গত বৃহস্পতিবার ওশান ভাইকিং জাহাজ মধ্য ভূমধ্যসাগর থেকে অভিবাসীদের দুটি দলকে উদ্ধার করে৷ সিসিলিতে জিও ব্যারেন্টস থেকে নামতে বাধা দেয়ায় বেশ কয়েকজন অভিবাসী সমস্যায় পড়েন৷
১৯ মে ভূমধ্যসাগর থেকে প্রায় ১৬০ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করে একটি ব্যক্তিগত জাহাজ৷ সমুদ্রে চলাচলের অনুপযুক্ত একটি নৌকায় তারা ইটালিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করে৷
বেসরকারি সংস্থা এসওএস মেডিটেরানি জানিয়েছে, ওশান ভাইকিং জাহাজটি লিবিয়ার অংশ থেকে ও অন্য একটি এলাকার রাবার বোট থেকে অভিবাসীদের উদ্ধার করে৷ নৌকাদুটিতে মারাত্মক ভিড় ছিল, যে কোনো মুহূর্তে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ছিল৷
উদ্ধার হওয়া ১৫৮ জনের মধ্যে ছয় জন অন্তঃসত্ত্বা এবং তিন মাসের এক শিশুও ছিল৷প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, অভিবাসীরা সমুদ্রে নয় ঘণ্টা পর্যন্ত ভেসে থাকতে বাধ্য হন৷ অনেকে তাপমাত্রার কারণে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন৷ অভিবাসীদের অনেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছেন৷
জিও ব্যারেন্টস থেকে অবতরণ স্থগিত
মধ্য ভূমধ্যসাগরে আরেকটি জাহাজ, জিও ব্যারেন্টস, ৪৭০ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করে৷ এক সপ্তাহ সমুদ্রে অপেক্ষা করার পরে সিসিলিতে অবতরণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল উদ্ধারকারী জাহাজটিকে৷ কিন্তু বৃহস্পতিবার ইটালি কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ ছাড়াই অবতরণে বাধা দেয়৷ ২৩৮ জন অভিবাসী-সহ জাহাজটি শুক্রবারেও সমুদ্রে ভাসতে বাধ্য হয়৷
ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) টুইট করেছে, শুক্রবার সকালে ছয়জন অভিবাসী ‘১১ দিনের অন্যায় অপেক্ষা’র পর হতাশায় ঝাঁপ দেন সমুদ্রে৷ যারা জাহাজে রয়ে গিয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকেরই হাত-পা ভাঙা৷ একজন ডায়াবেটিসের রোগীও রয়েছেন৷ এই সপ্তাহের শুরুর দিকে এমএসএফ জানায়, জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের বেশিরভাগ লিবিয়ায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷

জিও ব্যারেন্টসের জনসংযোগ অফিসার আনা প্যানটেলিয়া ইনফোমাইগ্রেন্টস (ফরাসি) কে জানান, কেন অবতরণ বন্ধ করা হয়েছে, তারা জানেন না।
তিনি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার বিকেলে, যখন আমাদের ফিরে যেতে বলা হয়েছিল তখন আমরা প্রায় অর্ধেক অভিবাসীকে সেখানে নামিয়ে দিয়েছি৷ কেন এমন করা হল হল, তা নিয়ে আমাদের কোনো তথ্য দেয়া হয়নি।’’ তিনি বলেছিলেন, শনিবার পর্যন্ত পর্যাপ্ত খাবার এবং জল রয়েছে৷

টিউনিশিয়ায় নৌকাডুবি
মধ্য ভূমধ্যসাগরের রুটটি বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত৷গত বছর এই রুটে অন্তত এক হাজার ৫৫৩ জন নিখোঁজ বা মৃত হিসাবে নিবন্ধিত হয়েছেন৷ প্রকৃত সংখ্যাটি আরো অনেক বেশি, কারণ লিবিয়া এবং টিউনিশিয়ার উপকূল থেকে আসা অনেক অভিবাসীরই খোঁজ মেলেনি৷
শুক্রবার, ৫০ জনেরও বেশি যাত্রী বহনকারী আরেকটি নৌকা টিউনিশিয়ার স্ফ্যাক্স উপকূলে ডুবে যায়৷টিউনিশিয়া কর্তৃপক্ষ জানায়, তিন জনের মৃত্যু হয়েছে, ১০ জনের কোনো খোঁজ মেলেনি৷ ৪৪ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়৷
স্ফ্যাক্স হল টিউনিশিয়া এবং অন্য আফ্রিকান অভিবাসীদের ইউরোপে পৌঁছানোর অন্যতম প্রস্থানদ্বারেরমধ্যে একটি৷বছরের উষ্ণ মাসগুলিতে, বিপজ্জনক পথ পেরিয়ে আসা অভিবাসীদের সংখ্যা সাধারণত বাড়ে৷ এর ফলে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ে৷
মে মাসের শুরুতে, টিউনিশিয়া কর্তৃপক্ষ ২৪ জনের দেহ উদ্ধার করে৷ এই অনিয়মিত অভিবাসীরা ২২ থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এই পথ পেরোনোর চেষ্টা করেছিল৷ তাদের নৌকাগুলিও স্ফ্যাক্সে ডুবে গিয়েছিল৷ মৃতদের দেহ শহরের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এই মর্গে ইতিমধ্যে অসংখ্য অভিবাসীদের দেহ রয়েছে৷
আরকেসি/ আরআর (এএফপি/ ডিপিএ)