ইউএনএইচসিআর কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনের সময়কার বিক্ষোভের দৃশ্য। ছবি: রয়টার্স
ইউএনএইচসিআর কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনের সময়কার বিক্ষোভের দৃশ্য। ছবি: রয়টার্স

ত্রিপোলির ইউএনএইচসিআর কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী শিবির করে তিন মাস ধরে আন্দোলন করা অভিবাসীদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছিলেন ইয়াম্বিও ডেভিড অলিভার এবং হাসান জাকারিয়া। গত রোববার ৯ জানুয়ারি আন্দোলনরতদের উচ্ছেদের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংবাদ ছড়িয়ে দেয়া এই দুই অভিবাসীকে খুঁজছে লিবিয়া পুলিশ।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) কার্যালয়ের সামনে তিন মাস ধরে আন্দোলন করা অভিবাসীদের সংবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করে আসছেন দুই অভিবাসী ইয়াম্বিও ডেভিড অলিভার এবং হাসান জাকারিয়া। 

৯ জানুয়ারি রোববার সেখানে অবস্থানরত অভিবাসীদের জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়ার পর থেকেই এই দুই সুদানের নাগরিককে খুঁজছে লিবিয়া কর্তৃপক্ষ। 

উচ্ছেদ অভিযানের রাতে ত্রিপোলির বিভিন্ন রাস্তায় লুকিয়ে থেকে পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হন এই দুই অভিবাসী। বর্তমানে গ্রেফতার আতঙ্কে দিন কাটছে ইয়াম্বিও ডেভিড অলিভার এবং হাসান জাকারিয়ার।  

২৫ বছর বয়সী ইয়াম্বিও ডেভিড অলিভার টেলিফোনে তার উদ্বেগের কথা গণমাধ্যমকে জানান– “ওরা আমাকে ধরতে পারলে মেরে ফেলবে।”

বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে নিজের ‘নিরাপত্তার’ বিষযে উদ্বেগ জানান তিনি৷ “আমি খুবই চিন্তিত, বর্তমানে আমি মৃত্যু আতঙ্ক নিয়ে দিনপার করছি।” 


বেশ কয়েকদিন তিনি ও তার বন্ধু হাসান জাকারিয়া পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে আত্মগোপনে আছেন। তাদের ভাষ্যমতে, পুলিশ তাদের গ্রেফতারে চিরুনি অভিযান চালিয়েছে।

ইয়াম্বিও বলেন, “আইন জারা কারাগারে বন্দী থাকা আমাদের বন্ধুরা জানিয়েছে নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করতে এসেছিল যে, হাসান এবং আমি কোথায় থাকছি কারণ তারা আমাদের খুঁজছিল।”

এই দুই সুদানের নাগরিক তাদের টুইটার অ্যাকাউন্টে অভিবাসীদের দৈনন্দিন জীবন বর্ণনা করার মাধ্যমে মুখপাত্র ও কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিল। তারা বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমকেও অভিবাসীদের উপর চলা বিভিন্ন ‘নির্যাতনের‘ কথা তুলে ধরেন। 

লিবিয়া কর্তৃপক্ষের মতে, তারাই লিবিয়ার রাজধানীতে গত বছরের অক্টোবরের শুরুতে সংগঠিত বিক্ষোভের নেতা।

গত তিন মাস ধরে, প্রায় ১ হাজার অভিবাসী তাদেরকে লিবিয়া থেকে নিরাপদ তৃতীয় কোন দেশে  সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে ইউএনএইচসিআর এর প্রাঙ্গন অস্থায়ী শিবির তৈরি করে আন্দোলন করছিলেন।

মূলত ত্রিপোলিতে অভিবাসীদের অন্যতম আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত গার্গরেশ এলাকায় গত অক্টোবরে লিবিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক অভিযান চালায়৷ 

জানা গেছে, সেখানে বসবাসরত অভিবাসীদের বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়৷ নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে সাত অভিবাসী নিহত হয়েছেন৷ তাছাড়া প্রায় চার হাজার অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করে শহরের বিভিন্ন কারাগারে পাঠানো হয়৷ 

এই অভিযানের পর পুনরায় গ্রেপ্তার আতংকে অভিবাসীদের একটি অংশ অক্টোবর মাসে থেকে ইউএনএইচসিআর দপ্তরের সামনে জড়ো হয়ে তাদের দাবি তুলে ধরার চেষ্টা করেন৷ অস্থায়ী শিবির তৈরী করে সেখানে তারা অবস্থান কর্মসূচী চালিয়ে যান৷

“লিবিয়ায় পুলিশ অভিবাসীদের উপর গুলি করে”

গত কয়েক দিনে ইয়াম্বিও একটি গোপন নম্বর থেকে প্রায় দশটি কল পেয়েছেন। তিনি মনে করেন, “প্রতিবারই ফোনে থাকা ব্যক্তি কথা বলে না। তারা আমাকে খুঁজে বের করতে এবং আমাকে অদৃশ্য করে দেওয়ার জন্য এটি করে করছে।”

প্রেফতার এড়াতে দিনে বেশ কয়েকবার এলাকা পরিবর্তন করে, অন্য অভিবাসীদের কাছে যাওয়া এড়িয়ে ইয়াম্বিও যতটা সম্ভব নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।

তিনি আরও বলেন, “এটা খুবই কঠিন কারণ আমি পুলিশের শিকারে পরিণত হয়েছি। কর্তৃপক্ষ ভালো করেই জানে আমি লড়াই চালিয়ে যাব। লিবিয়ায় অভিবাসীরদের জীবন কী অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তা প্রকাশ করেই যাব। তারা আমার কণ্ঠস্বর যেকোনমূল্যে বন্ধ করতে চায়।”

“লিবিয়ায় পুলিশ ও মিলিশিয়ারা অভিবাসীদের উপর গুলি করে এবং এটাই সবচেয়ে কষ্টের। বর্তমানে আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, আমি রাস্তায় আছি। আমি কী করতে পারি? আমি একটি সমাধান খুঁজছি কিন্তু কোনও উপায় খুঁজে পাচ্ছি না” যোগ করেন ইয়াম্বিও। 

লিবিয়ায় অবস্থানরত অভিবাসীরা লিবিয়ার কর্তৃপক্ষের হাতে নিয়মিত সহিংসতার শিকার হয়, বিশেষ করে দেশটির আটক কেন্দ্রগুলোতে যেখানে নিয়মিত চাঁদাবাজি, জোরপূর্বক শ্রম বা নির্যাতনের শিকার হন অভিবাসীরা। 


এমএইউ/আরআর


 

অন্যান্য প্রতিবেদন