উত্তর ফ্রান্সের বহুল আলোচিত অঞ্চল কালের আশেপাশের অনানুষ্ঠানিক ও অস্থায়ী শিবিরগুলোতে হাজারো অভিবাসীর সাথে অবস্থান করছে বহু অপ্রাপ্তবয়স্ক, যাদের সঙ্গে কোনো অভিভাবক নেই৷ অভিবাসন সংস্থাগুলো এর সমালোচনা করে বলছে, দীর্ঘমেয়াদি বাসস্থানের ব্যবস্থা না করায় তাদের জীবন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে৷
রাত সাড়ে ১০ টা৷ জরুরি সেবাকাজে নিয়োজিত অভিবাসন সংস্থা ইতুপিয়া৫৬ এর একজন কর্মীর ফোন বেজে উঠল৷ অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসল, ‘‘আমি ১৬ বছর বয়সি একজন কিশোর, আমি থাকার জায়গা চাই৷’’ ইতুপিয়া৫৬ এর কর্মী জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘আপনি কি একা?’’ ফোনের অপর দিক থেকে উত্তর আসে, ‘‘হ্যাঁ৷’’ যত দ্রুত সম্ভব একটি কম্বল এবং একটি তাঁবু নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দেয় ইতুপিয়ার কর্মীরা৷
রাত সাড়ে ১১টা৷ ইতুপিয়ার জরুরি সেবাকেন্দ্রে ফোন দেয় আরেক কিশোর। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে যতদ্রুত সম্ভব সেইন্ট ওমের অঞ্চলে কম্বল এবং তাঁবু পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ করে সে৷
মূলত সেইন্ট ওমের অঞ্চলেই কালেতে আসা অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্কদের (এমএনএ) জন্য নির্ধারিত আশ্রয় কেন্দ্রের অবস্থান। এটি পরিচালনার দায়িত্বে আছে সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ অভিবাসন সংস্থা ফ্রান্স তের দা'অ’সিল। কিন্তু বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে, কোভিড-১৯ জনিত জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতির সেন্ট-ওমেরের এই কেন্দ্র আর কোনো নতুন অভিবাসীদের গ্রহণ করছে না।
ইতুপিয়া৫৬ এর দুই সমন্বয়কারীর একজন পউলিন জোয়াউ বলেন, ‘‘এখন রাত সাড়ে এগারোটা৷ তীব্র শীতে বাইরে থাকা অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এটি কেবল দীর্ঘ রাতের শুরু৷’’
একই রাতে, ইতুপিয়ার দুই নারী কর্মী একটি হাসপাতালের প্রবেশপথে আহত এক অভিবাসী কিশোরের সাথে দেখা করেন৷ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া কিশোরের পায় তখনও ব্যান্ডেজ৷ ইতুপিয়ার কর্মীদের বুঝতে সমস্যা হয়নি সে অপ্রাপ্তবয়স্ক৷ তাকে কোনো সমাধান দিতে না পারলেও ইতুপিয়ার কর্মীরা হাসপাতালের ডাক্তারে সাথে আলোচনা করেন যাতে অন্তত রাতে তার থাকার ব্যবস্থা করা যায়৷ যাতে তীব্র ঠান্ডা থেকে সে রক্ষা পায়৷
ইতুপিয়ার স্থানীয় তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ‘‘আমাদের উচিত এসব কিশোরদের জন্য থানায় অবস্থান করা৷” স্বাভাবিক সময়ে দিনের বেলায় কোন অপ্রাপ্তবয়স্ককে পাওয়া গেলে তাকে নিয়ে দ্রুত থানায় নিয়ে যাওয়া হয়, যাতে করে দ্রুত তার কোনো ব্যবস্থা যায়৷ পুলিশ তখন অভিবাসন সংস্থা ফ্রান্স তের দা’অসিলকে ব্যবস্থা নিতে বলে৷

পউলিন জোয়াউ বর্তমান পরিস্থিতির সমালোচনা করে বলেন, ‘‘কোভিড পরিস্থিতির অজুহাতে বারবার সেন্ট ওমের কেন্দ্রে সংকটের কথা বলা হচ্ছে৷ আমি বুঝতে পারছিনা এটা তো হঠাৎ কোন সিদ্ধান্ত হতে পারে না৷ নাবালকদের জন্য কোন বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয় নি৷’’
দীর্ঘদিনের সমস্যা
তবে ফ্রান্স তের দা’আসিল জানিয়েছে, ওমিক্রন সংক্রমণের কারণে সাত দিন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হলেও বর্তমানে আবারও কার্যক্রম চালু হয়েছে। তবে কোভিড জনিত সমস্যার বাইরেও, কেন্দ্রটিতে যথেষ্ট স্থানের ব্যবস্থা নেই৷ বেশ কয়েকটি অভিবাসন সংস্থার মতে, এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা৷
আটক হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা অপ্রাপ্তবয়স্কদের নিয়ে কাজ করা এনজিও ইসিপিএটি ফ্রান্সের প্রকল্প পরিচালক এবং সমন্বয় আমেলি গাতো বলেন, ‘‘ছয় মাস হলো আমরা কালেতে কার্যক্রম শুরু করেছি৷ ছয় মাস ধরেই আমরা অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বাসস্থান সংকটের বিষয়টি দেখে আসছি৷’’
তিনি আরো যোগ করেন, ‘‘কোনো প্রকার রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা না থাকায় ১৪ বা ১৫ বছর বয়সি অনেক কিশোরকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে হয়৷ কখনও কখনও তাদের জন্য তাঁবু জোগাড় করতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়৷’’
ফরাসি সরকারের কঠিন নীতি
কালেতে অপ্রাপ্তবয়স্ক কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক কারো জন্যই দীর্ঘমেয়াদি কোনো আশ্রয়কেন্দ্র না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফরাসি সরকার, যাতে সেখানে যুক্তরাজ্য যেতে অপেক্ষমানদের জন্য নির্দিষ্ট কোন কেন্দ্র সৃষ্টি না হয়৷
ইসিপিএটিএর প্রধান সের্জ দুরো বলেন, ‘‘আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টা সরকারের কঠিন নীতির কারণে পণ্ড হয়ে যায়৷ সরকারের বক্তব্য স্থায়ী আবাসন হলে আবারো ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে অভিবাসীরা কালেকে একটি ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত করবেন৷’’
সরকারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে দারা কোনো আলোচনা করছেন কীনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্বীকার করেন, তারা সরকারের সাথে কোনো প্রকার আলোচনার চেষ্টা করেন নি।
এমএইউ/এফএস