পর্তুগালের দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকা আলেনটেজোকে বলা হয় সোনার খনি৷ তবে সোনা নয়, এ অঞ্চলটি সুস্বাদু ফল উৎপাদনের জন্য খ্যাত৷ এখান থেকে ইউরোপের নানা দেশে ফলের চাহিদা মেটানো হয়৷ এখানকার কৃষি খামারগুলোতে কাজ করছেন বিপুল অভিবাসী শ্রমিক৷
এসব শ্রমিকের বেশিরভাগই মূলত এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা৷ কিন্তু ‘সোনার খনিতে’ এসে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন তো হচ্ছেই না বরং শিকার হচ্ছেন তার শোষণ আর বঞ্চনার৷
এই এলাকার সাও টেওটোনিও শহরে দেখা মিলল বাংলাদেশ, ভারত পাকিস্তান এবং থাইল্যান্ড থেকে আসা শ্রমিকদের৷ তারা মূলত এখানকার কৃষি ক্ষেতে ফুল কুড়ানোর কাজ করেন৷ তবে স্থানীয়দের অনেকেই বিষয়টি ভাল চোখে দেখেন না৷
একজন স্থানীয় নারী বললেন, ‘‘এরাই এখানে সবার উপরে৷ তারা সংখ্যাগুরু হয়ে উঠেছে৷’’ আরেকজন বললেন, ‘‘আপনি ২০ জন অভিবাসী দেখলে মাত্র তিনজন স্থানীয় পাবেন৷’’
শোষণ আর বঞ্চনার অমানবিক জীবন
কয়েখ লাখ টাকা খরচ করে পর্তুগালের এ অঞ্চলে কাজ করতে আসেন অভিবাসী শ্রমিকরা৷ কিন্তু তাদের মাসিক বেতন ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার মতো৷ তাদের কাজ মূলত ক্ষেত থেকে ফল কুড়ানো৷
সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করেন তারা৷ আর রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে আসলে বেতন নিয়মিত পাবেন কি না সেই আশঙ্কা তো আছেই৷ শুধু কি তাই, কখনো কখনো অতিরিক্ত কাজের জন্য টাকা দেওয়ার পরিবর্তে সেই কর্মঘণ্টা কেটে ফেলা হয় বলে দাবি অনেকের৷
সেখানে কর্মরত এক শ্রমিক জিয়ান পল ডেহঠার বলেন, ‘‘কোনো শ্রমিক যদি মাসে একশ বা দুইশ ঘণ্টা কাজ করেন তাহলে কখনো কখনো তার ১০ বা ১৫ ঘণ্টা কেটে ফেলা হয়৷ তারা বলে, তুমি ভুল করেছ, তোমাকে দুইশ ঘণ্টার টাকা দেওয়া হবে না৷ ১৮০ ঘণ্টার টাকা দেওয়া হবে৷ তাছাড়া কখনো কখনো তারা বীমাসহ অন্যান্য নানা খাতে টাকা কেটে রাখে৷’’
লাখ লাখ টাকা খরচ করে আসা এসব শ্রমিকদেরকে আবার দেশে থাকা তাদের পরিবারের জন্য টাকা পাঠাতে হয়৷ তাই যেকোনো খাত থেকে নিজের খরচ কমিয়ে টাকা জমানোর আপ্রাণ চেষ্টা তাদের৷ এজন্য বিশেষ করে থাকার খরচ কমিয়ে আনতে চান তারা৷
কর্মক্ষেত্র থেকে কিছুটা দূরে কয়েকজন সহকর্মীর সাথে থাকেন ডেহঠার৷ এমন থাকার জায়গায় আসলে নিজের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বলে কিছু থাকে না৷
এদিকে কোম্পানি থেকে দেওয়া থাকার জায়গার পরিস্থিতি ভিন্ন রকম৷ এমন একটি বাসায় পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট রুমে গাদাগাদি করে থাকছেন শ্রমিকরা৷
ভাড়ার বিষয়ে একজন শ্রমিক বললেন, ‘‘চলতি মাসের জন্য আমাদেরকে এক হাজার ইউরো দিতে হবে৷ গত মাসে আমরা দশজন ছিলাম এই রুমে৷ আর এ কারণে জনপ্রতি ভাড়ার টাকা ছিল কম৷’’
স্কুলে শিশুরা
সাও টেওটোনিও শহরে একটি স্কুলে মোট শিক্ষার্থী ৮৫০ জন৷ এর মধ্যে ১২০ জন বিদেশি৷
সেখানে কর্মরত একজন উন্নয়নকর্মী তানিয়া সানটোস বলেন, ‘‘অভিবাসী পরিবারের সন্তানেরা অবশ্য এখানে কোনো সমস্যা করে না৷ তারা উগ্র নয় আর রুঢ় আচরণও করে না৷’’
জানা গেছে, অভিবাসীদের সন্তানদের স্কুলে আলাদা যত্ন নেওয়া হয় এবং আলাদাভাবে পুর্তগিজ ভাষা শেখানো হয়৷ তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিবাসী পরিবারগুলো এখানে থাকতে চায় না৷ আর শিশুরাও এটি জানে৷
তানিয়া বলেন, ‘‘এ কারণে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে খুব একটা মনোযোগী নয়৷ কারণ তারা জানে ভবিষ্যতে তাদের পুর্তগীজ ভাষার দরকার হবে না৷’’
জানা গেছে, এখানে আসার এক-দুই বছর পরই এশিয়া থেকে আসা অভিবাসীরা ইউরোপের অন্যান্য দেশে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ আর এ ‘স্বপ্ন পূরণ’ না হলে অনেকেই আবার থেকে যান পর্তুগালে৷
আরআর/এসিবি (মারিওন ম্যাকগ্রেগর)