প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার শরণার্থী বার্লিনে এসে পৌঁছাচ্ছেন৷ ছবি:পিকচার অ্যালায়েন্স
প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার শরণার্থী বার্লিনে এসে পৌঁছাচ্ছেন৷ ছবি:পিকচার অ্যালায়েন্স

জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ত্রিশ লাখেরও বেশি নাগরিক যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ যদিও জার্মানিতে কতজন ইউক্রেনীয় শরণার্থী এসেছেন, সেই সংখ্যাটি এখনও স্পষ্ট নয়

১৭ মার্চ জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইউক্রেনীয়দের সাহায্যের জন্য একটি নতুন পোর্টাল তৈরি করেছে৷ ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ ডট জার্মানি ফর ইউক্রেন ডট ডিই (www.germany4Ukraine.de) নামের এই পোর্টালে ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য মিলবে৷

 ইংরেজি, জার্মান, ইউক্রেনীয় এবং রুশ-এই চারটি ভাষায় তথ্য মিলবে পোর্টালে৷ মূল তথ্যের পাশাপাশি জার্মানিতে থাকার ব্যবস্থা, ওয়েবসাইট, স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে এই ওয়েবসাইটে৷ এছাড়াও নিয়মিত যে সব প্রশ্ন আসে, সেগুলো মাথায় রেখেও একটা ডেটাবেস তৈরি করা হয়েছে৷ পাশাপাশি, জার্মান পুলিশ প্রতারকদের কাছ থেকে সতর্ক থাকতেও অনুরোধ করা হয়েছে৷

 শরণার্থীদের কেউ ট্রেনে চেপে, কেউ বাসে, কেউ বা গাড়িতে ইউক্রেন থেকে জার্মানি এসেছেন৷ জার্মান সংবাদসংস্থা ডিপিএ বলছে, সরকারের খাতায় ১৮ মার্চ পর্যন্ত ২ লাখের বেশি ইউক্রেনীয়র নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে৷

 শরণার্থীদের কেউ আত্মীয়-বন্ধুর কাছে আশ্রয় নিয়েছেন৷ কেউ বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির থেকে সাহায্য নিচ্ছেন৷ বার্লিনে অন্যতম বড় স্বেচ্ছাসেবী কেন্দ্রটি অবস্থিত৷ শরণার্থীদের বার্লিন আসার অন্যতম কারণ এখানকার মূল স্টেশনটি পোল্যান্ড সীমান্ত খুব বেশি দূরে নয়৷


মূল তথ্য 

ভিসা ছাড়া ২০২২ সালের ২৩ মে পর্যন্ত জার্মানিতে থাকতে পারবেন ইউক্রেনীয়রা

 পোর্টালে যেসব তথ্য রয়েছে:

১. জার্মানিতে দীর্ঘদিন থাকার জন্য বিকল্প কী কী ব্যবস্থা রয়েছে৷

 ২. এক্ষেত্রে হয় অস্থায়ী বসবাসের অনুমতি লাগবে, না হয় পড়াশোনা বা কাজের অনুমতির জন্য আবেদন করতে হবে৷

 ৩. আশ্রয় অর্থাৎ অ্যাসাইলামের জন্য আবেদন করা যাবে না৷

 ৪. তিন মাসের বেশি থাকতে চাইলে বাড়ির ঠিকানা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে৷ একে জার্মান ভাষায় বলা হয় আইনভ্যোনারমেলডেআম্ট বা ব্যুর্গারআম্ট৷ বিশেষ করে বার্লিনের মতো বড় শহরের ক্ষেত্রে এর জন্য আগে থেকে সময় নিতে হবে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে৷

 ৫. জার্মানিতে কাজের জন্য ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের বিশেষ ভিসা বা বসবাসের অনুমতির জন্য চিঠি লাগবে৷ ওয়েবসাইটে ‘রেসিডেন্স’ নামের একটি বিভাগ রয়েছে সেখানে এই বিষয়ে বিশদ তথ্য মিলবে৷

 ৬. চিকিৎসক, নার্স, আইনজীবী বা ইঞ্জিনিয়ার হলে ‘বিশেষ স্বীকৃতি’ লাগবে৷ কারিগরদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য৷

৭. যারা পোষ্য নিয়ে এসেছেন, তাদের ক্ষেত্রে স্থানীয় কোনো পশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে দেখে নিতে হবে প্রাণীটির টিকা নেয়া রয়েছে কি না৷ এ বিষয়ে জার্মানির নিয়মে অনেকটাই শিথিলতা রয়েছে৷

 ৮. যাদের বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট রয়েছে, তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবকটি দেশে যেতে পারবেন, ২৬টি শেঙ্গেন দেশেও যেতে পারবেন৷

 ৯. ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো দেশ থেকে বসবাসের অনুমতি পেলে তার সীমা ৯০ দিন৷ ইইউ-র অন্য দেশে যেতে গেলে বসবাসের অনুমতির জন্য নতুন করে আবেদন জানাতে হবে ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের৷

 ১০. পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে (শিশুদের ক্ষেত্রেও) বিএএমএফে বিকল্প পাসপোর্টের আবেদন জানাতে হবে৷

