(ফাইল ছবি) ইল-দ্য-ফ্রন্সঁ অঞ্চলের অন্তর্গত একটি প্রেফেকচুর বা ফরাসি প্রশাসনিক দপ্তরের প্রবেশমুখ। এসব প্রেফেকচুরের সাধারনত আশ্রয় আবেদন নথিভুক্ত করা হয়। ছবি: ইনফোমাইগ্রেন্টস
(ফাইল ছবি) ইল-দ্য-ফ্রন্সঁ অঞ্চলের অন্তর্গত একটি প্রেফেকচুর বা ফরাসি প্রশাসনিক দপ্তরের প্রবেশমুখ। এসব প্রেফেকচুরের সাধারনত আশ্রয় আবেদন নথিভুক্ত করা হয়। ছবি: ইনফোমাইগ্রেন্টস

ফ্রান্সে প্রতি দুইজন আশ্রয়প্রার্থীর মধ্যে একজন তাদের জন্য নির্ধারিত আর্থিক সুবিধাভোগী নন৷ আশ্রয়প্রার্থীদের যে অর্থ দেয়া হয় তা থাকা খাওয়ার জন্যেও যথেষ্ট নয়৷ অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সাম্প্রতিক একটি যৌথ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে৷

‘আশ্রয়প্রার্থীদের ভুলে যাওয়া অধিকার’ শিরোনামে গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত একটি যৌথ প্রতিবেদনে গবেষকরা আশ্রয়প্রার্থীদের বঞ্চনার দীর্ঘ তালিকা তুলে ধরেছেন৷ তাতে আশ্রয়প্রার্থীদের সরকারি বাসস্থানে প্রকট সামাজিক, স্বাস্থ্য ও আর্থিক সংকটের চিত্র উঠে এসেছে৷ স্যালভেশন আর্মি, আকশিঁও কোন্থ লা ফাঁ, সামু সোশ্যাল দ্যো প্যারিস যৌথভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ 

তবে আশ্রয়প্রার্থীদের সার্বিক দায়িত্বে থাকা ফরাসি অভিবাসন ও ইন্টিগ্রেশন বিষয়ক দপ্তর (অফি) প্রতিবেদনে তুলে ধরা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, সকল আশ্রয়প্রার্থীর আর্থিক সাহায্য লাভের অধিকার রয়েছে৷ 

ফ্রান্সে আসার পর আশ্রয়প্রার্থীরা নানা সংকটে পড়েন৷ তাদের বড় একটি অংশ ফরাসি ভাষা বোঝেন না৷ আবার অনেকেরই তাদের আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ রাখতে বা ফরাসি প্রশাসনের ব্যাপারে খোঁজ নিতে ইন্টারনেট ব্যবহারের কোনো সুযোগ পান না৷ আবার অনেকেই জানেন না ফ্রান্সে আসার পরে কিভাবে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। 

প্রতিবেদনে সংস্থাগুলি আশ্রয়প্রার্থীদের এমন অসুবিধার চিত্র তুলে ধরেছে৷ পাশাপাশি বলা হয়েছে, ফ্রান্সে আসা দুইজন আশ্রয়প্রার্থীর মধ্যে গড়ে একজন তাদের জন্য নির্ধারিত আর্থিক সাহায্য বা আদা (এডিএ) ভাতা পান না৷ প্রতিবেদন অনুযায়ী, আর্থিক সংকটে পড়ে আশ্রয়প্রার্থীদের অনেকে বিভিন্ন সংস্থার কাছে ধরনা দিতে বাধ্য হচ্ছেন৷ এসব সংস্থা ও ডে সেন্টারে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে অর্ধেকই জানিয়েছে তারা আদা ভাতার সুবিধাভোগী নন৷  

তবে এই অভিযোগে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ফরাসি অভিবাসন ও ইন্টিগ্রেশন বিষয়ক দপ্তর (অফি)’র মহাপরিচালক দিদিয়ের লেসচি৷ তিনি ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, “ডাবলিন বিধির আওতাভুক্তসহ সকল আশ্রয়প্রার্থীরা নিবন্ধনের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে আদা বা (এডিএ) ভাতা পান৷ সুতরাং এটা অসম্ভব যে তাদের মধ্যে অর্ধেক এই সুবিধা পাচ্ছেন না৷’’

তাহলে কেন এনজিওগুলো তাদের প্রতিবেদনে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে? এর একটি কারণ হতে পারে তারা ‘আশ্রয়প্রার্থী’ শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করেছে৷ প্রতিবেদনের জন্য সমীক্ষা চলাকালে এনজিওগুলি প্রশাসনিক অর্থে আশ্রয়পার্থী পরিভাষাটি ব্যবহার করে নি৷ তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নতুন আসা অভিবাসীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে যারা আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হননি৷ 

আদা বা (এডিএ) ভাতা পাওয়ার শর্ত কি?

