অভিভাবকবিহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসীদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের কারণে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী এরিক জেমুরকে সোমবার ১০ হাজার ইউরো জরিমানা করেছে প্যারিসের ফৌজদারি আদালত৷ কট্টরপন্থি ও অভিবাসন বিরোধী হিসেবে পরিচিত এই রাজনীতিবিদ তাদেরকে ‘চোর’, ‘খুনী’ ও ‘ধর্ষক’ বলে মন্তব্য করেছিলেন৷ তবে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছেন এরিক জেমুর৷
২০২২ সালের ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে লড়তে যাওয়া কট্টরপন্থি প্রার্থী এরিক জেমুরকে ১৭ জানুয়ারি ১০ হাজার ইউরো জরিমানা করেছে প্যারিসের একটি আদালত৷
অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসীদের পক্ষে মামলা দায়েরকারী বিভিন্ন অধিকার সংস্থা ও নাগরিক সমাজের আইনজীবীরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, ২০২০ সালে বেসরকারি টিভি চ্যানেল সিনিউজের একটি অনুষ্ঠানে ফ্রান্সে বসবাসরত অভিভাবকবিহীন অপ্রাপ্তবয়স্কদের তিনি ‘চোর’, ‘খুনি’ এবং ‘ধর্ষক’ বলে অভিহিত করেন৷ এ কারণে এরিক জেমোরকে ১০ হাজার ইউরো জরিমানা দিয়েছে আদালত৷
মূলত জাতিগত বিদ্বেষ এবং ঘৃণা ছড়ানোর দায়ে কট্টর ডানপন্থী ও বিতর্কিত এই রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে আদালত৷ তবে আদালতে শুনানিতে অনুপস্থিত ছিলেন এরিক জেমোর৷ তাকে ১০০ দিনের জন্য দিনপ্রতি ১০০ ইউরো করে অর্থ্যাৎ সর্বমোট ১০ হাজার ইউরো জরিমানা করা হয়েছে৷ জরিমানার অর্থ পরিশোধ না করলে তার কারাদণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ প্যারিসের ফৌজদারি আদালতের এই রায় নভেম্বরে প্রসিকিউটরের উত্থাপিত অভিযোগের সাথে হুবহু মিলে গেল৷ এরিক জেমুর নভেম্বরেও প্রসিকিউটর কার্যালয়ের শুনানিতে অংশ নেননি৷
‘ঘৃণ্য বক্তব্য’
এরিক জেমুর ২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বেসরকারি টিভি চ্যানেল সি নিউজের সংবাদ পর্যালোচনামূলক অনুষ্ঠান ‘ফাস-আ-লাঁনফো’তে বিতর্কিত মন্তব্যটি করেছিলেন৷ সে সময় তারকা সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসেবে গণমাধ্যমে বেশ আলোচিত ছিলেন এরিক জেমুর৷ প্যারিসে শার্লি হেবদো পত্রিকা অফিসে সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বক্তব্যটি দেন এরিক জেমুর৷
তিনি বলেছিলেন, ‘‘তারা এখানে ভালো কিছুই করে না৷ তারা চোর, খুনি, এবং ধর্ষক৷ এর বাইরে এদের আর কোনো পরিচয় নেই৷ তাদের অবশ্যই ফেরত পাঠাতে হবে এবং ফিরে আসতে দেয়া যাবে না৷’’ তিনি আরো বলেছিলেন, ‘‘এটি একটি স্থায়ী হুমকি৷ এটি অভিবাসন নীতির সমস্যা৷’’
রায়ে এরিক জেমুরের পাশাপাশি সিনিউজের অনুষ্ঠান পরিচালককেও তিন হাজার ইউরো জরিমানা করা হয়েছে।
মামলা দায়ের করা সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে এসওএস রেসিজম, লিগ ফর হিউম্যান রাইটস (এলডিএইচ) এবং বর্ণবাদ ও বিরোধী ইন্টারন্যাশনাল লীগসহ (লিক্রা) প্রায় ত্রিশটি স্থানীয় সংগঠন ও কাউন্সিল৷ অপ্রাপ্তবয়স্কদের দায়িত্ব পালনকারী বিভাগীয় সরকারি দপ্তরগুলোও এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত ছিল৷
লিগ ফর হিউম্যান রাইটসের আইনজীবী আরিয়ে আলিমি বলেন, ‘‘মিড়িয়ায় পরিকল্পিত ঘৃণার বিরুদ্ধে এই রায়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ এই ঘৃণ্য বক্তব্যের পেছনে রয়েছে একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য যা মানুষকে উস্কে দেয়৷’’
সেইন সেন্ট ডেনিস ডিপার্টমেন্টের কাউন্সিল সমিতির সভাপতি স্টেফান ট্রুসেল বলেন, ‘‘অভিভাবকবিহীন যেসব অপ্রাপ্তবয়স্ক বিদেশি ফ্রান্সে সুরক্ষা পেতে আসেন তাদের সঙ্গে যথাসম্ভব সর্বোত্তম আচরণ করা হয়ে থাকে৷ তাদেরকে কখনোই কোনো রাষ্ট্রপতির নির্বাচনে দাঁড়ানো উচ্চাভিলাষী প্রার্থীর বক্তব্যের বলির পাঁঠা বানানো হবে না৷’’
একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এরিক জেমুর এই রায়কে ‘আদর্শগতভাবে উদ্দেশ্যমূলক ও নির্বোধ’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন৷ এই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করবেন বলে আইনজীবী অলিভিয়ার পারডোর মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছেন৷
এমএইউ/এফএস