যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া শিশুদের সুরক্ষা সম্পর্কিত ইসিপিএটি প্রতিবেদনে একটি ছবির একটি স্ক্রিনশট | সূত্র: ইসিপিএটি, ইউকে
যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া শিশুদের সুরক্ষা সম্পর্কিত ইসিপিএটি প্রতিবেদনে একটি ছবির একটি স্ক্রিনশট | সূত্র: ইসিপিএটি, ইউকে

যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শরণার্থী শিশুদের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ এই নাবালকরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ঠিক করে দেয়া জায়গায় রয়েছে৷

ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করা অপ্রাপ্তবয়স্কদের মূলত হস্টেলে রাখা হয়৷ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির মত, সেখানে তারা খাদ্য সংকটে ভোগে এবং অবহেলার শিকার হয়৷ খাবার, পোশাকআশাকের অভাবের কথা উল্লেখ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি জানিয়েছে, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং পরিচ্ছন্নতারও অভাব রয়েছে সেখানে৷ এটাই উদ্বেগের মূল কারণ৷ পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে স্ক্যাবিস রোগের প্রাদুর্ভাবের ফলে নাবালকরা একে অপরের মাথা ন্যাড়া করতে বাধ্য হয়েছে৷

‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে দুর্বৃত্তায়ন চলে’

একটি মানবাধিকার সংগঠনের (লাভ-১৪৬) চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ফিলিপ ইশোলা ‘দ্য গার্ডিয়ান’-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে দুর্বৃত্তায়ন চলে৷’’ তার মত, এটি অপ্রাপ্তবয়স্কদের দেখাশোনা করা (এলএসি) কাঠামোর বাইরে তৈরি করা হয়েছে৷ যাদের কোনো ঘর নেই অথবা যারা অভিভাবকহীন সেইসব অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এলএসি কাঠামো তৈরি করা হয়েছিল৷ যুক্তরাজ্যে আসা এই অপ্রাপ্তবয়স্কদের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ছে বলেও উল্লেখ করেন ফিলিপ৷

যুক্তরাজ্য সরকারের জাতীয় স্থানান্তর প্রকল্প অনুযায়ী অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক আশ্রয়প্রার্থীদের বিষয়টি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দেখতো৷ গত নভেম্বরে এটি বাধ্যতামূলক করা হয়৷ গত বছরই কেন্ট কাউন্সিল অতিরিক্ত অপ্রাপ্তবয়স্ক আশ্রয়প্রার্থী নিতে অস্বীকার করেছিল৷ ফলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ২০২১ সালের জুলাই থেকে সঙ্গীহীন অপ্রাপ্তবয়স্কদের ‘অনিয়ন্ত্রিত’ বাসস্থানে রাখতে শুরু করে৷

 অভিবাসন মন্ত্রী কেভিন ফস্টার জানান, ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৬১ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ‘কেয়ার’ পাচ্ছে না৷ স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অধীনে নির্দিষ্ট জায়গা না পাওয়া পর্যন্ত ওই অপ্রাপ্তবয়স্কদের যুক্তরাজ্যের আশপাশের হোটেলগুলিতে অস্থায়ী আশ্রয়ে রাখা হয়েছে৷

 শুধুমাত্র লন্ডনের হোটেলে ২৫০ জন সঙ্গীহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক রয়েছে, জানিয়েছে লাভ-১৪৬ সংগঠন৷ দেশের অন্য জায়গায় আরো অপ্রাপ্তবয়স্ক আশ্রয়প্রার্থী রয়েছে৷তবে প্রকৃত পরিসংখ্যানটা আরো অনেক বেশি বলে মনে করছে তারা৷ কারণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কখনো কখনো শিশুদেরও প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে নথিভুক্ত করে ফেলেন৷ পরে অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে প্রমাণিত না হলে অনেক সময় ধরে নেওয়া হয় চ্যানেল পেরিয়ে আসা কিশোরদের বয়স আঠারোর বেশি৷

এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এক সমাজকর্মী ব্রিটেনের একটি সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন, ‘‘আইনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকের দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত কোনো কিছুর উল্লেখ নেই৷ বন্দিদের মতো ধূসর রঙের ট্র্যাকস্যুট এবং ফ্লিপফ্লপ পরে থাকে তারা৷ পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে আমি সত্যি অবাক হয়ে গিয়েছি৷’’

নিখোঁজ শিশু

গত বছরে ‘দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট’-এর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০২১ সালের ২০ জুলাই থেকে ২৫ নভেম্বরের মধ্যে ১৬ জন সঙ্গীহীন শিশু শরণার্থী সরকারের ‘অনিয়ন্ত্রিত’ হস্টেল থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে৷ একাধিক সংগঠন হস্টেলগুলিতে সুরক্ষার অভাবের কথা জানিয়েছে৷ বিরোধী লেবার পার্টির ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েট্টে কুপার আশঙ্কাপ্রকাশ করেছিলেন যে এই শিশুগুলো হয়তো মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে গিয়েছে৷ সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতেও বলেছিলেন তিনি৷ 

মোরিয়ার শিবিরে শরণার্থী শিশুরা ৷ ছবি-গেটি ইমেজ
মোরিয়ার শিবিরে শরণার্থী শিশুরা ৷ ছবি-গেটি ইমেজ

ডিটেনশন অ্যাকশনের বেলা শ্যাঙ্কে বলেছিলেন, ‘‘যুক্তরাজ্যে আসার সময় অকল্পনীয় বিপদের হাত থেকে বেঁচে ফেরা শিশুগুলোর অন্তত এখানে এসে নিরাপদ এবং সুরক্ষিত বোধ করা উচিত৷’’ 

যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দাবি, হোটেলগুলোতে অস্থায়ী ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ আবাসিক শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্করা পর্যাপ্ত সাহায্য পাচ্ছে৷ কুপার বিষয়টিকে ‘সম্পূর্ণ নিন্দনীয়’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন৷

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রয়েছে

চিলড্রেনস সোসাইটির নীতিনির্ধারণ ম্যানেজার আজমিনা সিদ্দিকী ‘দ্য গার্ডিয়ান’-কে জানিয়েছেন, ‘‘এরা সবাই শিশু,অপ্রাপ্তবয়স্ক৷ পরিবারের কেউ সঙ্গে নেই৷ সহিংসতা, যুদ্ধ কিংবা নিপীড়নের কারণে অনেকে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া শিশুগুলিকে সুরক্ষা দেয়া, তাদের কল্যাণের কথা ভাবা৷ এই শিশুগুলো যাতে নিজেকে নিরাপদ ভাবে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে৷ উপযুক্ত বাসস্থান প্রয়োজন তাদের, কোনো হোটেল নয়৷ তাদের আইনি পরামর্শ পাওয়ার সুযোগ থাকা উচিত৷ মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটিও খেয়াল রাখতে হবে৷’’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ‘দ্য গার্ডিয়ান’-কে জানিয়েছেন, ‘‘সদ্য আসা আশ্রয়প্রার্থী শিশুদের চাহিদাপূরণ নিশ্চিত করতে কাজ করছে সরকার৷ শিশুদের অত্যাবশ্যক যত্ন নেয়ার জন্য এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ক্রমাগত সমর্থনের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ৷ সমগ্র যুক্তরাজ্যজুড়ে দায়িত্বের একটি ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত বণ্টন নিশ্চিত করার জন্য আমরা জাতীয় স্থানান্তর প্রকল্পের বিষয়টি পর্যালোচনা করছি৷’’

 

আরকেসি/এআই

 

অন্যান্য প্রতিবেদন