ইউক্রেনের সাথে রাশিয়া সহ ইউরোপের দেশগুলোর মানচিত্র। ছবি: ইনফোমাইগ্রেন্টস বাংলা
ইউক্রেনের সাথে রাশিয়া সহ ইউরোপের দেশগুলোর মানচিত্র। ছবি: ইনফোমাইগ্রেন্টস বাংলা

বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সামরিক অভিযান ঘোষণার পর থেকেই আতঙ্ক বেড়েছে দেশটির নাগরিকদের মধ্যে৷ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন অনেকে৷ দেশটি থেকে আসা সম্ভাব্য শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে ইউরোপীয় কমিশন পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর পাশে থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে৷

বৃহস্পতিবার রুশ প্রেসিডেন্টের ঘোষণার পর ইউক্রেনের একাধিক শহরে সামরিক অভিযান শুরু করে দেশটির বাহিনী৷ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে রাজধানী কিয়েভ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শহর ছাড়তে শুরু করেছেন বাসিন্দারা৷ এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপে নতুন করে বড় আকারে শরণার্থী প্রবাহের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ 

 ইউরোপীয় কমিশনের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কমিশনার ইলভা ইয়হানসন ২৪ ফেব্রুয়ারি টুইট করে জানিয়েছেন, “ইউক্রেনের সর্বশেষ পরিস্থিতি পরিবর্তনের সাথে সাথে দেশটির নাগরিকদের আশ্রয় দেয়ার জন্য ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলির সমর্থনে ইউরোপীয় কমিশন প্রস্তুত রয়েছে৷’’

তিনি আরো বলেন, “আমি পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, রোমানিয়া, স্লোভাক্লিয়া এবং হাঙ্গেরিকে তাদের সার্বিক তৎপরতা এবং ইউক্রেনের নাগরিকদের সুরক্ষা প্রদানের আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ জানাই৷’’



এর আগে মঙ্গলবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছিল, সীমান্তে তারা তখন পর্যন্ত ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা মানুষের বাড়তি চলাচলে খবর পাননি৷ তবে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিকে কয়েক হাজার শরণার্থী গ্রহণ করা লাগতে পারে বলেও উল্লেখ করেছে তারা৷ 

ইউক্রেনের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চারটি দেশের সীমান্ত রয়েছে৷ দেশগুলো হলো: রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ড৷ 


ইউক্রেন হাঙ্গেরি সীমান্তে সেনা টহলের একটি দৃশ্য। ছবি: পিকচার এলায়েন্স
ইউক্রেন হাঙ্গেরি সীমান্তে সেনা টহলের একটি দৃশ্য। ছবি: পিকচার এলায়েন্স


ইউরোপীয় কমিশনের সহায়তার প্রতিশ্রুতি

ইউক্রেনের প্রতিবেশী পোল্যান্ড এরইমধ্যে জানিয়েছে, সহিংসতা থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা ইউক্রেনীয়দের সহায়তায় তারা জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করছে৷

মঙ্গলবার পোল্যান্ডের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর, ইইউ-এর স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কমিশনার ইলভা ইয়হানসন বলেন, ‘‘পোল্যান্ড ইউক্রেনের একটি বড় সংখ্যক জনগণকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।” যদিও কতজন ইউক্রেনীয় পোল্যান্ডে আশ্রয় নিতে পারবেন তার নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা তিনি উল্লেখ করেননি৷  

তবে ইইউ কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্গারিটাস সিনাসের মতে সামগ্রিকভাবে ইইউ দেশগুলোকে বিশ হাজার থেকে দশ লাখের উপরে শরণার্থী আশ্রয় দেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে৷ গত সপ্তাহে জার্মান সংবাদ মাধ্যম ভেল্টকে তিনি এই তথ্য জানান৷


পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্তের একটি চেক পয়েন্ট। ছবি: Monika Sieradzka/DW
পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্তের একটি চেক পয়েন্ট। ছবি: Monika Sieradzka/DW


পোল্যান্ডের মন্ত্রীর সাথের সাক্ষাৎকালে ইলভা ইয়হানসন আরও বলেন, ইইউ কমিশন পোল্যান্ডকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি ইইউ অ্যাসাইলাম এজেন্সি, ইউরোপোল এবং ইউরোপীয় বহিঃসীমান্তরক্ষী বাহিনী (ফ্রন্টেক্স) থেকে কারিগরি সহায়তা দিতে আগ্রহী৷

