সিরিয়া থেকে শরণার্থী হয়ে জার্মানিতে এসেছিলেন আনাস আলর্তুকি ৷ আর তাই তিনি খুব ভাল করেই জানেন কোন পরিস্থিতিতে মানুষ অন্য দেশে আশ্রয় চাইতে আসেন৷ নিজের এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আলতুর্কি এগিয়ে এসেছেন জার্মানিতে আশ্রয় নেওয়া ইউক্রেনের শরণার্থীদের সহায়তায়।
যুদ্ধের মাঝে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যখন দেশ ছাড়তে হয় তখন নিজের দরকারি জিনিসগুলো নেওয়ার সময় বা সুযোগ কোনোটিই ছিল না। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা আলতুর্কির জীবনে এমনটা ঘটেছে। আর তাই ইউক্রেনীয়দের দেখে তার নিজের জীবনের কথাই বার বার মনে পড়ছে।
"এই লোকগুলোকে দেখলে খুব কষ্ট হয়, আমার নিজের জীবনের কথা মনে পড়ে," বলেন আলতুর্কি।
২০১৫ সালে সিরিয়া ছাড়েন আলতুর্কি। তারপর লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আশ্রয় চাইতে আসেন জার্মানিতে। ৩৬ বছরের আলতুর্কি এখন সহায়তাকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। বর্তমানে জার্মানির আরবাইটের-সামারিটের-বুন্ড নামে একটি দাতব্যসংস্থার সঙ্গে তিনি যুক্ত। সংস্থাটির হয়ে জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যে ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীদের সহযোগিতায় কাজ করছেন। এসব নিয়ে ব্যস্ত আলতুর্কি।
আলতুর্কির কাজ হলো শরণার্থীদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করা। সহকর্মীদের সঙ্গে তিনি শরণার্থীদের খাবার সরবরাহ করেন, তাদেরকে প্রয়োজন অনুযায়ী কাপড় দেন এবং তাদের থাকার জন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখতে কাজ করেন।
আলতুর্কি বলেন, "ইউক্রেন থেকে এসে তারা এক বা দুই রাত এখানে থাকেন। তারপর তাদেরকে অন্য কোনো জায়গায় স্থানান্তর করা হয়।"
লোয়ার স্যাক্সনির এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে এখন পর্যন্ত ২২ হাজার ইউক্রেনীয় শরণার্থীকে সহায়তা করা হয়েছে। আর এমন হাজার হাজার শরণার্থীর সহায়তার কাজে যুক্ত ছিলেন আলতুর্কি।
"আমি জানি, এই লোকগুলো কী ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে," বার্তাসংস্থা ইপিডিকে বলেন তিনি।
সিরিয়ার আলেপ্পোতে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন আলতুর্কি। এরপর হয়তো আইনবিদ হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারতেন। কিন্তু গৃহযুদ্ধের কারণে দেশ ছাড়তে হয় তাকে। বর্তমানে জার্মানিতে রয়েছেন তিনি৷ কাজ করছেন শরণার্থী শিবিরের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে। তবে এতে কোনো আক্ষেপ নেই তার। বরং জার্মানিতে নিজের জীবন নিরাপদে আছে সেটিই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
"আমার খুব ভাল লাগে যে, আমি এখানে নিরাপদে থাকতে পারছি। নিরাপদে থাকার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জার্মানিকে এখন আমার নিজের ঘর মনে হয়।"
জার্মানির প্রতি ভালবাসা
জার্মানিতে এসে ইন্টিগ্রেশন কোর্স এবং ভাষা শেখার পর দেশটিতে আস্তে আস্তে মানিয়ে নিতে শুরু করেন আলতুর্কি। নিজ শহরে তাকে বলা হয় জার্মানিতে আশ্রয় পাওয়ার সফল উদাহরণ। এমনকি লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের প্রধান স্টেফান ভাইলও তার বিষয়টি জানেন।
এদিকে সম্প্রতি ইউক্রেনের শরণার্থীদের জার্মানিতে আসা শুরু হওয়ার পর সমালোচনার মুখে জার্মান সরকার। সমালোচকদের দাবি, ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীদের অন্য দেশ থেকে আসাদের তুলনায় বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে জার্মান সরকার।
কিন্তু এভাবে জার্মান সরকারের সমালোচনা করতে রাজি নন আলতুর্কি। তিনি বলেন "জার্মানিতে আশ্রয় পাওয়া নিয়ে আমার কোনো সমস্যা হয়নি। এখানে আসার তিন মাস পরই আমি রেসিডেন্স পারমিট পেয়েছি। আমি জার্মানিতে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।"
শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে জার্মানির উদারতার বিষয়টি উল্লেখ করতেও ভুলেননি তিনি। তিনি বলেন, ''এই উদারতা শুধু সরকারের তরফ থেকেই নয়, সাধারণ মানুষও এগিয়ে এসেছেন। ইউক্রেনের শরণার্থীদের জন্য সাহায্য চেয়ে আবেদন করার পর সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস দিয়ে সাহায্য করেছে।"
তবে নিজের ব্যস্ততার মাঝেও সাংবাদিকদের কাছে একটি বার্তা দিতে ভোলেননি তিনি। তা হলো- শরণার্থীদের সাহায্যে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে৷
আরআর/আরকেসি (ইপিডি)