার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ। কারণ এসব চাকরির ক্ষেত্রে ফরাসি বা ইউরোপীয় জাতীয়তা থাকা বাধ্যতামূলক। এছাড়া অনেক কাজে ইউরোপীয় ডিগ্রী বা প্রশিক্ষণের শর্ত থাকে।”
তাছাড়া আরো অনেক কারণে শরণার্থীরা চাকুরির বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইফ্রি জানায়,, শরণার্থী মর্যাদা প্রাপ্তদের মধ্যে ২২ শতাংশ কর্মহীন যারা তাদের নিজ দেশে চাকুরিরত ছিল। এছাড়া ১৯% শরণার্থী নিষ্ক্রিয় অর্থ্যাৎ যারা কাজ খুঁজছেন না বিভিন্ন কারণে।
সরকারি এবং বেসরকারি উভয় কোম্পানির জন্য শরণার্থীদের চাকুরির বাজারে একীভূত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
বহুজাতিক অডিট ফার্ম ডেলয়েটের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শরণার্থীদের মধ্যে ২০ শতাংশ ব্যক্তির উদ্ভাবনী দক্ষতা রয়েছে এবং তাদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ ব্যক্তি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
এমএইউ/আরআর