গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর প্রায় ত্রিশ লাখ লোক পার্শবর্তী ইউরোপে দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন৷ ফটো- আইওএম/সাফা মেশলি৷
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর প্রায় ত্রিশ লাখ লোক পার্শবর্তী ইউরোপে দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন৷ ফটো- আইওএম/সাফা মেশলি৷

রাশিয়ার হামলা শুরুর পর উদ্বাস্তু হয়েছেন ইউক্রেনের প্রায় ৩০ লখ লোক৷ গৃহহীন এ মানুষগুলো আশ্রয়ের আশায় ইউরোপের দেশগুলোতে ভিড় করছেন৷ লাখ লাখ মানুষের ভিড়ে একজনকে দেখা গেল ব্যতিক্রম৷ সবাই যখন ইউক্রেন ছাড়ছেন, তিনি তখন যাচ্ছেন ইউক্রেনের দিকে৷ উদ্দেশ্য সীমান্তে ইউক্রেন থেকে আসা মানুষদের পাশে দাঁড়ানো৷

সিরিয়ার উমর আল-সাকাল৷ টেলিভিশনে প্রথম রাশিয়ার ইউক্রেন হামলার সংবাদ পান৷ দেখেন হাজার হাজার আতঙ্কিত, ঘরছাড়া মানুষ৷ ২৮ বছরের ওমরের নিজের জীবনের সাথে মিলে যায় তাদের গল্প৷ তিনি জানেন, ঘর ছেড়ে শরণার্থী হওয়ার প্রতিটি মানুষের রয়েছে আলাদা আলাদা গল্প৷ আর তাই দেরি না করে তাদের পাশে দাঁড়ানোকেই এসময়ের কাজ ভাবলেন৷   

‘‘আমি নিজেও যুদ্ধ থেকে এসেছি৷ আমি জানি যুদ্ধের সময় মানুষ কতোটা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে জীবন বাঁচাতে ছুটেন,’’ বার্তাসংস্থা এএফপিকে এভাবেই বললেন ওমর৷  

ইউক্রেন সীমান্তে হোটেল

সীমান্তের পরিস্থিতি দেখে ওমরের ১০ বছর আগে ২০১২ সালে নিজের দেশ ছাড়ার কথা মনে পড়ে যায়৷ প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ নিয়ে বন্দি হয়েছিলেন তিনি৷ তারপর সমুদ্র পাড়ি দিয়ে গ্রিসের আসেন৷ এরপর কিছুদিন জার্মানিতে থাকার পর আবারো গ্রিসে শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নেন ওমর৷ গ্রিসের লেসবস দ্বীপে নিজের চেষ্টায় গড়ে তোলেন রিফুজি ফর রিফুজি অর্থাৎ শরণার্থীর সহাতায় শরণার্থী নামের একটি বেসরকারি সংস্থ৷  

কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের খবর দেখে আর স্থির থাকতে পারেননি তিনি৷ ছুটে যান উত্তর রোমানিয়ার সিরেটে অঞ্চলে৷ রাশিয়ার হামলার পর ইউক্রেন সীমান্তে অবস্থিত রোমানিয়ার এই এলাকায় প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার শরণার্থী ভিড় করেছেন৷ আর তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু৷ 

হাজার হাজার নারী আর শিশুর জন্য জায়গা করাটাও সহজ নয়৷ নিজের সংগঠনের জমানো কিছু টাকা ছিল৷ সেই টাকায় তিনি প্রথমে হোটেল ভাড়া করার সিদ্ধান্ত নেন৷ আর প্রায় একশ জন শরণার্থীকে সেখানে জায়গা দেন৷ 

ফেরার পথ নেই

প্রায় এক দশক আগে নিজের দেশ ছেড়েছেন ওমর৷ যাত্রা পথ ছিল অসম্ভব ঝুঁকিপূর্ণ৷ তুরস্ক হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে তিনি গ্রিসে পৌঁছেছিলেন৷ দেশে ফেলে এসেছেন নিজের মা-বাবা আর ভাই বোনদের৷ আর দেশে ফেরত যেতে পারেননি ওমর৷ ১০ বছর হলো প্রিয়জনদের সাথে দেখা নেই৷

নিজে দেশে ফেরত যেতে না পারলেও আর যেন কাউকে শরণার্থী না হতে হয় সেই স্বপ্ন ওমরের৷ 

‘‘আমি নিজেও দেশে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি কিন্তু বুঝতে পারছি এই মুহূর্তে এটি সম্ভব নয়৷ কিন্তু আমি আশা করি এমন করে অর্থাৎ শরণার্থী হয়ে অন্যের সহযোগিতা আর কারো লাগবে না৷ সবাই নিরাপদ থাকবেন৷ এটাই আমার স্বপ্ন৷’’

আরআর/কেএম (এএফপি) 

 

অন্যান্য প্রতিবেদন