এক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক ইউক্রেনীয় আসলে সেই পরিস্থিতি সামলাতে দেশটি আগে থেকেই ফ্রন্টেক্সের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে রেখেছে বলেও জানান তিনি৷ 

ভ্রাম্যমাণ মোবাইল ক্যাম্পের পরিকল্পনা রোমানিয়ার

ইউক্রেনের সাথে রোমানিয়ার ৬০০ কিলোমিটার স্থল সীমান্ত রয়েছে৷ রোমানিয়া কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা প্রায় পাঁচ লাখ সম্ভাব্য শরণার্থী গ্রহণের জন্য প্রস্তুত আছে৷

দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্যাসিল ডিঙ্কু বলেন, “আমরা এখনই (ইউক্রেন থেকে) বড় ধরনের (শরণার্থী) প্রবাহের আশা করছি না, তবে কখন কি হয় কেউ জানে না৷’’


রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তের একটি চেকপয়েন্টে মানুষের ভীড়। ছবি: পিকচার এলায়েন্স
রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তের একটি চেকপয়েন্টে মানুষের ভীড়। ছবি: পিকচার এলায়েন্স


চলতি মাসের শুরুর দিকে, রোমানিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুসিয়ান বোদে জানান, উত্তর-পূর্ব রোমানিয়ার সীমান্ত এলাকায় অস্থায়ী মোবাইল ক্যাম্পে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের৷

এদিকে ১১টি এনজিওর যৌথ প্লাটফর্ম রোমানিয়ান কোয়ালিশন ফর দ্য রাইটস অফ মাইগ্রেন্টস অ্যান্ড রিফিউজিস একটি বিবৃতি দিয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স৷ ইউক্রেনের পরিস্থিতির সম্ভাব্য অবনতি এবং পরবর্তীতে রোমানিয়ার উত্তর সীমান্তে অভিবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে স্বচ্ছ ও পরিষ্কার বার্তা দেয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছে তারা৷ 

কয়েক হাজার শরণার্থীর দায়িত্ব নিতে পারে হাঙ্গেরি

ইউক্রেনের সঙ্গে পূর্ব সীমান্তে অনির্দিষ্ট সংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে হাঙ্গেরি৷ মঙ্গলবার দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এমটিআই এই তথ্য জানিয়েছে৷

প্রতিরক্ষামন্ত্রী টিবোর বেঙ্কো বলেছেন, সশস্ত্র কোনো গোষ্ঠী যাতে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সীমান্ত অতিক্রম করতে না পারে সেনা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখছেন তারা৷

বেঙ্কো আরো বলেন, মানবিক সহায়তা প্রদানসহ শরণার্থী প্রবাহ মোকাবিলায় হাঙ্গেরির সেনা বাহিনীর সার্বিক প্রস্তুতি থাকতে হবে৷

হাঙ্গেরি অবশ্য এর আগে বলেছিল, তারা ইউক্রেন থেকে আসা সম্ভাব্য কয়েক হাজার শরণার্থীর দায়িত্ব নিতে পারে৷

অবশ্য অভিবাসন বিষয়ে হাঙ্গেরির বর্তমান সরকারের বরাবরই কট্টর অবস্থান রয়েছে। সার্বিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার সাথে থাকা দেশটির দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করা অভিবাসীদের আশ্রয় আবেদনের সুযোগ থেকে নিয়মিত বঞ্চিত করা হচ্ছে৷ যদিও দেশটির দাবি তারা ইইউ বহিঃসীমান্ত রক্ষা করছে৷ 

'সম্ভাব্য অভিবাসন হুমকি': স্লোভাকিয়ার মন্ত্রী

এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের সঙ্গে সীমান্তে কার্যকলাপ বাড়ায়নি স্লোভাকিয়া৷ তবে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী জারোস্লাভ নাদ মঙ্গলবার বলেছেন, “শরণার্থীদের আগমন মোকাবিলার অংশ হিসেবে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে স্লোভাকিয়ার সশস্ত্র বাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে৷’’

ইউক্রেনের বড় ধরনের সংঘাত হলে কত মানুষ দেশটি ছাড়তে পারেন সে সম্পর্কে এখনও অনুমান করা অসম্ভব বলে মনে করেন স্লোভাকিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জারোস্লাভ নাদ। তবে দেশটির রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের পরে তিনি বলেন, “স্লোভাকিয়া যে কোনো পরস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকবে৷ আমরা যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় রয়েছি। তবে সেটি অভিবাসনের সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলায়, যুদ্ধের জন্য নয়৷’’


এমএইউ/এফএস







 

অন্যান্য প্রতিবেদন