গ্রিসের কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে কর্মরত আছেন বহু দক্ষিণ এশীয় অনিয়মিত অভিবাসী৷ তাদের নিজেদের তোলা ছবিতে এবার দেশটির রাজধানী এথেন্সে চলছে চারদিনব্যাপী চিত্র প্রদর্শনী৷ বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আসা দক্ষিণ এশীয় অভিবাসী শ্রমিকদের জীবনযাত্রা তুলে ধরা হয়েছে এই প্রদর্শনীতে৷
‘দিস ইজ এভিডেন্স’ শিরোনামে গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে চলছে চারদিনব্যাপী ফটোভয়েস আর্কাইভ এবং চিত্র প্রদর্শনী৷ বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে গ্রিসে আসা অনিয়মিত পুরুষ অভিবাসীদের নিজেদের তোলা বিভিন্ন ছবি ও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনীটি৷
ক্যানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ডকুমেন্টারি নির্মাতা রীনা কুকরেজা এই প্রদর্শনীর আয়োজক৷ তিনি গ্রিসে অনিয়মিতভাবে বসবাস করা দক্ষিণ এশীয় অভিবাসী পুরুষদের চারটি দলে ভাগ করে কয়েক বছর ধরে কাজ করে এই প্রদর্শনীটি সাজিয়েছেন৷
প্রথম তিনটি দলে রয়েছে বাংলাদেশি অভিবাসীরা, যারা পশ্চিম গ্রিসের মনোলাদায় একটি স্ট্রবেরি খামারে শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন৷ তাদের দলগুলোকে মানব সেবা, প্রবাসী কল্যান সংগঠন ও আশার আলো নামে নামকরণ করা হয়৷
চতুর্থ গ্রুপটি পাকিস্তানি অভিবাসী পুরূষদের একটি গ্রুপ যারা এথেন্সের বিভিন্ন অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে নিযুক্ত৷ পাকিস্তানি অভিবাসীদের এই দলটি গ্রিসে ‘অবৈধ’ অভিবাসী শ্রমিক হিসাবে তাদের জীবনযাত্রার কঠিন পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছে৷ তারা ২০১৮ সাল থেলে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত রীনা কুকরেজার কাছে হোয়াটস অ্যাপসহ বিভিন্ন ম্যাসেজিং এপ্লিকেশনের মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও তুলে পাঠান৷ রাজধানী এথেন্সে অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান বৃদ্ধি পাওয়ায় সরাসরি তাদের কর্মকাণ্ড দেখার সুযোগ পান নি রীনা কুকরেজা৷
বাংলাদেশি অভিবাসীদের ‘মানব সেবা’ দলটি প্রদর্শনীতে তাদের বক্তব্যে বলেন, “আমরা আমাদের কণ্ঠস্বর গ্রিসের মূল সমাজকে জানানোর জন্য অংশগ্রহণ করছি৷ আমাদের সম্পর্কে মানুষের ধারণা এবং দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে চাই৷’’

‘আশার আলো’ দলে থাকা বাংলাদেশি অভিবাসীরা ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত পশ্চিম গ্রিসের মনোলাদার কাছে লাপ্পা অঞ্চলে ছিলেন৷
তারা জানান, “গ্রিসে অনিয়মিত অবস্থায় কাজ করা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি এবং অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদানের লক্ষ্যে নিজেদের পরিস্থতি তুলে ধরতে তারা এই প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন৷ কৃষি শ্রমিকদের অধিকার শুধু গ্রিসে নয় বিশ্বের সর্বত্র প্রাপ্য৷’’

অপরদিকে এথেন্সের পাকিস্তানি অভিবাসীদের বক্তব্য, মুসলিম পুরুষ অভিবাসী হিসেবে তাদের প্রতি সমাজের ধারণা পরিবর্তন করার লক্ষ্যে তারা প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন৷ প্রদর্শনীর মাধ্যমে মুসলিম পুরুষদের বিরুদ্ধে বিপজ্জনক, পরিবারের প্রতি অবহেলা ও অযত্ন, রান্না না জানাসহ নানান ভুল ধারণার পরিবর্তন করতে চান তারা৷’’
এথেন্সের একটি হলে ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই ফটোভয়েস আর্কাইভ এবং চিত্র প্রদর্শনীটির শেষদিন আজ৷
গ্রিসের বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি কমিউনিটিসহ সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে এই ব্যক্তিক্রমী প্রদর্শনীটি৷ প্রথম দিন থেকেই সেখানে ভিড় জমিয়েছেন এনজিও, অধিকার সংগঠন ও অভিবাসন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা৷
২৫ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত এটির দ্বিতীয় পর্ব প্রদর্শিত হবে ক্যানাডার অন্টারিও রাজ্যের কিংসটোন শহরে।
এমএইউ/এফএস