মানবপাচার সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি চলছে আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্টে৷ শুনানি চলাকালীন মানবপাচারের কথা স্বীকার করলেন তিন অভিযুক্ত৷ এই মানবপাচার চক্র ৪০ জনেরও বেশি সিরীয় নাগরিককে আয়ারল্যান্ড এবং ব্রিটেনে পাচারের কথা স্বীকার করেছে৷
উত্তর আয়ারল্যান্ডের হাইকোর্টে মানবপাচার সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতে আদালত জানিয়েছে, এ চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে৷ তবে এই পাচারচক্রে শুধুমাত্র তিন ব্যক্তি জড়িত এমনটা নয়৷ এই পাচারচক্র বেশ বড়সড়৷ ডাবলিন হয়ে ৪৩ জন সিরীয়কে আয়ারল্যান্ড এবং ব্রিটেনের নানা এলাকায় পাচার করেছে এই চক্র৷ আইরিশ টাইমসে প্রকাশিত খবর বলছে, বিচারপতি জানিয়েছেন, ওই পাচারচক্র বিমানের টিকিট বুকিং করত, হোটেলে থাকার ব্যবস্থা, এ ছাড়াও অভিবাসীদের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নথিও জোগাড় করে দিত৷
মার্চের শুরুতে অবৈধ অভিবাসন সংক্রান্ত একটি অভিযোগে আহমেদ ও., আবদুল-আল-ওয়াই এবং মহম্মদ এ এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ৷ অভিযুক্তদের মধ্যে প্রথম দুই জন বেলফাস্টের এবং তৃতীয় জন লন্ডনের বাসিন্দা৷ গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু নগদ অর্থ এবং একাধিক মোবাইল ফোন জব্দ করেছে পুলিশ৷
২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একাধিক মানবপাচারের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে৷ সিরিয়া এবং ব্রিটেনের বড়সড় কোনো চক্রের সঙ্গে তারা জড়িত বলেই মনে করা হচ্ছে৷
পুলিশের কাছে এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একাধিক প্রমাণ রয়েছে৷ প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, পাচারকারীরা প্রথমে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সীমানা চিহ্নিত করে পাচারের জন্য বিশেষ নেটওয়ার্ককে কাজে লাগাতেন৷ তবে কোন পথে মূলত এই পাচার চালাতেন তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়৷

শুনানির সময় জানা গিয়েছে, ওই পাচারকারীদের কাছে একাধিক পরিচয়পত্র ছিল,শুধু তাই নয় বিপুল অঙ্কের টাকাও সঙ্গে রাখত পাচারকারীরা৷ এই অর্থের জোগানের উৎস খোঁজার চেষ্টা করছে পুলিশ৷
মানবপাচার সংক্রান্ত এই মামলার প্রধান বিচারক ডেভিড ম্যাকনেইলের ব্যবসা সংক্রান্ত অপরাধ, প্রতারণা, আর্থিক নয়ছয়, মাদক সংক্রান্ত মামলায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে৷ ডেভিড স্পষ্ট জানান, এই মানবপাচার চক্রে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট কাজ বরাদ্দ ছিল৷ বেলফাস্ট থেকে অন্য কোথাও যেতে বিমানের টিকিট বুক করার সময় যে সমস্ত ই-মেইল এবং ফোন নম্বর তারা ব্যবহার করতেন, সেগুলিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ৷
সিসিটিভি ফুটেজে কী দেখা গিয়েছে
আহমেদ ও. নামধারী এক অভিযুক্তকে বারবার নিজের গাড়িতে করে বেলফাস্ট বিমানবন্দরে যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে সিসিটিভি ফুটেজে৷ পাশাপাশি তার আরও কয়েকজন সাগরেদের ছবি ধরা পড়েছে ওই নজরদারি ক্যামেরায়৷ মহম্মদ এ. নামে অপর অভিযুক্ত বেলফাস্ট থেকে লন্ডনে আসার পথে পাঁচ হাজার ইউরো নিয়ে এসেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ৷

যদিও আহমেদের আইনজীবীর দাবি, ওই গাড়ি তিনি চালিয়েছিলেন এমন কোনো প্রমাণ নেই৷ তাই বাকি অভিযোগ ভিত্তিহীন৷ আদালত জানিয়েছে, ৩৯ বছর বয়সি ওই ব্যক্তি পিৎজার দোকানে কাজ করতেন, পাচারের সময় ট্যাক্সিচালকের ভূমিকায় থাকতেন আহমেদ৷
আইরিশ টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বিচারক শুনানির সময় জানিয়েছেন, বেলফাস্টের আশপাশের নানা জায়গা থেকে ট্যাক্সি চালিয়ে অভিবাসীদের মূল শহরে নিয়ে আসতেন আহমেদ৷ শুধু সিসিটিভি নয়, মোবাইলেও আহমেদের নানা কার্যকলাপের প্রমাণ রয়েছে পুলিশের কাছে৷ এক অভিবাসীর ফোনে আহমেদের নাম্বার মিলেছে৷ ‘বেলফাস্ট আহমেদ ট্যাক্সি’ নামে সেই নম্বর সেভ করা ছিল৷
আহমেদ নিজে ২০১১ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া ছেড়েছিলেন৷ এরপর মিশর হয়ে লিবিয়া পৌঁছান তিনি, লিবিয়া থেকে যান সুইডেনে৷ সেই দেশে আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে জায়গা পান তিনি৷ সাত বছর আহমেদ সুইডেনে ছিলেন৷ এরপর নিজের পরিবারের সঙ্গে ২০২০ সালে তিনি ব্রিটেনে আসেন এবং পিৎজার দোকানে চাকরি নেন৷ পাশাপাশি এই মানবপাচারের কাজেও সক্রিয় ছিলেন তিনি৷ আহমেদের আইনজীবীর দাবি, তার মক্কেল অভিবাসন সংক্রান্ত কোনো অবৈধ কাজে যুক্ত নন৷
আরকেসি/ কেএম (এমা ওয়ালিস)