জার্মানি থেকে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনে আগ্রহী অভিবাসনপ্রত্যাশী, শরণার্থীরা দেশটির সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সহায়তা পেয়ে থাকেন৷ ফেরত যাওয়ার খরচ থেকে শুরু করে এককালীন অর্থ এবং স্বদেশে নতুন উদ্যোগ শুরুর সহায়তাও পান তারা৷ বাংলাদেশিদের জন্য প্রযোজ্য এমন দুইটি সহায়তা প্রকল্পের কথা জেনে নিতে পারেন এই প্রতিবেদন থেকে৷
প্রতি বছর জার্মানিতে বিপুল সংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশী, শরণার্থী আশ্রয় আবেদন করেন৷ দেশটির ফেডারেল অফিস ফর মাইগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজিস (বিএএমএফ)-এর হিসাবে ২০২১ সালে এক লাখ ৯০ হাজার ৮০০ জন আশ্রয় আবেদন করেছেন৷ তাদের মধ্যে অনেকের আবেদন গৃহীত হলেও, বড় একটি অংশই প্রত্যাখ্যাত হয়৷ এমন আশ্রয় আবেদনকারী, প্রত্যাখ্যাত ও শরণার্থীরা নিজ দেশে ফেরত যেতে চাইলে তাদের সহযোগিতা দেয় জার্মানির সরকার৷
২০২১ সালে আরইএজি/জিএআরপি নামের একটি কর্মসূচির সুবিধা নিয়ে জার্মানি ছেড়েছেন ছয় হাজার ৮০০ জন (সাময়িক হিসাব)৷ ২০২০ সালে এই সংখ্যাটি ছিল পাঁচ হাজার ৬৫৭ জন৷ যেখানে ২০১৯ সালে ১৩ হাজার ৫৩ জন, ২০১৮ সালে ১৫ হাজার ৯৪১ জন, ২০১৭ সালে ২৯ হাজার ৫২২ জন আর ২০১৬ সালে স্বেচ্ছায় জার্মানি ছেড়েছেন ৫৪ হাজার জন৷ করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর এই সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গেছে বলে উল্লেখ করেছে বিএএমএফ৷
কিছু ক্ষেত্রে আশ্রয় আবেদন বাতিল হওয়া এবং বসবাসের অনুমতি না থাকায় স্বেচ্ছায় ফেরত যান অভিবাসীরা৷ আবার অনেকে আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়াধীন অবস্থাতেও চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ এমন অভিবাসীরা ফেরত যেতে চাইলে সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারেন৷
আরইএজি/জিএআরপি
রি-ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড ইমিগ্রেশন প্রোগ্রাম ফর অ্যাসাইলাম সিকার্স/গভর্নমেন্ট অ্যাসিস্টেড রিপ্যাট্রিয়েশন প্রোগ্রাম, সংক্ষেপে আরইএজি/জিএআরপি৷ জার্মান সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পটির মাধ্যমে যেসব অভিবাসী নিজ দেশে বা অন্য যেই দেশ তাকে গ্রহণ করতে চায়, সেখানে ফেরত যেতে চাইলে সহায়তা করা হয়৷
আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা আইওএম-এর মাধ্যমে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়৷ এক্ষেত্রে কী পরিমান আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে সেটি প্রতিবছর নির্ধারণ করে জার্মানির সরকার৷
যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে
বর্তমানে ঘোষিত সহায়তাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- বিমান অথবা বাসের টিকেট এবং বসবাসস্থল থেকে বিমানবন্দর বা বাস স্টেশন পর্যন্ত যাতায়াতের খরচ;
- যাতায়াতকালীন খরচ: প্রতিজন ২০০ ইউরো (১৮ বছরের নীচে ১০০ ইউরো);
- এককালীন সহায়তা: জনপ্রতি সর্বোচ্চ ১০০০ ইউরো (১৮ বছরের নীচে ৫০০ ইউরো৷ একটি পরিবারের জন্য সর্বোচ্চ ৪০০০ ইউরো);
- চিকিৎসা সহায়তা: গন্তব্য-দেশে পৌছানোর পর তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ২০০০ ইউরো;
কারা আবেদন করতে পারবেন?
- যার আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়াধীন আছে;
- যার আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়েছে এবং দেশ ছাড়ার বাধ্যবাধকতা আছে ;
- যার বসবাসের অনুমতি আছে যেমন, শরণার্থী মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তি;.
