বছরে চার হাজার বাংলাদেশিকে মৌসুমি কাজের ভিসা দিবে গ্রিস৷ বর্তমানে দেশটিতে বসবাস করছেন এমন ১৫ হাজার বাংলাদেশিকেও দেয়া হবে সাময়িক কাজের অনুমতি৷ এমনই চুক্তি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে৷
তবে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার প্রক্রিয়া কী হবে সে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি৷
বাংলাদেশিদের জন্য গ্রিসে বৈধ অভিবাসন সুযোগ তৈরির বিষয়ে গত কয়েক মাস ধরেই আলোচনা চলছিল৷ অবশেষে গ্রিক অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী নোতিস মিতারাচির বাংলাদেশ সফরে এই বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সাক্ষর হয়েছে৷ এই সমঝোতা অনুযায়ী, বাংলাদেশিদের মৌসুমি কাজের ভিসা দিবে গ্রিক সরকার৷ এটি ইউরোপের সঙ্গে বাংলাদেশের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত প্রথম সমঝোতা স্মারক বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ৷ গ্রিসের মন্ত্রী মিতারাচি টুইটে লিখেছেন, ‘‘শুধু মৌসুমি কাজের অনুমতি নয়, যারা গ্রিসে অবৈধ উপায়ে প্রবেশ করছে বা বসবাস করছে তাদের সরাসরি ফেরত পাঠানোর জন্য আমরা একটি দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি৷’’
কী আছে চুক্তিতে
সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে গ্রিসের অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে৷ বলা হয়েছে, বর্তমানে গ্রিসে অবস্থান করছেন এমন ১৫ হাজার বাংলাদেশিকে মৌসুমি কাজের অনুমতি দেয়া হবে৷
এর বাইরে বছরে ৪০০০ বাংলাদেশি নাগরিককে মৌসুমি কাজের ভিসা দিবে দেশটির সরকার, যা পাঁচ বছর ধরে চলমান থাকবে৷ আবেদনকারীর অবশ্যই কাজের নিয়োগপত্র থাকতে হবে, যা দিবেন গ্রিসের নিয়োগকর্তা৷ এই ভিসার অধীনে গ্রিসে বছরে নয় মাস পর্যন্ত রেসিডেন্স পারমিট বা থাকার অনুমিত মিলবে৷ ভিসাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা স্থায়ীভাবে বসবাস বা নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন না৷ ইউরোপের মৌসুমি শ্রমিক আইন অনুযায়ী, তারা পরিবারের সদস্যদের আনারও অনুমতি পাবেন না৷
এদিকে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চুক্তির আওতায় মূলত কৃষিখাতের জন্য বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিবে গ্রিস৷ এক্ষেত্রে আবেদনের সময় ভ্রমণের বৈধ কাগজপত্র, কাজের বৈধ অনুমতিপত্র, স্বাস্থ্য বীমা জমা দিতে হবে৷ সেই সঙ্গে নির্ধারিত ফি ও ব্যয় বহন করতে হবে৷

প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়নি
সাধারণত ইউরোপের দেশগুলোতে নিয়োগ প্রতিষ্ঠান সরাসরি কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে৷ নিয়োগপত্র ও প্রয়োজনীয় অন্য কাগজপত্রের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট দেশের দূতাবাসে ভিসার আবেদন করতে হয়৷ এক্ষেত্রে এজেন্সি বা তৃতীয় পক্ষের কোনো ভূমিকা থাকে না৷
বাংলাদেশ থেকে গ্রিসে মৌসুমি কর্মী নেয়ার প্রক্রিয়াটি কী হবে তা দুই দেশের কোনো মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেই উল্লেখ নেই৷ এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানান, মূলত সমঝোতা স্মারকটি গ্রিসের সংসদে অনুমোদিত হওয়ার পরই পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে৷ তখন নিয়োগ প্রক্রিয়া কী হবে সেই বিষয়টি দুই দেশ মিলে ঠিক করবে৷ এক্ষেত্রে কোনো মধ্যসত্ত্বভোগী থাকবে কীনা তা এখনও বলার সময় আসেনি৷ তবে খুব দ্রুতই এই কার্যক্রম শেষ হবে এবং চলতি বছরের মধ্যেই গ্রিসে কর্মী পাঠানো যাবে বলে তিনি আশাবাদী৷
প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলে উল্লেখ করেন সরকারের এই কর্মকর্তা৷ ‘‘(আগ্রহীদের) আমরা অনুরোধ করব সরকার জানানোর আগে যাতে এই বিষয়ে কেউ কারো সঙ্গে কোনো লেনদেনে জড়িত না হন,’’ বলেন তিনি৷
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রীও এই বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন৷ চুক্তি সাক্ষর শেষে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পর সম্পূর্ণ নিয়োগকারীদের ব্যয়ে গ্রিসে যেতে পারবেন৷ এক্ষেত্রে কোনো আগ্রহী ব্যক্তি যেন কোনোভাবে কোনো দালাল বা প্রতারকের খপ্পরে না পড়েন সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে৷’’
পড়ুন: গ্রিসে আশ্রয়প্রার্থী কমে অর্ধেক
অব্যাহত থাকবে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া
গ্রিক সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বৈধ অনুমতি নিয়ে দেশটিতে বসবাস করা বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ হাজার৷ এর বাইরে অনেকে রয়েছেন যাদের বসবাসের অনুমতি নেই বা আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়েছে৷ অবৈধ উপায়ে গ্রিসে প্রবেশ বন্ধে কড়াকড়ির পাশপাশি সম্প্রতি এমন অভিবাসীদের বিরুদ্ধেও তৎপর হয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
২০১৬ সালের পর গত ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো চার্টার ফ্লাইটে করে ১৯ বাংলাদেশিকে জোরপূর্বক ফেরত পাঠিয়েছে দেশটি৷ সেই সময়ে নোতিস মিতারাচি দেশটির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক সুরক্ষার আওতায় যারা নেই তাদেরকে ফেরত পাঠাচ্ছে গ্রিস৷’’
নতুন সমঝোতা স্মারকে ফেরত পাঠানোর এই প্রক্রিয়া আরো জোরদারের কথা বলা হয়েছে৷ গ্রিসের অভিবাসী ও শরণার্থী মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াই ও অবৈধভাবে যারা বসবাস করছে তাদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে৷ পাচারচক্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে গ্রিসের অবস্থান পরিস্কার৷’’
ইউরোপের দেশগুলো থেকে এমন অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে ২০১৭ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসেডিউর্স (এসওপি) চুক্তি হয়৷ এর আওতাতেই ডিসেম্বরে ১৯ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল৷ গ্রিক মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এই প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘‘এখন আমাদের দেশের অনুরোধে বাংলাদেশে সরাসরি প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়া আরও দ্রুততর হবে৷’’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, ‘‘ইউরোপে ‘অবৈধভাবে’ বসবাসকারীদের এসওপি এর আওতায় ফেরত আনা হচ্ছে৷ গ্রিসের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না৷’’
পড়ুন: এক বছরে শতাধিক বাংলাদেশিকে জোর করে ফেরত পাঠালো জার্মানি