গত ৬ মে থেকে গ্রিসের সামোস দ্বীপের শরণার্থী শিবিরে পানির সংযোগ বিছিন্ন রয়েছে। ক্যাম্পে থাকা অভিবাসীরা তাদের দৈনিক পানির চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন জনপ্রতি মাত্র সাড়ে চার লিটার পানি পাচ্ছেন। গ্রিক অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের মতে, একটি পাম্প কেটে যাওয়ায় এই ত্রুটি দেখা দিয়েছে।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গ্রিসের সামোস দ্বীপে কড়া নজরদারিতে থাকা শরণার্থী শিবিরটি খোলা হয়েছিল। সে সময় কট্টর অভিবাসন বিরোধী-সহ গ্রিস কর্তৃপক্ষ এটিকে ইউরোপের জন্য আদর্শ অভিবাসী ক্যাম্প হিসাবে আখ্যা দিয়েছিল। এই শিবির খোলার পর থেকে এর কাঠামোগত অসঙ্গতি ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নিন্দা জানিয়েছিল একাধিক অধিকার সংগঠন।
খোলার পর থেকেই এই শরণার্থী শিবিরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। সর্বশেষ, ৬ মে থেকে, শিবিরের ৪০০ বা তার বেশি আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়মিত ব্যবহারের পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শুধুমাত্র সকালে এক ঘণ্টা ও সন্ধ্যায় এক ঘণ্টার জন্য সংযোগটি সাময়িকভাবে চালু করা হয়। এছাড়া অন্যান্য ব্যবহারের জন্য জনপ্রতি দৈনিক সাড়ে চার লিটার হিসেবে অত্যন্ত সীমিত আকারে পানি দেয়া হচ্ছে।
সামোস অ্যাডভোকেসি কালেকটিভের একজন সদস্য ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানিয়েছেন, “শিবিরে থাকা অনেক অভিবাসীরা বলেছেন, আসলে পুরো এক ঘণ্টা নয়, বরং ২০ বা ৩০ মিনিটের জন্য চালু করা হচ্ছে।”
পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার উৎস সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চান গ্রিসের একজন সাংবাদিক৷ কর্তৃপক্ষ জানায়, ক্যাম্পে পানি সরবরাহকারী একটি পাম্প নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে এমন হয়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী স্যানিটারি ফিটিংস পণ্যের সংকট দেখা দেয়ায় দ্রুত গতিতে ত্রুটিপূর্ণ অংশটি মেরামত করা মুশকিল হয়ে পড়েছে।
ক্যাম্পে থাকা আশ্রয়প্রার্থীরা এখন জনপ্রতি প্রতিদিন তিন বোতল বা সাড়ে চার লিটার পানি পাচ্ছেন। যেটি একজন ব্যক্তির সমস্ত দৈনিক পানীয় জলের চাহিদা (পানীয়, রান্না, স্বাস্থ্যবিধি, ইত্যাদি) পূরণ করার জন্য অপর্যাপ্ত।
যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে একজন একজন মানুষের মৌলিক পানির চাহিদা প্রতিদিন ২০ লিটার।
প্রতিদিন শিবিরে পানির বোতল বিতরণ কার্যক্রম সম্পূর্ণ করতে, গ্রিক কর্তৃপক্ষ শিবিরে আলাদা পানির ট্যাঙ্ক সরবরাহের পরিকল্পনা করছে।
ইনফোমাইগ্রেন্টস ১৬ মে অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের একটি নথি দেখে৷ সেখানে দেখা গেছে, সামোস দ্বীপে আগামী দিনগুলির ক্যাম্পের জন্য ৩০০ ঘনমিটার পানীয় জল বিতরণের কথা উল্লেখ রয়েছে।
অপরদিকে এই পরিস্থিতিতে, অভিবাসন সংস্থা ও এনজিওগুলোও তাদের সাধ্য অনুযায়ী শিবিরে সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
সামোস অ্যাডভোকেসি কালেকটিভ যৌথভাবে সোমবার গ্রিক অভিবাসন মন্ত্রণালয় এবং ইউরোপীয় কমিশনকে পরিস্থিতির ভয়াবহতা ও তীব্রতা সম্পর্কে সতর্ক করতে একটি ইমেল পাঠিয়েছে।
পানীয় জলের অভাব এবং স্বাস্থ্যবিধির সংকটের ফলে ক্যাম্পে বসবাসকারী আশ্রয়প্রার্থীদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে৷
দ্বীপের এনজিও ও অভিবাসন সংস্থাগুলো নিশ্চিত করেছে, “গত সপ্তাহে দ্বীপে আসা নতুন ৩৩ জন আশ্রয়প্রার্থী এখনও গোসল করতে পারেনি।”
তবে এসব অভিযোগের পরও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নতুন করে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টিত বিতর্কিত ক্যাম্প নির্মাণের জন্য গ্রিসকে ২৭৬ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করেছে। নতুন এসব ক্যাম্পে একটি ভিডিও নজরদারির ব্যবস্থা, ডিজিটাল প্রবেশদ্বার এবং উচ্চ কাঁটাতারের বেড়া রাখা হবে বলে জানা গিয়েছে।
এমএইউ/আরকেসি