স্পেনের আলমেরিয়ায় নৌকাডুবির ঘটনায় আটজন নিহত হয়েছেন। স্প্যানিশ সিভিল গার্ড বেঁচে থাকা তিনজনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। ক্রেডিট: হিরোস ডেল মার/ফেসবুক পেইজ
স্পেনের আলমেরিয়ায় নৌকাডুবির ঘটনায় আটজন নিহত হয়েছেন। স্প্যানিশ সিভিল গার্ড বেঁচে থাকা তিনজনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। ক্রেডিট: হিরোস ডেল মার/ফেসবুক পেইজ

স্পেনের আন্দালুসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে দুই নারীসহ আলজেরীয় বংশোদ্ভূত আট অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। গত ৭ মে অভিবাসীদের নিয়ে নৌকাটি সমুদ্রে নিখোঁজ হয়েছিল। নৌকায় থাকা অভিবাসীদের মধ্যে তিনজনকে আলমেরিয়া উপকূলের ১০০ কিলমিটার দূরে অবস্থিত জলসীমা থেকে উদ্ধার করে স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ।

গত ৭ মে নিঁখোজ হওয়ার আগে স্পেনের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল অভিবাসীদের বহনকারীদের নৌকাটি, অর্থাৎ স্পেনের উপকূল থেকে একশ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল তারা। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা নৌকাটি ডুবে গেলে দুই নারীসহ আট আলজেরীয় বংশোদ্ভূত অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা যান। 

স্প্যানিশ এনজিও হিরোস ডেল মার-এর প্রতিষ্ঠাতা ফ্রান্সিসকো হোসে ক্লেমেন্ট মার্টিন ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানান, “নৌকাডুবিতে নিহত ব্যক্তিদের মৃতদেহ এখনো উদ্ধার করা যায়নি।”


নৌকাডুবির ঘটনাস্থল আলমেরিয়ার উপকূল থেকে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে আলবোরান সাগর থেকে তিন ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় রেডক্রস সূত্র স্প্যানিশ সংবাদ সংস্থা ইএফআই জানায়, “একটি তাৎক্ষণিক জরুরি উদ্ধারকারী দল (ইআরআইই) বেঁচে থাকা তিনজনের দায়িত্ব নিয়েছে। উদ্ধারকৃতরা দগ্ধ থাকায় তাদেরকে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বেঁচে যাওয়াদের মধ্যে একজন ব্যক্তি নৌকাডুবিতে নিহত গর্ভবতী মহিলার স্বামী।”

ফ্রান্সিসকো হোসে ক্লেমেন্ট মার্টিনের মতে, “সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে স্পেন অভিমুখে যাত্রার সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে।”

রোববার ১৫ মে একটি নৌকায় থাকা ১৬ জন অভিবাসীর একটি দল স্পেনের অ্যালিক্যান্টের সমুদ্র সৈকতে পৌঁছেছেন যাদের সবাই আলজেরীয়। তারা আলজেরিয়ার টিপাজ্জার উপকূল থেকে দেশ ছেড়েছিলেন।

এনজিও হিরোস ডেল মার তাদের ফেসবুক পাতায় জানায়, “১৬ জন অভিবাসীর প্রত্যেকের স্বাস্থ্য ভালো আছে।”

অপরদিকে ১১ মে স্প্যানিশ সিভিল গার্ড দেশটির বেলেরিক দ্বীপপুঞ্জ থেকে দুটি নৌকায় থাকা ১৯ অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল যারা সমুদ্রেপথে আহত হয়েছিল।”

জনপ্রিয় ‘হারগা’

আলজেরিয়ায় অভিবাসন 'হারগা' নামে বেশ পরিচিত ও জনপ্রিয় হলেও মূলত গত বছর থেকেই ইউরোপ অভিমুখে যাত্রা বহুগুণ বেড়েছে। 

আলজেরিয়া নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং চাকুরি সংকটের কারণে অভিবাসন প্রত্যাশীরা দেশটির মোস্তাগানেম, টিপাজা, বোরমারডেস বা ওরান শহর থেকে ইউরোপের দিকে যাত্রা করে থাকেন।

আলজেরিয়ার মোস্তাগানেম, টিপাজা, বোরমারডেস বা ওরান উপকূলীয় অঞ্চল থেকে স্পেন অভিমুখে যাত্রা করে অভিবাসন প্রত্যাশীরা। ছবি: গুগল ম্যাপ
আলজেরিয়ার মোস্তাগানেম, টিপাজা, বোরমারডেস বা ওরান উপকূলীয় অঞ্চল থেকে স্পেন অভিমুখে যাত্রা করে অভিবাসন প্রত্যাশীরা। ছবি: গুগল ম্যাপ


স্থানীয় সংবাদমাধ্যম লিবেরতের মতে, “আবহাওয়া ভালো থাকা অবস্থায় ওরান উপকূল থেকে সমুদ্রে অভিবাসীর নৌকার ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়।”

তবে এসব অবৈধ যাত্রা প্রতিরোধে আলজেরীয় সরকার দমন-পীড়নের আশ্রয় নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে, দেশটির দণ্ডবিধির ১৭৫ ধারা দ্বারা অনুযায়ী উপকূল থেকে যেকোন অবৈধ যাত্রা নিষিদ্ধ। পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়াই অবৈধ প্রস্থানের অপরাধে সংশ্লিষ্ট আলজেরীয় ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দুই থেকে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং বিদেশীদের জন্য একই কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২০ হাজার থেকে ৬০ হাজার আলজেরীয় দিনার সমপরিমাণ অর্থ জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।  


এমএইউ/আরআর


 

অন্যান্য প্রতিবেদন