ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের এবং আফ্রিকান অভিবাসীদের সঙ্গে ভিন্ন আচরণের অভিযোগ এনে বিষয়টির তীব্র নিন্দা করেছেন রেড ক্রস (আইএফআরসি) সভাপতি৷ ইউক্রেনে রুশ হামলার পর প্রায় ৬০ লাখ নাগরিক দেশ ছেড়েছেন৷ এর মধ্যে পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি ইউক্রেনীয় শরণার্থী৷
বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক নেটওয়ার্কের প্রধানের বক্তব্য, রুশ আগ্রাসন থেকে পালিয়ে আসা ইউক্রেনীয়দের দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা অভিবাসীদের নিয়ে ইউরোপের দ্বিচারিতাকে আরো স্পষ্ট করেছে৷ আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং অন্য দেশ থেকে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা মানুষদের কিন্তু ইউরোপ এমন সাদরে গ্রহণ করেনি৷
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেড ক্রস অ্যান্ড রেস ক্রেসেন্ট সোসাইটির সভাপতি ফ্রান্সেসকো রোকা বলেন, পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস থেকে পালিয়ে আসা কিংবা নাইজেরিয়ার উগ্রবাদী গোষ্ঠী বোকো হারামের আতঙ্কে পালিয়ে আসা মানুষদের মধ্যে তো কোনো ফারাক নেই৷ বর্তমানে ১৯২টি দেশে দেড় কোটির কাছাকাছি স্বেচ্ছাসেবী আইএফআরসির হয়ে কাজ করেন৷ সেই আইএফআরসির সভাপতি ফ্রান্সেসকোর কথায়, ‘‘সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা প্রত্যেক মানুষের সুরক্ষা প্রয়োজন৷ প্রত্যেককে সমানভাবে দেখা উচিত৷’’
সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘সহিংসতা এবং বিপর্যয় থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের সাহায্যের সময় একটি নৈতিক বাধ্যতা কাজ করে৷ ইউক্রেন সংকট ঘিরে রাজনৈতিক, মানবিক এবং আমজনতার প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে দিয়েছে, মানবতা এবং মর্যাদার কথা ভাবলে, বিশ্বব্যাপী সংহতি থাকলে কী কী করা সম্ভব৷ ’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা আশা করেছিলাম, ইউক্রেনীয় শরণার্থী সংকটের কারণে ইউরোপের অভিবাসন নীতির সন্ধিক্ষণ হতে চলেছে৷ কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়৷’’ তার অভিযোগ, ইউক্রেন থেকে পূর্ব সীমান্তে এবং ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ সীমান্তে অভিবাসনের ক্ষেত্রে ২৭ সদস্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতি এখনও ভিন্ন৷ জিল বিল্ডেন ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের সঙ্গে দেখা করে বলেন, ‘‘এই শরণার্থীরা মানসিকভাবে অত্যন্ত দৃঢ়৷ ’’
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানাচ্ছে, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর পোল্যান্ডে প্রায় ৩৩ লাখ শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন৷ রোমানিয়ায় গিয়েছেন প্রায় ৯ লাখ শরণার্থী, হাঙ্গেরিতে গিয়েছেন ছয় লাখ পাঁচ হাজার শরণার্থী, মলদোভায় চার লাখ ৬৩ হাজার শরণার্থী আশ্রয় পেয়েছেন৷ স্লোভাকিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় চার লাখ ২১ হাজার শরণার্থী৷
এই প্রসঙ্গে রোকা বলেন, ‘‘ইউরোপে যাওয়ার পথে অভিবাসী, শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের অনেক সময় মৃত্যু হয়, কখনও তারা খারাপ আচরণের শিকার হন, প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলি পেতে রীতিমতো লড়াই করতে হয়৷ ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সমুদ্রপথে ইউরোপে আসতে গিয়ে ৪৮ হাজার অভিবাসী প্রাণ হারিয়েছেন৷ ভূমধ্যসাগরীয় বিপজ্জনক পথটি বেছে নেন অনেকেই৷ শুধু এই রুটেই গত আট বছরে প্রাণ হারিয়েছেন ১৯ হাজার অভিবাসী৷’’

রোকার কথায়, ‘‘ইউরোপে একটি বড় হৃদয় এবং আত্মা রয়েছে৷ দুই হাত বাড়িয়ে লাখ লাখ ইউক্রেনীয়দের আশ্রয় দিয়েছে ইউরোপের দেশগুলি৷ সুতরাং ভূমধ্যসাগরীয় পথে আসা মাত্র কয়েক হাজার অভিবাসী আসার ফলে সংকটের বিষয়টি নিয়ে তারা মিথ্যাচার করছে৷ সংকটকালে জীবন বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় জাতি এবং নির্দিষ্ট কোনো দেশের নাগরিক হওয়া কোনোভাবেই ‘ফ্যাক্টর’ হতে পারে না৷ দ্বিচারিতা রয়েছে৷ এটাই প্রমাণ৷ নিজের চোখে আমরা দেখতে পাচ্ছি৷ সুরক্ষা চাওয়ার বিষয়টি যখন আসে, তখন এটা অস্বীকার করার উপায় নেই৷’’

নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল অভিবাসন প্রচার এবং মানবপাচার কমাতে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে গ্লোবাল কমপ্যাক্টের প্রথম পর্যালোচনার জন্য রোকা জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ছিলেন৷ অভিবাসন সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য সেটিই ছিল বিশ্বের প্রথম নথি৷ ১৯০টিরও বেশি দেশ এতে স্বাক্ষর করেছে৷ তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এটি বয়কট করেছিল৷
রোকা বলেন, ‘‘গ্লোবাল কমপ্যাক্টের দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রতিশ্রুতিগুলি বুঝতে দীর্ঘ সময় লাগবে৷নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ অভিবাসন নিশ্চিত করতে সরকারগুলি তাদের নীতি পরিবর্তন করতে ব্যর্থ৷ এর ফলে অনেক অভিবাসী প্রাণ হারিয়েছেন৷ সরকারের অভিবাসন নীতি নির্ধারণ এবং দেশের সীমানা পরিচালনা করার অধিকার অবশ্যই রয়েছে৷ কিন্তু সেটা এমনভাবে তারা করতে বাধ্য যাতে মৃত্যুকে আটকানো যায়৷’’আ
আরকেসি/আরআর (এপি)