২০২১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে আশ্রয়প্রার্থী সঙ্গীহীন শিশুর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৭২ শতাংশ৷ সঙ্গীহীন ১২০০ জন অভিবাসী শিশুকে গ্রিস থেকে ইউরোপের ১৩টি দেশে পাঠানো হয়েছে৷গ্রিসের ‘ভলান্টারি রিলোকেশন প্রোগ্রাম’-এর আওতায় গত দুই বছরে এই শিশুগুলিকে স্থানান্তর করা হয়েছে৷ গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকস মিৎসোতাকিসের নয়া গণতন্ত্রী দল ২০২০ সালের এপ্রিলে এই প্রকল্প চালু করে৷
ইউরোপীয় কমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলির সাহায্যে বিশেষ সচিবালয় সঙ্গীহীন নাবালকদের বিষয়গুলি দেখে৷ এর পাশাপাশি গ্রিসে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর, গ্রিস), ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশ্রয় সংক্রান্ত সংস্থা (ইইউএএ), আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক সংস্থাও (গ্রিসের আইওএম শাখা) নাবালকদের বিষয়ে খেয়াল রাখে৷
গ্রিসের অভিবাসন এবং আশ্রয়সংক্রান্ত বিভাগের তরফে সম্প্রতি একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ইউরোপের দেশগুলি ন্যায়সঙ্গত বণ্টন এবং দায়িত্ব নিশ্চিত করতে, নিরাপদ শিশুদের যাতায়াত নিশ্চিত করতে একজোট হয়ে কাজ করবে৷ সঙ্গীহীন শিশুদের আতিথেয়তা নিশ্চিত করা হবে৷ আয়োজক দেশগুলিতে শিশুরা যাতে সহজে মিশতে পারে, সামাজিক বৈষম্যের মধ্যে না পড়ে–তা সবাই একসঙ্গে খেয়াল রাখবে৷’’
গ্রিসে দুই হাজার সঙ্গীহীন শিশু
ইউরোস্ট্যাট জানিয়েছে, আফগানিস্তান থেকে আসা শরণার্থীদের সংখ্যা গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে আচমকাই বেড়েছে৷ ফলে সঙ্গীহীন শিশুর সংখ্যাও বেড়েছে৷ গ্রিস কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যান বলছে, সেখানে সঙ্গীহীন নাবালকের সংখ্যা দুই হাজার ৩৭ জন৷ এর মধ্যে ৮৯ শতাংশ ছেলে, ১১ শতাংশ মেয়ে৷ গ্রিসের একাধিক আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে তারা৷ গ্রিসের আশ্রয়কেন্দ্রগুলিতে সবমিলিয়ে দুই হাজার ৩২০ জনের জায়গা রয়েছে এবং ১৮০টি আপৎকালীন জায়গা রয়েছে৷

ইউরোস্ট্যাট কী বলছে
২০২১ সালে ২৩ হাজার ২৫৫ জন সঙ্গীহীন নাবালক গ্রিসে আশ্রয়ের আবেদন করেছিল৷ ২০২০ সালে এই সংখ্যাটা ছিল ১৩ হাজার ৫৫০৷ ২০২১ সালে নাবালক আশ্রয়প্রার্থীদের বেশিরভাগই আফগান৷ গত বছরের আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসার পর তারা গ্রিসে পৌঁছায়৷ এদের বেশিরভাগের বয়স ১৬ থেকে ১৭৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলি দুই লাখ ৬৭ হাজার ৩৬০ জনকে গত বছর আশ্রয় দিয়েছে৷ এর মধ্যে অর্ধেকেই শরণার্থী৷ বাকিদের ক্ষেত্রে মানবিক সুরক্ষা মর্যাদা রয়েছে৷ অন্যদিকে, চার ভাগের এক ভাগ সিরীয় আশ্রয় পেতে সফল হয়েছেন ৷ এরপরই রয়েছেন আফগানিস্তান এবং ভেনেজুয়েলার থেকে আসা শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীরা৷ এদের মূল গন্তব্য হলো জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি৷ পরিসংখ্যান বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলি সঙ্গীহীন পাঁচ হাজার ৭০ জন নাবালককে আশ্রয় দিয়েছে৷ এদের মধ্যে ৩৪ শতাংশ শরণার্থী মর্যাদা পেয়েছে৷

গ্রিসে ২৫ হাজার ইউক্রেনীয়
রুশ হামলার পর গ্রিসে এসেছেন ২৪ হাজার ৯২৯ জন ইউক্রেনীয় শরণার্থী৷ এদের মধ্যে ছয় হাজার ৭২৯ জন নাবালক৷ গ্রিস আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের অস্থায়ী সুরক্ষা প্রদানের জন্য এপ্রিল মাসে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম খুলেছে৷ এথেন্স, থেসালোনিকি, পাট্রাস এবং ক্রিট দ্বীপে গ্রিসের আঞ্চলিক আশ্রয় অফিস রয়েছে৷
গ্রিসের অভিবাসন এবং আশ্রয় মন্ত্রকের ওয়েবসাইটের ঘোষণা অনুযায়ী, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আশ্রয় সংক্রান্ত দিনক্ষণ জেনে সেই অনুযায়ী নির্দিষ্ট দিনে অফিসে যেতে হবে৷

এজিয়ান সাগরে ১০০ অভিবাসী উদ্ধার
গ্রিসের উপকূলরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, শনিবার এজিয়ান সাগরের কস দ্বীপের কাছে ১০৬ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে৷ এদের মধ্যে ১৪ জন নারী এবং ২০টি শিশু রয়েছে৷ জার্মান সংবাদসংস্থা ডিপিএ জানিয়েছে, ২০ জন নাবালককে কস দ্বীপের নথিভুক্তিকরণ কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হয়৷ গ্রিক সিটি টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপকূল রক্ষীবাহিনী জানিয়েছে, তারা প্রত্যেকে সুস্থ রয়েছে৷

যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহিঃসীমান্ত হিসেবে পরিচিত গ্রিসকে বেছে নেন৷ তুরস্ক হয়ে আসা বিভিন্ন দেশের আশ্রয়প্রার্থীদের গ্রিস অবৈধভাবে ফেরত পাঠাচ্ছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের৷ এর ফলে বিভিন্ন সময়ে স্থল ও জলপথে অভিবাসী, শরণার্থীদের মৃত্যুর জন্যও দেশটিকে দায়ী করেছে একাধিক মানবাধিকার সংস্থা৷
আরকেসি/কেএম (আনসা)