 ১১. বসবাসের অনুমতি রয়েছে এমন ইউক্রেনীয় শরণার্থীরা পড়াশোনা বা প্রশিক্ষণের আবেদন জানাতে পারেন৷ এই প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থ পাবেন তারা৷

 ১২. ডয়চে টেলিকম, ভোডাফোন থেকে ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য বিনামূল্যে সিম কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ চুক্তি ছাড়া অন্য সংস্থা থেকেও সিমকার্ড নেয়া যাবে৷ তবে পাসপোর্টের মতো নথি লাগবে৷ ডয়চে টেলিকম, ভোডাফোন, পিওয়াইইউআর সিপগেট এবং কউফল্যান্ড মোবিল সংস্থা ইউক্রেনে বিনামূল্যে কল এবং এসএমএস পরিষেবা দিচ্ছে৷


বসবাসের ব্যবস্থা  

 ১. জার্মান সরকার পরিচালিত কয়েকটি কেন্দ্রে কিছুদিন থাকতে পারবেন শরণার্থীরা৷

২. ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ ডট উনটারকুনফ্ট ডট ডিই-সাইটে (www.unterkunft-ukraine.de) নাম নথিভুক্ত করা যাবে৷ অনেক ব্যক্তি স্ব-উদ্যোগেও থাকতে দিচ্ছেন শরণার্থীদের৷

৩. এছাড়াও জার্মান ইয়ুথ হস্টেল অ্যাসোসিয়েশন-সহ আরও দুটি সাইট রয়েছে যেখানে বসবাসের ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা যাবে৷

স্বাস্থ্য পরিষেবা

১. ১১২ নম্বরে ডায়াল করে আপৎকালীন পরিষেবা পাওয়া যাবে৷ হটলাইনের নম্বরটি হল ৪৯৩০১৯২৪০৷ রাতে আপৎকালীন প্রয়োজনে কিংবা ওষুধ লাগলে ১১৬ বা ১১৭ নম্বরে ফোন করলে বেশ কয়েকটি ফার্মেসি এবং কেমিস্টদের সাহায্য মিলবে৷

 ২. জার্মান সরকার আশ্বস্ত করেছে স্বাস্থ্যবিমা না থাকলেও আপৎকালীন সাহায্য পাবেন ইউক্রেনীয় শরণার্থীরা৷

 ৩. ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ ডট গেসুন্ডহেইট-আইন-মেনশেনরেখট ডট ডিউ/কনটাক্টস্টেলেন www.gesundheit-ein-menschenrecht.de/kontaktstellen ওয়েবসাইটে একাধিক তথ্য মিলবে৷

 ৪. স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দ্য মাল্টেস্টার পরিচালিত হাসপাতাল বা ক্লিনিকও রয়েছে জার্মানিতে৷

 ৫. জার্মান সরকার জানিয়েছে, দেশজুড়ে ৫০০ জন চিকিৎসক তাদের অফিসে বিনামূল্যে পরিষেবা দিচ্ছেন৷ মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়েও সাহায্য করা হচ্ছে৷ ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ ডট কেভেবার্লিন ডট ডিই www.kvberlin.de ওয়েবসাইটে সেই তালিকা রয়েছে৷

 ৬. করোনা টিকা নিতে চাইলে সেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়াও বেশ সহজ৷

 ৭. অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা রয়েছে৷ শিশুর জন্ম এ দেশে হলে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত একাধিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে জার্মানিতে৷

৮. প্রবীণ নাগরিকদের অনেকের ক্ষেত্রে দীর্ঘকালীন স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রয়োজন৷ সে ক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট একটি সাইট রয়েছে৷

 পড়ুনঃ ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিহত ২৫

জার্মানিতে কী ব্যবস্থা

বার্লিনে যারা আসছেন, তারা সেখানেই থেকে যেতে চাইছেন৷ এর একটা মূল কারণ ইউক্রেনীয় শরণার্থীরা মনে করছেন এখানে কাজ পাওয়া সহজ৷ কাজ পেলে থাকার ব্যবস্থাও হবে৷ কিন্তু এই শহরেরও একটা নির্দিষ্ট ধারণক্ষমতা রয়েছে৷ যদিও বার্লিনের মেয়র ফ্রান্সিসকা কিফ বলেছেন, শহরের কোনো ‘আপার লিমিট’ নেই৷

মেয়র ফ্রান্সিসকা কিফের নির্দেশে শহরের উত্তরে একটি আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে৷ তাতে বেশ কিছু শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে৷ বার্লিন থেকে বাস বা ট্রেনে সেখানে পৌঁছাতে কোনো অর্থের প্রয়োজন নেই৷ জার্মানির অন্য শহরে যাওয়ার জন্য বাসেরও ব্যবস্থা রয়েছে৷ ইউক্রেনীয়দের জন্য ভাষাশিক্ষারও ব্যবস্থা করেছে সরকার৷ তবে তাতে অংশ নেয়া বাধ্যতামূলক নয়৷

আরকেসি/এফএস (এমা ওয়ালিস)

 

অন্যান্য প্রতিবেদন