আদা বা এডিএ মূলত আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য নির্ধারিত একটি মাসিক অর্থ সাহায্য৷ ফরাসি প্রশাসন বা প্রেফেকচুরে নিবন্ধিত আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য এটি সংরক্ষিত৷

ফরাসি অভিবাসন ও ইন্টিগ্রেশন বিষয়ক দপ্তর (অফি) জানায়:

- যারা আশ্রয় আবেদন চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে তারা আদা পাওয়ার অধিকার হারাবে। কারণ তারা ফরাসি প্রশাসন থেকে বৈধভাবে বসবাসের অনুমতি পাননি।

- শরণার্থী মর্যাদা প্রাপ্তদের আদা সুবিধা পাওয়ার অধিকার নেই, যেহেতু তাদের বসবাসের অনুমতির সাথে সাথেই তারা সাধারণ ফরাসি আইনের আওতায় সকল সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখেন৷ যেমন ‘কাফ’ নামক দপ্তরের মাধ্যমে (আরএসএ) বা সামাজিক সাহায্য, চাকুরি খোঁজাকালীন সাহায্য ভাতা , বাসা ভাড়া নিয়ে থাকলে সেটির একটি ভর্তুকি ইত্যাদি। 

- নতুন আগমনকারীরা যারা এখনও প্রেফেকচুরে আশ্রয়প্রার্থী হিসাবে নিবন্ধিত হয়নি তারা আদা পাওয়ার জন্য যোগ্য নন৷ 

সুতরাং বলা যায় সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনের চিত্রটি ভুল না হলেও এক্ষেত্রে সংজ্ঞাগত পার্থক্য তৈরি হয়েছে৷ 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, যারা আদা সুবিধা পান না তাদের মধ্যে অর্ধেকই ‘মাঝারি ক্ষুধা’ বা ‘তীব্র ক্ষুধা’র মতো পরিস্থিতিতে রয়েছেন৷ অন্যদিকে আদা সুবিধাপ্রাপ্তদের মধ্যে শুধু ২৪ শতাংশ বলেছেন তাদের কাছে খাওয়ার জন্য যথেষ্ট অর্থ নেই।

আশ্রয়প্রার্থী থাকা অবস্থায় আদা সুবিধা বাতিল হতে পারে?

অফি’র মতে, কয়েকটি পরিস্থিতিতে আইনতভাবে কেউ আশ্রয়প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও তার সুবিধা বাতিল হতে পারে:

- যখন একজন আশ্রয়প্রার্থী সরকারের দেয়া বাসস্থান প্রত্যাখ্যান করেন, তখন তার ভাতা সুবিধা হারানোর ঝুঁকি থাকে৷ অফির মহাপরিচালক দিদিয়ের লেসচি বলেন, “আমরা কোনো আশ্রয়প্রার্থীকে বিভিন্ন শহরে পাঠিয়ে দিয়ে শাস্তি দিতে চাই না৷ তবে বিকেন্দ্রীকরণ এবং ইল-দ্যো-ফ্রান্সঁ বা বৃহত্তর প্যারিস উপর চাপ কমাতে এটিই একমাত্র উপায়৷’’

-যদি ডাবলিন বিধিমালাভুক্ত কোন আশ্রয়প্রার্থীকে তিনি প্রথম যেই দেশে আঙুলের ছাপ দিয়েছিলেন সেখান থেকে পুনরায় তলব করা হয়, তখন তার আদা সাহায্য স্থগিত করা হয়৷

- কোন আশ্রয়প্রার্থী আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তার আদা ভাতা বন্ধ করা হয়৷

দিদিয়ের লেসচি যোগ করে বলেন, ‘‘এরকম কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বাকিদের জন্য আদা ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা আমি দেখতে পাচ্ছি না৷ এমন কিছু ঘটনা রয়েছে যেখানে দেখা যায় কোনো ব্যক্তি হয়ত ভুলেবশত তার আদা কার্ডটি হারিয়ে ফেলেছেন বা এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে গিয়ে ভুল কোড দেওয়াতে কার্ডটি আর কাজ করেছে না৷ এই ধরনের পরিস্থিতিতেও দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা আছে৷’’

ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে আশ্রয়প্রার্থী নিবন্ধনের সংখ্যা ৩৮ শতাংশ কমে গেছে৷ ২০১৯ সালে যেখানে এক লাখ ৫১ হাজার আশ্রয়প্রার্থী নিবন্ধিত হয়েছেন ২০২০ সালে তা নেমে এসেছে ৯৩ হাজার ২০০ তে৷ 



এমএইউ/এফএস



 

অন্যান্য প্রতিবেদন