ফ্রান্সে আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ডানপন্থী লে রিপাবলিকান (এলআর) দলের প্রার্থী ভালেরি পেক্রেস রোববার দাবি করেন, ২০২১ সালে চার কোটি অভিবাসী ইইউ অঞ্চলে প্রবেশ করেছে৷ এই বক্তব্যের সত্যতা যাচাইয়ে ফ্যাক্টচেক করেছে ইনফোমাইগ্রেন্টস৷
ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে লে রিপাবলিকান (এলআর) দলের প্রার্থী ভালেরি পেক্রেস গত রোববার ফ্রান্স ৫- টিভিতে বলেন, চার কোটি অভিবাসী গত বছর (২০২১ সালে) সীমান্ত পেরিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশ করেছে৷
ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান অনুসারে তার এই বক্তব্য অসত্য৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে তিরিশ লাখেরও কম বিদেশি নাগরিক ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশ করেছে৷
ইউরোস্ট্যাট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে দেখা যাচ্ছে ভালেরি পেক্রেস প্রকৃত সংখ্যাটির তুলনায় অনেকটাই বাড়িয়ে বলেছেন৷ বাস্তবে মাত্র দুই কোটি ৭০ লাখ বিদেশি নাগরিক ইউরোপের মাটিতে প্রবেশ করেছে৷
এই পরিসংখ্যানগুলির সর্বশেষ তথ্য ইউরোস্ট্যাটের ওয়েবসাইটে রয়েছে৷
এই পরিসংখ্যানে নথিভুক্ত অভিবাসী ও অনিয়মিত অভিবাসীর অনুপাত নির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি৷
এই দুই কোটি ৭০ লাখ বিদেশি নাগরিক ইউরোপীয় জনসংখ্যার মাত্র শূন্য দশমিক শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করেন৷ যেখানে ইউরোপে আনুমানিক ৪৫ কোটি মানুষ বসবাস করেন৷
ইউরোপের বাইরে থেকে আসা দুই কোটি ৭০ লাখ অভিবাসীর মধ্যে পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার জন স্পেনে, দুই লাখ নয় হাজার ইটালিতে এবং এক লাখ আটাশি হাজার ফ্রান্সে এসেছেন৷
২০২১ সালে ২ লাখ অবৈধ সীমান্ত পারাপার
ভালেরি পেক্রেসের দাবির সত্যতা যাচাই করতে ইউরোপীয় বহিঃসীমান্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফ্রন্টেক্সের পরিসংখ্যান যাচাই করে ইনফোমাইগ্রেন্টস৷
ফ্রন্টেক্সের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে দুই লাখ অবৈধ সীমান্ত পারাপারের ঘটনা ঘটেছে। যেটি ২০২০ সালে ছিল এক লাখ ২৫ হাজার৷
এছাড়া পয়লা জানুয়ারি ২০২০-এ ইইউ -তে বসবাসকারী ৪৫ কোটি লোকের মধ্যে তৃতীয় দেশের নাগরিক ছিলেন সর্বমোট দুই কোটি ৩০ লাখ (৫.১%)
ভালেরি পেক্রেসের নির্বাচনী প্রচারবিভাগের সঙ্গে ফরাসি দৈনিক ‘লো পারিজিয়ান’ যোগাযোগ করলে তারা জানায়, তাদের প্রার্থী ‘একটু দ্রুত’ মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলেন৷ লে রিপাবলিকান দলের প্রচার বিভাগের মুখমাত্র রবিন রেডা স্বীকার করে বলেন, আসলে তিনি ২০২১ সালে কোনো প্রকার সীমাবদ্ধতা ও ‘বর্ডার চেক’ ছাড়াই ইইউতে চলাচল করা তিন কোটি ৯০ লাখ লোকের কথা বলতে চেয়েছিলেন৷
তিনি আরও বলেন, ‘‘এই পরিসংখ্যান স্বরাষ্ট্র বিষয়ক ইউরোপীয় কমিশনার ইলভা জোহানসনের একটি সাক্ষাৎকারের উদ্ধৃতি দিয়ে ফরাসি দৈনিক লো ফিগারো থেকে আমাদের সহকর্মী সংগ্রহ করেছিলেন৷
সাক্ষাৎকারে ইলভা জোহানসন জানিয়েছিলেন, গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের এসআইএস ডাটাবেসের যাচাই ছাড়া তিন কোটি ৯০ লাখ জন শেঙ্গেন এলাকায় ঢুকে পড়েছিলেন৷ মূলত এই কথা বলতে গিয়ে ভালেরি পেক্রেস অসাবধানতার ফলে অভিবাসীদের কথা বলেছিলেন,এভাবে বিষয়টির ব্যাখ্যা করেন রবিন রেডা ৷
তবে, রবিন রেডার বক্তব্যটি আংশিক সত্য৷ কারণ ইউরোপে অভিবাসনের সঙ্গে মূলত এসআইএস ডাটাবেসে থাকা তথ্যের কোনো সম্পর্ক নেই৷ এটি সাধারণত ইউরোপে কাউকে গ্রেপ্তার করা হলে বা বহিষ্কারের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য৷
অনেক সময় এটি ইউরোপে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত তৃতীয় বিশ্বের নাগরিকদের জন্যও প্রযোজ্য হতে পারে৷ তবে এটির সঙ্গে সার্বিক অভিবাসনের কোনো সম্পর্ক নেই৷
এমএইউ/আরকেসি