- মানবপাচারের শিকার বা জোরপূর্বক যৌনপেশায় জড়াতে বাধ্য হওয়া ব্যক্তি;
আবেদন প্রক্রিয়া
কাউন্সেলিং সেন্টারগুলোর মাধ্যমে আগ্রহীদের আবেদন করতে হবে৷ বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংস্থা এই ধরনের কাউন্সেলিং সেন্টার পরিচালনা করে আসছে৷ জার্মানির সমাজ কল্যাণ দপ্তর বা বিদেশিদের নিবন্ধন কার্যালয়ে সরকারি কাউন্সেলিং সেন্টারের সেবা পাওয়া যাবে৷ আপনার নিকটস্থ কাউন্সেলিং সেন্টারের ঠিকানা পেতে পারেন এখানে৷
যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন
স্বেচ্ছায় জার্মানি ত্যাগে আপনার কাছে গন্তব্য দেশের বৈধ ভ্রমণ ডকুমেন্টস, যেমন, পাসপোর্ট বা বসবাসের অনুমতিপত্র থাকতে হবে৷ না হলে দূতাবাসের মাধ্যমে জরুরি ভ্রমণ সনদ বা এমন কোনো অনুমতি পত্রও পাওয়া যেতে পারে৷ নিজ দেশ ছাড়া অন্য দেশে যেতে চাইলে সে দেশের দূতাবাস থেকে এক বছরের ভিসা নিতে হবে৷
অসুস্থ বা চলাচলে অক্ষম ব্যক্তিরাও এই সুবিধা নিয়ে ফিরতে পারবেন৷ তবে সেক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ হবে৷ এজন্য চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে৷ কেউ গর্ভবতী হলে তার ভ্রমণ বিষয়ে চিকিৎসকের সনদ জমা দিতে হবে৷
পড়ুন: এক বছরে শতাধিক বাংলাদেশিকে জোর করে ফেরত পাঠালো জার্মানি
ইরিন প্রকল্প
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্প ইউরোপীয় রিটার্ন অ্যান্ড রিইন্টিগ্রেশন নেটওয়ার্ক, সংক্ষেপে যা ইআরআরআইএন বা ইরিন নামে পরিচিত৷ বাংলাদেশসহ ২৪টি দেশের অভিবাসীরা দেশে ফেরার পর এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন সহায়তা পেয়ে থাকেন৷
এর অধীনে ফিরে যাওয়ারা তাদের দেশে প্রকল্পের স্থানীয় অংশীদার প্রতিষ্ঠান বা সার্ভিস প্রোভাইডারের মাধ্যমে পুনর্বাসন কার্যক্রমে সাহায্য পাবেন৷ যেইসব সেবা পাবেন, তার মধ্যে আছে:
- দেশে অবতরণ পরবর্তী সহায়তা (বিমানবন্দর থেকে যাতায়াত, স্বল্পকালীন থাকার ব্যবস্থা);
- পৌঁছানোর পর কাউন্সেলিং;
- বাসস্থানের সহায়তা (মৌলিক সরঞ্জাম, ভাড়া, ভর্তুকি);
- পেশাগত দক্ষতা নিরুপণ ও চাকরি পেতে সহায়তা;
- ব্যবসা চালুতে সহায়তা ;
- সামাজিক ও স্বাস্থ্যহত বিষয়ে কাউন্সেলিং এবং সাধারণ আইনি সহায়তা;
- পুনর্বাসনে সহায়তা (দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক কার্যক্রম);
স্বেচ্ছায় বা জোরপূর্বক যেভাবেই প্রত্যাবর্তন হোক না কেন, এই প্রকল্পের অধীনে দুই ধরনের ব্যক্তিই সহায়তা পেতে আবেদন করতে পারবেন৷
আবেদন প্রক্রিয়া
এই ওয়েবসাইট (www.ReturningfromGermany.de ) থেকে ইরিন প্রকল্পের অধীনে রি-ইন্টিগ্রেশন বা পুনর্বাসন সহায়তা পেতে আপনাকে আবেদন করতে হবে৷ আবেদনের ইলেকট্রনিক ফর্মটি আপনার পরিচয়পত্র (পাসপোর্ট) ও সামাজিক সুবিধাপ্রাপ্তির ডকুমেন্টসহ পাঠাতে হবে বিএএমএফ এর কাছে৷
নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার পর তিন মাস পর্যন্ত সময়ের মধ্যেও এই আবেদনটি করা যাবে৷ তবে জার্মানি ছাড়ার পরিকল্পনা করার আগেই এ বিষয়ে তৃতীয় দেশের সার্ভিস প্রোভাইডার বা এ বিষয়ক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছে বিএএমএফ, যাতে অভিবাসী নিজ দেশে পৌঁছার পরপরই প্রয়োজনীয় সহায়তাগুলো পেতে পারেন৷ কোনো ব্যক্তি দেশে পৌঁছানোর পর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পুনর্বাসন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবেন এবং তার ভিত্তিতে বাস্তবতার নিরিখে তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে৷
এই প্রকল্পের অধীনে একজন ব্যক্তির পুনর্বাসন কার্যক্রমের মেয়াদ শেষ হবে ছয় থেকে নয় মাসের মধ্যে৷ তবে সর্বোচ্চ ১২ মাস বা এক বছরও হতে পারে৷ ঐ ব্যক্তি অন্য কোনো প্রকল্প থেকে সহায়তা পেলেও ইরিন-এর সহায়তা পেতে তা কোন বাধা তৈরি করবে না৷ এই বিষয়ে আরো জানতে পারেন প্রকল্পের ওয়েবসাইট থেকে৷
জার্মানি থেকে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনকারী বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের জন্য আরো কিছু কার্যক্রম থাকলেও বর্তমানে বাংলাদেশিরা এই দুইটি প্রকল্পের মাধ্যমেই সহায়তা পাচ্ছেন৷
তথ্যসূত্র: বিএএমএফ, রিটার্নিং ফ্রম জার্মানি