যুক্তরাজ্যে বর্তমানে বিভিন্ন সকারি কাঠামোতে প্রায় ৪১ হাজার আশ্রয়প্রার্থী অবস্থান করছে। ছবি: পিক্সাবে
যুক্তরাজ্যে বর্তমানে বিভিন্ন সকারি কাঠামোতে প্রায় ৪১ হাজার আশ্রয়প্রার্থী অবস্থান করছে। ছবি: পিক্সাবে

বিবিসির একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত আবাসনের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশসহ উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে৷ সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে একাধিক ভবনের ছাদ ধসে নারী ও শিশু আহত হয়েছেন৷ অভিযোগ আছে ভবনের পরিস্থিতির কথা জানানোর পরও সময়মত প্রতিকার পাচ্ছেন না আশ্রয়প্রার্থীরা৷

উত্তর ইংল্যান্ডের ব্র্যাডফোর্ডে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত একটি ভবনে স্ত্রী ও শিশুসহ বসবাস করছিলেন আফ্রিকার অ্যাডাম৷ ভবনটির একটি অংশে ছাদ ফুটো হয়ে উপরের তলা থেকে তার ঘরে পানি গড়িয়ে পড়ছিল৷ ২০২১ সালের মে মাসে সেটি মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানান অ্যাডাম৷ তার দুই সপ্তাহ পর তারা মেরামত কাজের জন্য সাড়া দেন৷ এরমধ্যেই ছাদের কিছু অংশ ধসে অ্যাডামের স্ত্রী আহত হন৷ অল্পের জন্য রক্ষায় পায় তাদের শিশুটি৷

ইংল্যান্ডে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য নির্ধারিত বাসস্থানের পরিস্থিতি কতটা শোচনীয় তা বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে আসা এই উদাহরণ থেকেই অনুমাণ করা যেতে পারে৷ শুধু অ্যাডাম নন আরো বেশ কয়েকজন আশ্রয়প্রার্থী ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমটিকে তাদের বাসস্থানের করুণ অবস্থার কথা জানিয়েছেন৷ ভবনে পোকামাকড়ের উপদ্রব, গরম পানির ব্যবস্থা না থাকার অভিযোগ করেছেন তারা৷ সেই সঙ্গে দুর্ঘটনার আশঙ্কা মাথায় নিয়ে বসবাস করছেন তারা৷ 



বিবিসির প্রতিবেদনের বেশ কিছু ভিডিও এবং ছবিতে ভবনের বৈদ্যুতিক সংযোগে ত্রুটি ও পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যার চিত্রও উঠে এসেছে৷ 

ছাদ ধসে আহত শিশু

অ্যাডাম যেখানে আছেন শুধু সেই ভবনই নয় সাম্প্রতিক সময়ে আশ্রয়প্রার্থীদের ঘরের ছাদ ধসে পড়ার আরো অন্তত দুইটি ঘটনা ঘটেছে৷ মে মাসে লন্ডনে আশ্রয়কেন্দ্রে একটি পরিবারের উপর ভবনের সিলিং ধসে পড়ে৷ ২০২০ সালে ব্র্যাডফোর্ড শহরে আরেকটি দুর্ঘটনায় সুদানিজ বংশদ্ভুত এক শিশু আহত হয়৷ এজন্য তার মাথায় সেলাইয়ের প্রয়োজনও হয়৷

পড়ুন>>ইংল্যান্ডে ৩৯ ভিয়েতনামি অভিবাসীর মৃত্যুর বিচার শুরু

অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বিবিসি অভিবাসীদের সেবা দিয়ে থাকে এমন ৩০টিরও বেশি সংস্থার সাক্ষাৎকার নিয়েছে ৷ তাদের ৮০ শতাংশ কর্মী বলেছেন, প্রায় প্রতি সপ্তাহেই তারা আশ্রয়প্রার্থীদের কাছ থেকে বাসস্থান নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ পেয়ে থাকেন৷ এক চতুর্থাংশ জানিয়েছেন, তারা প্রতিনিয়ত আশ্রয়প্রার্থীদের কাছ থেকে অভিযোগ পান৷

অকার্যকর মেরামত সেবা

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের পাশাপাশি ভবন মেরামতের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিষেবা নিয়েও অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন আশ্রয়াপ্রার্থীরা আর সংস্থাগুলো৷

ব্র্যাডফোর্ডের ছাদ ধসে আহত শিশুর মা ভবন মেরামতের দায়িত্বে থাকা সংস্থাকে টেলিফোনে সমস্যার কথা জানাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন৷  

পড়ুন>>ইংলিংশ চ্যানেলে শরণার্থী সংকট নিয়ে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের প্রতিক্রিয়া 'অমানবিক'

আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত ভবনগুলো পরিচালনার জন্য সরকার মনোনীত কোম্পানিগুলির মধ্যে একটি ‘মিয়ার্স’৷ বিবিসিকে কোম্পানিটি জানিয়েছে, একই সময়ে মেরামতের অনেক অনুরোধ আসায় তারা সবক্ষেত্রে সময়মত সাড়া দিতে পারছেন না৷ এক্ষেত্রে যেসব ভবনে সবচেয়ে বেশি সমস্যা সেগুলোকে তারা অগ্রাধিকার দিচ্ছেন৷ 

ইংল্যান্ডে প্রায় ৪১ হাজার আশ্রয়প্রার্থী আলাদা আবাসন পেয়েছেন৷ এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্র এবং হোটেলসহ বিভিন্ন অবকাঠামোতে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ 

পড়ুন>>ব্রেক্সিট পরবর্তী শ্রমিক সংকটের মুখোমুখি যুক্তরাজ্য

বিবিসি জানিয়েছে, সরকারি হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে এই সংখ্যা ৮০ হাজার পার হয়ে যেতে পারে৷

যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের থাকার ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ এই প্রথম নয়৷ ডিসেম্বরের মাঝামাঝি কারা পরিদর্শন সংস্থা এবং ডোভার অ্যান্ড হিথ্রো (আইএমবি) এর স্বাধীন পর্যবেক্ষণ সংস্থার একটি যৌথ প্রতিবেদনেও এমন চিত্র উঠে এসেছিল৷ ‘ধর্ষণের শিকার নারীদের’ পর্যাপ্ত সহায়তা না করারও নিন্দা জনিয়েছেন তারা৷ তাদের অভিযোগ আশ্রয়প্রার্থী ‘‘নারীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এবং অভিবাসীরা ইংল্যান্ডে আসার পরেও মেঝেতে ঘুমাতে বাধ্য হয়েছেন৷’’ 


এমএইউ/এফএস








 

অন্যান্য প্রতিবেদন