ইউরোপীয় সীমান্তে ‘অভিবাসী হত্যা ও নিখোঁজবিরোধী’ দিবসে ফ্রান্স, গ্রিস, তুরস্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ ও সংহতি সমাবেশ করেছে এনজিও, অধিকার সংগঠন এবং নাগরিকদের বিভিন্ন দল। সমাবেশগুলোতে অবিলম্বে সীমান্তে ‘পুশব্যাক ও হত্যা’ বন্ধ করার জোর দাবি জানানো হয়।
২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মরোক্কো উপকূল থেকে স্পেনের সেউটা দ্বীপে প্রবেশের চেষ্টা করা বহু অভিবাসীকে বাঁধা দেয় স্প্যানিশ গার্ড সিভিল।
নিরাপত্তাবাহিনীর বাধায় প্রবেশ করতে না পেরে সেদিন উপকূলে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৫ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী। সেই সাথে নিখোঁজ ও আহত হয়েছিলেন আরো অনেকে।
এ ঘটনার স্মরণে অভিবাসনব সংস্থা এলার্ম ফোনের আহবানে দিনটিকে প্রতিবছর ‘সীমান্ত হত্যা ও নিখোঁজবিরোধী’ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে অভিবাসন অধিকার সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো।
সাম্প্রতিক বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এ বছরেও দিনটিতে নানা কর্মসূচী পালন করা হয়েছে।
ফ্রান্স
ফ্রান্সের বিভিন্ন শহর এবং দেশটির ইটালি, স্পেন, ও যুক্তরাজ্য সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে অর্থাৎ যে এলাকাগুলোতে অভিবাসনের চেষ্টার ঘটনা সাধারণত ঘটে থাকে সেসব এলাকায় সংহতি ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ইউরোপের বিভিন্ন সীমান্তে মারা যাওয়া ও নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে স্পেন-ফ্রান্স সীমান্তের বাস্ক প্রদেশে সংহতি সমাবেশ করেছে অভিবাসন সংস্থা ‘এতরকিনেকিন’।
দক্ষিণ পশ্চিম ফ্রান্সের মন্তো শহরে দিবসটির স্মরণে সংহতি সমাবেশ করেছে প্রায় দুই শতাধিক স্থানীয় নাগরিক। সমাবেশে সম্প্রতি ইটালি ফ্রান্স সীমান্তে ট্রেনে চড়ে গিয়ে মারা যাওয়া অভিবাসীর মৃত্যুতে ইউরোপের নীতির নিন্দা জানানো হয়।
দক্ষিণ ফ্রান্সের শমবেরি শহরে দিবসটি উপলক্ষে আয়োজন করা হয় সংহতি কনসার্টের। অভিবাসীদের স্মরণে নানান সংগীত পরিবেশন করেন উপস্থিত শিল্পীরা।

এছাড়া উত্তর ফ্রান্সের কালে, লানিওসহ বিভিন্ন শহরেও একই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এছাড়া দিবসটি উপলক্ষ্যে বিবৃতি দিয়েছে অভিবাসন সংস্থা লা সিমাদ, ইন্টারন্যাশনাল লীগ ফর হিউম্যান রাইটসের আওতাভুক্ত অধিকার সংগঠনগুলো।
গ্রিস
গ্রিস-তুরস্ক সীমান্তে চলা পুশব্যাক ও অভিবাসী মৃতুর প্রতিবাদে সীমান্তে হত্যা ও নিখোঁজবিরোধী দিবসে রাজধানী এথেন্সে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে শতাধিক অভিবাসী ও বিভিন্ন অভবাসী সংগঠনের কর্মীরা।
সমাবেশে সম্প্রতি গ্রিস থেকে পুশব্যাক হয়ে তুরস্ক উপকূলে মারা যাওয়া ১৯ অভিবাসীর মৃত্যুর ঘটনাকে হত্যার সাথে তুলনা করে বক্তব্য দেন বক্তরা।
সীমান্তে নিহতদের স্মরণে শোক ও নীরবতা পালন করার পাশাপাশি সমাবেশে উপস্থিত ব্যক্তিরা অবিলম্বে গ্রিস সরকার ও ইউরোপীয় বহিঃসীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সকে সকল প্রকার পুশব্যাক বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়।
তুরস্ক
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত গ্রিক দূতাবাসের সামনে পুশব্যাক ও সীমান্তে অভিবাসী ‘হত্যার’ প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে শতাধিক অভিবাসী ও অধিকারকর্মীরা।
গত সপ্তাহে ১৯ অভিবাসী মৃত্যুর ঘটনায় তুর্কি কর্তৃপক্ষ জানায়েছিল, গ্রিক নিরাপত্তারক্ষীদের দ্বারা অবৈধভাবে সীমান্তের ওপারে ঠেলে দেওয়ার পরেই তীব্র ঠাণ্ডায় মারা যান ১৯ অভিবাসী। তবে এথেন্স এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
তুরস্কের অধিকার সংগঠনগুলোর আয়োজিত এই বিক্ষোভে প্রায় তিন শতাধিক বিক্ষোভকারীকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।
উপস্থিত ব্যক্তিদের ইস্তাম্বুলের একটি প্রধান সড়ক থেকে ‘বর্ণবাদের সীমানা বন্ধ করুন, মানবতার জন্য উন্মুক্ত করুন’ লিখা ব্যানার নিয়ে গ্রিক দূতাবাসের দিকে মৌন মিছিল করেন।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রটেক্টিং রাইটস অ্যাট বর্ডার্স (পিআরএবি) এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ ও বহিঃসীমান্ত থেকে ১১,৯০১ জনকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে৷ পুশব্যাকের শিকার অভিবাসীদের প্রায় ৩২ শতাংশ আফগান নাগরিক৷
এক্ষেত্রে আশ্রয় আবেদন জমা দেয়ার অধিকার থেকেও তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে৷
এছাড়া গত বছর ইউরোপ সীমান্তে মৃত্যু ও নিখোঁজ রোধে দ্রুত ইউরোপীয় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে ফ্রন্টেক্সকে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷
সংস্থাটি বলেছে, ‘‘যে সমস্ত অঞ্চলে ফ্রন্টেক্সের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য কর্মরত রয়েছেন সেখানে অবৈধ পুশব্যাকের মতো কার্যক্রম বেশি ঘটেছে।’’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গবেষক আদিয়ানা তিয়োদা বলেন, “ফ্রন্টেক্স এই অন্যায় কার্যক্রমের দায় এড়াতে পারে না৷ কারণ আমাদের কাছে বহু ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার নথিভুক্ত আছে।’’
এমএইউ/আরআর