বিচা শহরের মেয়র জানিয়েছেন যে অন্তত ২৮০ জনকে গণকবর দেয়া হয়েছে | ছবি: রয়টার্স
বিচা শহরের মেয়র জানিয়েছেন যে অন্তত ২৮০ জনকে গণকবর দেয়া হয়েছে | ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে একটি ডিটেনশন সেন্টারে বেশ কিছু অনিয়মিত অভিবাসী আটকে আছেন৷ রাশিয়া দেশটিতে হামলা চালানোর পরও তাদেরকে ছাড়া হয়নি বলে একাধিক গণমাধ্যমের যৌথ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে৷

ইইউর অর্থায়নে পরিচালিত ক্যাম্পটিতে এখনো ঠিক কতজন আটকে আছেন তা অবশ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷ অনিয়মিত অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর আগ অবধি সাধারণত এসব সেন্টারে রাখা হয়৷  

ভেবে দেখুন, আপনি কোনো অপরাধে অভিযুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও একটি ক্যাম্পে আটকে আছেন যখন বিদেশি কোনো শক্তি সেখানকার আশেপাশে বোমা ফেলছে৷ ইউক্রেনের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের একটি সেন্টারে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এমন ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আটকে আছেন একদল অনিয়মিত অভিবাসী৷ 

আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানের জন্য প্রসিদ্ধ ডাচ অলাভজনক গণমাধ্যম লাইটহাউস রিপোর্টস, দোহাভিত্তিক আল জাজিরা এবং জার্মানির ডেয়ার স্পিগেল এক যৌথ অনুসন্ধানি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পাঁচ সপ্তাহ পরও লুস্ক শহরের একটি ডিটেনশন সেন্টারে বেশ কয়েকজন অনিয়মিত অভিবাসীকে আটকে রাখা হয়৷ আটকদের মধ্যে আফগানি, পাকিস্তানি, ভারতীয়, সুদানি এবং বাংলাদেশিরা ছিলেন৷ 


যদিও অনেকেই নিজ নিজ দেশের দূতাবাসের সহায়তায় সেন্টারটি থেকে মুক্ত হয়েছেন, ডেয়ার স্পিগেল জানাচ্ছে, তারপরও মার্চের শেষ অবধি অনেকেই সেখানে আটকে ছিলেন৷  

ক্যাম্পটি থেকে গত সপ্তাহে ছাড়া পাওয়া এক অভিবাসীর স্ত্রীর বরাতে গণমাধ্যমগুলো লিখেছে, সেখানে কোনো বিমান হামলা থেকে বাঁচতে কোনো শেল্টার ছিল না৷ তাছাড়া যখন বোমার সাইরেন বাজতো তখন ক্যাম্পের প্রহরীরা অভিবাসীদের আটকে রেখে নিরাপদ আশ্রয়ে চেলে যেতেন৷  

সেই নারী বলেন, ‘‘আটককৃত অনিয়মিত অভিবাসীদের ফোনগুলো প্রহরীরা নিয়ে গিয়েছিলেন৷ সেখানে বিদ্যুৎ ছিল না৷ পুরো পরিস্থিতি অনেক ভয়াবহ আকার ধারণ করে৷’’

লুস্ক শহরে মার্চের ১২ তারিখ হামলা হয়েছিল৷  

অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি অনুযায়ী, জাহারাইভিচি মাইগ্রেন্ট একোমোডেশন সেন্টারটি ইউক্রেনের বেলারুশ সীমান্ত সংলগ্ন ভেলিন অঞ্চলের একটি পাইন জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত৷ ১৯৬১ সালে একটি সামরিক স্থাপনা হিসেবে কম্পাউন্ডটি তৈরি করা হয়েছিল৷ কিন্তু ২০০৭ সালে সেটিকে ডিটেনশন সেন্টারে পরিনত করা হয়৷ রাশিয়া যুদ্ধ শুরু করলে সেন্টারটিতে আবারো ইউক্রেনীয় সেনাদের জড়ো করা হয় বল দাবি করেন সেখানে আটকে থাকা অভিবাসীরা৷

রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর অবশ্য ইথিওপিয়ার এবং আফগানিস্তানের কিছু অভিবাসীকে সেন্টারটি থেকে ছেড়ে দেয়া হয়৷ শুরুতে যারা ছাড়া পাননি তাদের কয়েকজন ডয়চে ভেলেকে জানান যে তাদের ‘‘মানব ঢাল'' হিসেবে ব্যবহার করতে সহস্রাধিক ইউক্রেনীয় সেনার সঙ্গে একই শিবিরে শতাধিক বিভিন্ন দেশের অভিবাসীর সঙ্গে রাখা হয়েছে৷

 লুস্কের সেন্টারটিতে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি এবং ভারতীয় আটকে থাকার তথ্য ডয়চে ভেলে ও ইনফোমাইগ্রেন্টস গতমাসের শুরুর দিকে প্রকাশ করলে পরবর্তীতে তাদেরও ছেড়ে দেয় শিবির কর্তৃপক্ষ৷ 

তবে, অন্যান্য দেশের অনেক অভিবাসী এখনো সেখানে আটকে রয়েছেন বলে গণমাধ্যমগুলোর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে৷ রাজনীতিবিদ এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা আটকদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷


‘‘এটা অত্যন্ত উদ্বেগের যে অভিবাসী এবং শরণার্থীদের এখনো যুদ্ধাঞ্চলের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে৷ তারা কোনো রকম পালানোর সুযোগ ছাড়া হামলার আশঙ্কায় রয়েছেন,’’ বলেন ইউরোপীয় সংসদের ডাচ প্রতিনিধি টিনিকে স্ট্রিক৷ 

গণমাধ্যমের তদন্ত বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইউক্রেনে অন্তত তিনটি ডিটেনশন সেন্টার পরিচালনার জন্য গত কয়েকবছর ধরে অর্থায়ন করছে৷ লুস্কের কাছের ডিটেনশন সেন্টারটি সম্ভবত এখনো ইউরোপীয় অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে৷ এটির উদ্দেশ্য হচ্ছে, সেসব আশ্রয়প্রার্থীদের আটকে রাখা যাদেরকে ইইউভুক্ত বিভিন্ন দেশ অতীতে পুশব্যাক করেছিল৷  

গতবছর সেন্টারটিতে অন্তত ১৫০জন বিদেশি নাগরিক আটক ছিলেন৷ তাদের অধিকাংশই অনিয়মিত পথে ইইউতে প্রবেশের চেষ্টাকালে আটক হন৷ এসব সেন্টারে একজন অভিবাসীকে ১৮ মাস পর্যন্ত আটকে রাখা হয়৷  

ইউক্রেনে তিনটি ডিটেনশন সেন্টারে ইইউ অন্তত তিনশো কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে বলেও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে৷ জাহারাইভিচি মাইগ্রেন্ট একোমোডেশন সেন্টারে ইইউ অর্থায়নে সতের কোটি টাকা খরচায় ইলেক্ট্রনিক দরজা লাগানোর পাশাপাশি জানালায় নানা সুরক্ষা ব্যবস্থা যোগ করা হয়েছিল৷ যদিও ইইউ সেন্টারটিকে বাসস্থান বলছে, কার্যত সেটি একটি শরণার্থী কারাগার৷  

এই বিষয়ে ইউরোপীয় কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি৷ 

উল্লেখ্য, মার্চের শুরুতে ইউক্রেনের এই সেন্টারটির পাশাপাশি মিকোলাইভ শহরের আরেকটি ডিটেনশন সেন্টারে বাংলাদেশিদের আটকে থাকার খবর প্রকাশিত হয়৷ এরপর তারা মুক্তি পান৷ বাংলাদেশি সেই অভিবাসীরা বর্তমানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রয়েছেন বলে জানা গেছে৷

 

অন্যান্য প্রতিবেদন