কালে উপকূলে নৌকাডুবির তিন সপ্তাহ পর নিহত ২৭ জনের মধ্যে ২৬ জনের পরিচয় শনাক্ত করেছে ফরাসি কর্তৃপক্ষ৷ ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে ১৯ থেকে ৪৬ বছর বয়সি সতেরো জন পুরুষ, সাতজন নারী, ষোল বছর বয়সি এক কিশোরী এবং সাত বছর বয়সি এক শিশু ছিল৷
নিহতরা ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর আশায় নৌকায় উঠেছিলেন।
মঙ্গলবার প্যারিসের পাবলিক প্রসিকিউটর লউর বেচেও এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘২৪ নভেম্বর কালে উপকূলের কাছে ডুবে যাওয়া ২৭ অভিবাসীর মধ্যে ২৬ জনকে ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে ফরাসি ন্যাশনাল জেন্ডারমেরির (আইআরসিজিএন) অপরাধ গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং উত্তর ফ্রান্সের লিল হাসপাতাল৷’’
নৌকায় থাকা যাত্রীদের মধ্যে ১৬ জন ইরাকি কুর্দি, একজন ইরানি কুর্দি, তিনজন ইথিওপিয়ান, একজন সোমালি, চারজন আফগান ও একজন মিশরীয় ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি৷
আরও পড়ুন >> ইংলিশ চ্যানেলে কালে উপকূল থেকে আরও একটি মৃতদেহ উদ্ধার
নাগরিকত্ব বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা ফরাসি সরকারের মুখপাত্র মার্লেন শিয়াপা নৌকাডুবির কয়েকদিন পর কালে সফরের সময় জানিয়েছিলেন, দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে একজন গর্ভবতী নারী রয়েছেন৷ তবে লউর বেচেও বিবৃতিতে বলেন, ‘‘ভুক্তভোগীদের মধ্যে কোনো গর্ভবতী নারীর পরিচয় পাওয়া যায়নি এবং একজনের পরিচয় এখনো পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয় নি৷’’
আরও পড়ুন >> ইংলিংশ চ্যানেলে শরণার্থী সংকট নিয়ে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের প্রতিক্রিয়া "অমানবিক"
তদন্ত চলছে
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইংলিশ উপকূলে পৌঁছানোর জন্য চ্যানেলে পারাপার বহুগুণ বেড়ে গেছে৷ নৌকায় করে ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে সমূদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে মর্মান্তি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অভিবাসীরা৷
ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নৌকাডুবির ঘটনায় মাত্র দুইজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়, যাদের একজন ইরাকি কুর্দি ও একজন সুদানের নাগরিক৷ তাদের একজনের সাক্ষ্য অনুযায়ী, পাচারকারীরা যখন তাদের গণনা করছিল তখন নৌকায় ৩৩ জন ছিলেন।
ফ্রান্সের জাতীয় বিচার বিভাগ (জুনাল্কো) নৌকাডুবির ঘটনার তদন্ত করছে৷ বেঁচে থাকদের একজন ইরাকি কুর্দি চ্যানেল রুদাউকে জানান, ‘‘যখন নৌকাটি ডুবতে শুরু করেছিল তখন নৌকা থেকে আমরা ফরাসি এবং ইংরেজ কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ফোন করেছিলাম৷’’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘আমরা ফরাসি কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম ইঞ্জিনটি কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে৷ আমরা তাদেরকে জিপিএসে সাহায্যে আমাদের অবস্থান পাঠিয়েছিলাম৷ কিন্তু তারা আমাদেরকে বলেছিল যে, তারা আমাদের সাহায্য করতে পারছে না কারণ আমরা ব্রিটিশ জলসীমায় ছিলাম এবং আমাদেরকে যুক্তরাজ্য উপকূলেই পৌঁছাতে হবে৷
তাদের কথা শুনে আমরা ইংরেজ কর্তৃপক্ষকে ফোন করেছিলাম কিন্তু তারা আমাদেরকে ফরাসিদের সাথে যোগাযোগ করতে বলেছিল’’
এই ঘটনায় ফরাসি ও ব্রিটিশ উভয় কর্তৃপক্ষের সমালোচনা চলছে৷ তবে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর ও চ্যানেলের ফরাসি উপকূল কর্তৃপক্ষ ‘লা মনশ ও উত্তর সাগর ম্যারিটাইম প্রেফেকচুর’ বিপদে পড়া অভিবাসীদের আবেদন গ্রহণ না করার কথা অস্বীকার করেছে।
এমএইউ/এফএস