সুরে সুরে ছুঁয়ে ফেলা যায় মানুষের মন৷ তাই সুরের মাধ্যমেই দেশ ছেড়ে আসা মানুষগুলোর পাশে থাকার চেষ্টা করলেন প্রখ্যাত মার্কিন চেলো শিল্পী৷ পর্তুগালের রাজধানীতে প্রখ্যাত চেলো শিল্পী ইও ইও মা যোগ দিলেন আফগান শরণার্থীদের কনসার্টে৷ লিসবন সাক্ষী রইল এক অন্য ধারার কনসার্টের৷
লিসবনে মোৎজার্টের সুরে মিলে গেলেন ইও ইও মা এবং আফগান শরণার্থীরা৷ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ‘আইনে ক্লাইনে নাখটমিউজিক’-এর সুরের মূর্চ্ছনায় শান্তি পেলেন শরণার্থীরা৷ তবে শুধু আফগান শরণার্থীরাই নয়, লিসবনের এই ছোট কনসার্টে যোগ দিয়েছিলেন পর্তুগিজ শিল্পীরাও৷ আমেরিকার প্রখ্যাত চেলো শিল্পী ইও ইও মার উপস্থিতিতে, তার যন্ত্রসংগীতের মাধ্যমে ওইদিনের অনুষ্ঠান অন্য মাত্রা পেয়েছিল৷
২০২১ সালের ডিসেম্বরে পর্তুগালে এসে পড়াশোনা শুরু করেছেন আফগানিস্তানের একদল শরণার্থী৷ তারা পাশাপাশি সংগীত চর্চাও করেন৷ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ন্যাশনাল কনজারভেটরির ছোট্ট মঞ্চে সঙ্গীতের মাধ্যমে খানিকটা সময়ের জন্য হলেও তাদের মন থেকে অতীতের তিক্ত স্মৃতি মুছে গিয়েছিল৷
লিসবনের এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন অসংখ্য স্থানীয় মানুষজন৷ দর্শকদের উদ্দেশ্য করে মার্কিন চেলোবাদক বলেন, ‘‘কোনো প্রতিরোধের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় শক্তি হল সংস্কৃতি৷ নিজের জীবনের ঝুঁকি নিতে কোনোদিন ভয় পান না শিল্পীরা৷ লিসবনবাসীরাও এবার ওদের জন্য মনের দরজা খুলে দিন৷ মানবিকতার স্বার্থে ওদের পাশে থাকুন৷’’
২০২১ সালের আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর দেশ ছেড়েছেন লাখো নাগরিক৷ এদের কেউ কেউ পর্তুগালে আশ্রয় চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন৷ আফগানিস্তানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মিউজিকের ২৭৩ জনের একটি দলকে আশ্রয় দিয়েছে পর্তুগাল সরকার৷ এদের আফগানের এই সংগীত স্কুলের ১৫০ জন শিক্ষার্থীও রয়েছেন৷ ইও ইও মা নিজের উদ্যোগে তাদের আফগানিস্তান থেকে বের করে আনতে চেষ্টা করেছিলেন৷

তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পরই গানবাজনা বন্ধের ফরমান জারি হয়েছিল৷ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সংগীত স্কুলগুলি৷ অথচ, সনাতন আফগানি ধারার পাশাপাশি বিশ্বের নানা প্রান্তের সংগীত নিয়ে আগ্রহী তারা৷ গত দুই দশকে পপ মিউজিকও সমান প্রাধান্য পেয়েছে আফগানিস্তানে৷ তালেবানের ‘শরিয়তি ব্যাখ্যা’য় সঙ্গীতের পথ রুদ্ধ৷ তাই আতঙ্কে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন আফগান শিল্পী এবং সঙ্গীত শিক্ষার্থীরা৷ কারণ সঙ্গীতের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়৷
অনুষ্ঠানের পর ইও ইও মা সংবাদসংস্থা এপিকে বলেন, ‘‘ছাত্ররা আবার স্কুলে যাচ্ছে৷ আবারও প্রশিক্ষণ নেয়া শুরু করেছে৷ তারা নতুন নতুন সুর তৈরিতে ব্যস্ত এখন৷ সময় লাগলেও পর্তুগালেও একটা দারুণ সঙ্গীতের আবহ তৈরি হচ্ছে ৷’’

এই প্রসঙ্গে আফগানিস্তানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মিউজিকের প্রধান আহমেদ সারমাস্ত বলেন, ‘‘আমাদের শিল্পীদের সঙ্গে সহজেই মিশছেন এখানকার মানুষজন৷ এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত ইতিবাচক৷’’ অনুষ্ঠানের পর ইও ইও মা আর আহমেদ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন৷ শিক্ষার্থীদের অনেকেই মোৎজার্টের পাশাপাশি আফগানিস্তানের সনাতন সুরও বাজিয়েছেন ওই অনুষ্ঠানে৷
সংগীত শিক্ষার্থী মারজিয়া আনওয়ারি একেবারে ছোট এক কিশোরী৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি অসম্ভব খুশি৷ ইও ইও মা খুব ভাল একজন মানুষ৷’’
এই অনুষ্ঠানের পিছনে অন্য একটা উদ্দেশ্যও রয়েছে৷ সঙ্গীত শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানকে লিসবনে নতুন করে গড়ে তোলার কথা ভাবছেন ইও মা এবং আফগান শিল্পীরাও৷ এর ফলে পড়াশোনার পাশাপাশি আফগান সংস্কৃতি ও সুরের মধ্যেও থাকতে পারবেন শরণার্থীরা৷ তিক্ত স্মৃতিকে পেছনে ফেলে নতুন করে বাঁচবেন সুরের মাধ্যমে৷
আরকেসি/কেএম (এপি)