ইউরোপীয় দেশগুলোর সীমান্তে গণহারে অভিবাসীদের পুশব্যাকের নিন্দা জানিয়েছে কাউন্সিল অব ইউরোপ। গুরুতর এবং পদ্ধতিগত সহিংসতার মতো এমন কাজ দ্রুত বন্ধ করার জন্য সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে কাউন্সিল অব ইউরোপ বলেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) স্থল ও সমুদ্র সীমান্ত থেকে “শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী এবং অভিবাসীদের” ফিরিয়ে দেয়ার সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে।
ইউরোপ মহাদেশের ৪৬টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত একটি স্বাধীন সংস্থা হলো কাউন্সিল অব ইউরোপ। তবে এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত কোন প্রতিষ্ঠান নয়।
প্রতিবেদনে কাউন্সিল অব ইউরোপ ক্রোয়েশিয়া, ইটালি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া, গ্রিস, সাইপ্রাস, তুরস্ক, বুলগেরিয়া, ফ্রান্স এবং স্পেনের মতো দেশগুলোতে পুশব্যাকের ঘটনা ঘটছে বরে জানায়। এই ১৩টি দেশ অভিবাসীদের প্রতিবেশী দেশগুলিতে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কঠোরভাবে সমালোচিত হয়েছে।
অনেক অভিবাসীই এই এই দেশগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল৷ কিন্তু তাদেরকে আশ্রয় আবেদনের সুযোগ না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল।
কাউন্সিল অব ইউরোপের এই প্রতিবেদনটি পুশব্যাক নিয়ে এনজিও ও অভিবাসন সংস্থাগুলোর প্রকাশিত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সংস্থাটির একটি রিপোর্টে ২০২০ সালের গ্রীষ্মে প্রতিদিন ৫০ থেকে ১৩০টি পুশব্যাকের ঘটনা ঘটার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একই বছরের অক্টোবরে ফ্রান্স এবং ইটালির মধ্যকার সীমান্তবর্তী ফরাসি ডিপার্টমেন্ট আল্পস মারিটিমে ১৭০টি পর্যন্ত পুশব্যাকের ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
অন্যান্য দেশগুলির সীমান্তের ব্যাপারেও গণমাধ্যমে বা অভিবাসন সংস্থাগুলির পরিসংখ্যানে বেশ কিছু পদ্ধতিগত পুশব্যাকের ঘটনা উঠে এসেছে। যেমন, গ্রিসের বিরুদ্ধে বারবার অভিবাসীদের এজিয়ান সাগর থেকে তুরস্কে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ করা হয়েছে।
এমনকি অনেক সময় কোন প্রকার লাইফ জ্যাকেট ও নৌকা ছাড়াই সাগরে ছুঁড়ে ফেলার অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী অভিবাসীরা।
পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া এবং লাটভিয়াও তাদের সীমান্তে প্রতিবেশী বেলারুশ থেকে আগত লোকেদের প্রতি করা আচরণের জন্য বারবার সমালোচিত হয়েছে। বিশেষত ২০২১ সালের গ্রীষ্মে শুরু হওয়া শরণার্থী সংকটের সময়।
“নিষ্ঠুর মানবাধিকার লঙ্ঘন”
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, কিছু দেশে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে "গুরুতর এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে সহিংস আচরণ করে আসছে।’’
কাউন্সিল অব ইউরোপের মানবাধিকার কমিশনার দুনজা মিজাটোভিচ বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন সদস্য রাষ্ট্রগুলির সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির একটি অপরিহার্য উপাদান হয়ে উঠেছে। এটি নিষ্ঠুর,পরস্পরবিরোধী এবং বিপরীতমুখী ৷”
সর্বশেষ ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের "উষ্ণ" অভ্যর্থনার মাধ্যমে অভিবাসন ইস্যুতে সদস্য দেশগুলোর দ্বৈত নীতি প্রকাশ পেয়েছে বলে উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।
যেখানে অন্যান্য জাতীয়তার অভিবাসীদের নিয়মিত সীমান্ত থেকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
দুনজা মিজাটোভিচ জোর দিয়ে বলেন, “এইভাবে কাজ করে বিভিন্ন দেশের নেতারা অভিবাসীদের বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে ‘মিথ্যা বিভাজন’ তৈরি করছে। আমাদের মানবাধিকারের ইতিহাস হলো সকলকে সমানভাবে রক্ষা করা।”
ইউরোপের মতো ‘প্রসিদ্ধ মানবাধিকারের মহাদেশে’ সদস্য দেশগুলিকে এ জাতীয় ভিন্ন আচরণ বন্ধ করতে এবং অভিবাসীদের সীমান্ত থেকে ফেরত না পাঠিয়ে লোকদের আইনি বাধ্যবাধকতাকে সম্মান জানানোর আহবান জানিয়েছে কাউন্সিল অব ইউরোপ।
সংস্থাটি মানবাধিকারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি এবং আচরণ বিধি প্রণয়নের জন্য সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছে। যাতে করে সীমান্তে অমানবিক পুশব্যাকগুলো বন্ধ হয়।
এমএইউ/আরআর