(ফাইল ছবি) ব্রাসেলসের উত্তরে একটি ট্রেন স্টেশনের সামনে অপেক্ষারত আশ্রয়প্রার্থীরা। ছবি: মেদসা-সঁ-ফ্রন্তিয়ের (এমএসএফ)
(ফাইল ছবি) ব্রাসেলসের উত্তরে একটি ট্রেন স্টেশনের সামনে অপেক্ষারত আশ্রয়প্রার্থীরা। ছবি: মেদসা-সঁ-ফ্রন্তিয়ের (এমএসএফ)

দুর্বল আশ্রয়ব্যবস্থার দায়ে প্রথমবারের মতো বেলজিয়াম সরকারকে নিন্দা ও জরিমানা করেছে ব্রাসেলসের একটি আদালত। দেশটির আশ্রয়কাঠামোর অভ্যর্থনা ব্যবস্থা কয়েক মাস ধরে খুব খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে। আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকার রক্ষা করা না হলে প্রতিদিন ১০ হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা প্রদানের ঝুঁকিতে রয়েছে সরকার।

বুধবার ১৯ জানুয়ারি, বেলজিয়াম সরকারের পাশাপাশি দেশটিতে আশ্রয়ব্যবস্থার জন্য নির্ধারিত সরকারি সংস্থা ফেদাসিলকের কার্যক্রমেরও নিন্দা জানিয়েছে ব্রাসেলসের আদালত। দেশটিতে আশ্রয়কাঠামো অভ্যর্থনার সংকটের জন্য দায়ি করে এই নিন্দা আদালতের।

আদালতের মতে, “রাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করেছে এবং আশ্রয়ের অধিকার সীমিত করে বেআইনি কাজ করেছে।”

আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বেলজিয়ামের অভ্যর্থনা কাঠামোর সবগুলো জায়গা ২০২১ সালের গ্রীষ্মের শেষ থেকে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। ডিসেম্বর মাসের প্রচন্ড শীতে, শত শত মানুষ কয়েক সপ্তাহ ধরে অস্থায়ী শিবির করতে বাধ্য হয়েছিল। অভিবাসীরা আবর্জনা এবং ইঁদুরের উৎপাতের মধ্যেই ব্রাসেলসে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য নির্ধারিত একমাত্র নিবন্ধন কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করছিল। 

পেতি শাতু নামের একটি সংস্থা অপেক্ষারত অভিবাসীদের রাত কাটানোর জন্য বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করেছিল। 

তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, “চলমান করোনা ভাইরাসজনিত জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এবং জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে সংঘটিত বন্যার কারণে বেশ কিছু ভবনের মেরামত করা সম্ভব হয় নি।”

আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা বৃদ্ধি অস্বাভবিক কিছু নয়

তবে আদালত কর্তৃপক্ষের দেয়া সব যুক্তি নাকচ করে দিয়ে বলেন, বন্যার ঘটনা বেশ কয়েক মাস আগের এবং কোভিড-১৯ জনিত স্বাস্থ্য পরিস্থিতি দুই বছর ধরেই চলছে। 

সুতরাং আবাসনগুলোতে আবেদন বৃদ্ধির ঘটনায় বিস্ময় হওয়া কিংবা সময় স্বল্পতার মতো যুক্তি এখানে গ্রহণযোগ্য নয়। 

আদালতের সিদ্ধান্ত বলা হয়, “অভিবাসীদের জন্য নির্ধারিত দপ্তরে এবং ফেদাসিল আশ্রয়কাঠামো এমনভাবে সংগঠিত করেছে যাতে করে অভ্যর্থনা কেন্দ্রে কোটার সমপরিমাণ আশ্রয়পার্থী আশ্রয়আবেদন জমা করতে পারে।”

“এইভাবে অগ্রসর হওয়ার পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ ভুল ও অবৈধ। এটি আন্তর্জাতিক সুরক্ষার জন্য আবেদনকারীদের অভ্যর্থনার অধিকারকে লঙঘন করে। আবাসন কেন্দ্রে জায়গা না থাকায় বিপুল সংখ্যক লোককে ইচ্ছাকৃতাভাবে আশ্রয় আবেদন জমা কর‍তে বাঁধা দেয়া হচ্ছে”, বলা হয় আদালতের নির্দেশে। আদালত আরও জানায়, “আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়তি আবেদন সামাল দিতে প্রয়োজনীয় কাঠামো সরবরাহ করা বেলজিয়াম সরকারের দায়িত্ব। এগুলো অস্বাভাবিক কোন ঘটনা নয়, বহুবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।”

বর্তমান সংকট শেষ করতে বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দশে দিয়েছে আদালত। অন্যথায় প্রতিদিন কোন আশ্রয়প্রার্থী আশ্রয় আবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হলে সরকারকে দৈনিক পাঁচ হাজার ইউরো জরিমানা করা হবে বলে জানায় আদালত। 

অপরদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ফেদাসিল কোন আশ্রয়প্রার্থীকে মৌলিক অধিকার যেমন খাবার, চিকিৎসা ইত্যাদি সুবিধা দিতে ব্যর্থ হলে সংস্থাটিকেও প্রতিদিন ৫ হাজার ইউরোর জরিমান করা হবে বলে জানায় আদালত। 

বেলজিয়াম সরকার এবং ফেদাসিলের বিরুদ্ধে আশ্রয়ের অধিকার এবং অভ্যর্থনার অধিকার লঙ্ঘনের দায়ে পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়কে স্বাগত জানিয়েছে অভিবাসন সংস্থা সিরে, ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস বেলজিয়াম, ডক্টরস অফ দ্য ওয়ার্ল্ড সহ এই বিভিন্ন সংস্থা ও অধিকার সংগঠনগুলো। 

বেলজিয়ামের অভ্যর্থনা নেটওয়ার্কে ৪০টি কেন্দ্রে প্রায় ২৯ হাজার লোক থাকার মতো জায়গা রয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে, ফেদাসিল সংস্থায় কর্মরত এজেন্টরা অভ্যর্থনা নেটওয়ার্কে জায়গার অভাব এবং তাদের কাজের অবস্থার অবনতির প্রতিবাদে ধর্মঘটে গিয়েছিল। 


এমএইউ/আরআর


 

অন্যান্য প্রতিবেদন