স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ আসার পথে ফের দুর্ঘটনার কবলে পড়ে দুটি অভিবাসী নৌকা৷গত দুই দিনে ৭২ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে স্প্যানিশ মেরিন রেসকিউ সার্ভিস৷ গ্রান কানারিয়া থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণে আরেকটি নৌকা খোঁজ মিলেছে৷ বুধবার সকাল পর্যন্ত সেই নৌকায় আসা ২৮ জন অভিবাসীর কোনো খোঁজ মেলেনি৷
সোমবার স্পেনের মেরিন রেসকিউ সার্ভিসের দল ‘সালভামেন্তো মারিতিমো’ গ্রান কানারিয়া থেকে ১০৫ কিলোমিটার দূরে একটি অভিবাসী নৌকার সন্ধান পায়৷ ইউরোপা প্রেস এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাবারের তৈরি একটি ডিঙি নৌকা সমুদ্রে ভাসতে দেখেছিল একটি বিমান৷ সে নৌকায় অভিবাসীরা থাকতে পারেন মনে করা হয়েছিল, কিন্তু তা নিশ্চিত করা যায়নি৷
লাস পালমাসের উদ্ধারকারী কেন্দ্রর কাছে খবর পৌঁছাতেই দ্রুত ওই এলাকার কাছে থাকা বাণিজ্যিক জাহাজগুলিতে বিষয়টি জানানো হয়৷ এলাকার চারপাশ খতিয়ে দেখে উপকূলরক্ষীদের কাছ থেকে একটি হেলিকপ্টারও চাওয়া হয়৷
কমপক্ষে ২৮ জন নিখোঁজ
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম কানারিয়াস ৭ জানিয়েছে যে, আটলান্টিকের ওই এলাকায় ২৮ জন অভিবাসীর খোঁজ মিলছে না৷ তবে সংখ্যাটা আরো বাড়তে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে, কারণ গত দুইদিন ধরে উদ্ধারকাজ চলছে৷ স্পেনের সংবাদসংস্থা এফে জানিয়েছে, ১৩ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করে উদ্ধারকারী দল৷তারা প্রত্যেকেই সাহারা মরু এলাকার বাসিন্দা৷ এদের মধ্যে একজন অপ্রাপ্তবয়স্কও রয়েছে৷অভিবাসীরা জানিয়েছেন, নৌকায় মোট ৪১ জন ছিলেন৷ এফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি বিশাল ঢেউয়ের আঘাতে নৌকায় থাকা বেশিরভাগ যাত্রী সমুদ্রে ভেসে যান৷ উপকূলরক্ষীরা পৌঁছানোর আগে কমপক্ষে চার দিন অভিবাসীরা সমুদ্রে ভেসেছেন৷

হাসপাতালে অসুস্থরা
দুই জন অভিবাসীকে বিমানে করে গ্রান কানারিয়ায় নিয়ে আসা হয়৷ তাদের হাইপারথার্মিয়ার চিকিৎসা শুরু হয়েছে৷ অপর দুই অভিবাসীকে চিকিৎসার জন্য তেনেরিফে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷
এফে জানিয়েছে, উদ্ধারকারী দলের থেকে খবর পেয়ে বাণিজ্যিক জাহাজদুটি অভিবাসীদের ভারী বাতাস থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে৷ কারণ উদ্ধারকাজ চলার সময় ওই বাণিজ্যিক জাহাজ বেশি কাছে চলে এলে বিপর্যয় আরো বাড়তে পারত৷

পূর্ব লানজারোতে আরেকটি ঘটনা
মঙ্গলবার ক্যানারি দ্বীপ থেকে ৫৯ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করে আরেসিফে বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এদের মধ্যে পাঁচ জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়৷ আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, চলতি বছরের ৮ মে পর্যন্ত ক্যানারি দ্বীপে আসার পথে ২৩৯ জন অভিবাসী নিখোঁজ হয়েছেন৷ ২০২১ সালে একই পথে প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজার ১০৯ জন অভিবাসী৷
স্পেনের মানবাধিকার সংস্থা কামিনান্দো ফ্রন্তেরাস জানিয়েছে, ২০২১ সালে স্পেনে আসার পথে সব রুট মিলিয়ে মোট চার হাজার ৪০৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন৷ এদের মধ্যে বেশিরভাগ অভিবাসীই আফ্রিকার বাসিন্দা৷ তবে আসল সংখ্যাটা অনেক বেশি৷ অনেকেই পরিবারকে না জানিয়ে ক্যানারির পথে রওনা দেন৷ অনেকেই কয়েক মাস বা এমনকি কয়েক বছর ধরে জানেন না যে তাদের প্রিয়জন নিখোঁজ বা মৃত৷
সমুদ্রপথে ক্যানারির দিকে যাওয়া আটলান্টিক রুটটি তীব্র স্রোতের কারণে খুবই বিপজ্জনক৷ কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভূমধ্যসাগরে মানবপাচার ও সমুদ্র পারাপার নিয়ন্ত্রণ কঠোর হওয়ার কারণে ইউরোপে পৌঁছাতে ইচ্ছুক অভিবাসীরা এই পথটি বেশি ব্যবহার করছেন৷
আরকেসি/কেএম