২০২০ সাল থেকে সমুদ্রপথে মাল্টায় আসা অভিবাসীদের সংখ্যা কমেছে ৷ সে দেশের অভিবাসী কেন্দ্রগুলি খালি হয়ে যাচ্ছে। ইউরোপের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদ্ধারকাজ ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছে এই দ্বীপ কর্তৃপক্ষ৷
মাল্টার অভিবাসী কেন্দ্রগুলিতে বরাবর উপচে পড়া ভিড় লেগেই থাকতো৷ কখনো তা একেবারে খালি হয়ে যায়নি। ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন রিফিউজিস অ্যান্ড এক্সাইলস (ইসিআরই)-এর রিপোর্ট অনুসারে গত বছরের শেষে অভিবাসী কেন্দ্রগুলির মোট ধারণক্ষমতার প্রায় ২৬ শতাংশ ভর্তি ছিল (দুই হাজার ৬৪০ জন) ৷
কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০২১ সালে কেন্দ্রগুলিতে মাত্র ৮৩৮ জন এসেছিল৷ জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত বছর মাল্টায় সমুদ্রপথে প্রবেশ করেছিল ৮৩২ জন, অর্থাৎ সংখ্যাটা প্রায় সমান৷ ২০১৯ সাল থেকেই মাল্টায় অভিবাসীদের আগমন কমেছে৷
২০১৯ সালে সুদান, ইরিত্রিয়া এবং নাইজেরিয়ার মোট তিন হাজার ৪০৬ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়৷ তাদের মাল্টায় নামার অনুমতি দেয়া হয়েছিল৷ পরবর্তীতে অভিবাসী কেন্দ্রে থাকা আবাসিকের সংখ্যাটা দাঁড়ায় দুই হাজার ২৮১ জনে৷ ২০২০ সালে মাল্টার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট আবেলা বলেন, দেশে আর কোনো অভিবাসীকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব নয়৷
যদি এখনও বিষয়টা তাই হয়. তাহলে মাল্টা এই বছর লক্ষ্যপূরণে সার্থক৷ জাতিসংঘ জানিয়েছে, চলতি বছরে এখনো পর্যন্ত মাত্র একজন অভিবাসী এসেছেন মাল্টায়৷ ইটালি, গ্রিস, স্পেন, সাইপ্রাস, মাল্টা মিলিয়ে সংখ্যাটা মোট ৩০ হাজার ৪৭ জন৷
উদ্ধারকাজ কমেছে
ছোট দ্বীপে কম অভিবাসী আগমনের মানে হল লিবিয়া থেকে আসা অভিবাসী নৌকাগুলিকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে৷ কারণ এখানে সাধারণত লিবিয়া থেকেই বেশিরভাগ অভিবাসী আসেন। মাল্টার সশস্ত্র বাহিনী আচমকা উদ্ধারকাজ কমিয়ে দিয়েছে, রিপোর্টে জানিয়েছে ইসিআরই৷
একাধিক এনজিও-র দাবি, লাম্পেডুসার দক্ষিণে কোনোরকম উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে না মাল্টা ৷ বরং তার বদলে লিবিয়ায় অভিবাসী নৌকাগুলি ফেরত পাঠাতে মূলত বাণিজ্যিক জাহাজ এবং সে দেশের উপকূলরক্ষী বাহিনীর উপর নির্ভর করছে তারা ৷ ইসিআরই রিপোর্ট বলছে, ‘‘দ্বীপের এসএআর জোনে নৌকা প্রবেশ করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এবং পুশব্যাকের একাধিক ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে।’’
পাশাপাশি, এনজিও-র জাহাজগুলি সমুদ্র থেকে যে অভিবাসীদের উদ্ধার করেছিল, তাদের দ্বীপে নামার অনুমতি দেয়নি মাল্টা। চলতি মাসের শুরুর দিকে, লিবিয়া এবং মাল্টিজ এসএআর এলাকায় সাতটি অভিযানে ৪৭১ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করে মানবাধিকার সংগঠনের জাহাজ জিও বারেন্টস৷ কিন্তু ভ্যালেটা কর্তৃপক্ষ তাদের উদ্ধারে সহায়তা করেনি৷ জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের বন্দরে নামারও অনুমতি দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ৷

উদ্ধার হওয়া শতাধিক অভিবাসীকে মাল্টার উপকূলে ক্যাপ্টেন মর্গান জাহাজে স্থানান্তর করা হয় | ছবি: পিকচার-অ্যালায়েন্স/এপি
প্রতিকূল পরিস্থিতি
ইসিআরই রিপোর্ট অনুসারে, অভিবাসীদের জন্য নেয়া নীতিগুলির কোনো বদল হয়নি, বরং আরো অবনমন হয়েছে৷
হাল ফারের মতো উন্মুক্ত অভিবাসী কেন্দ্রগুলিতে অবস্থার ‘সামান্য উন্নতি’ হয়েছে, তবে কাউন্সিল অফ ইউরোপ এবং জাতিসংঘের দুটি প্রতিবেদনে এই কেন্দ্রগুলির পরিস্থিতি ‘বিপজ্জনক" হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে৷
কোভিড মহামারির সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে দাবি করা ব্যক্তি-সহ সমস্ত আশ্রয়প্রার্থী মাল্টায় পৌঁছানোর পরই তাদের আটক কেন্দ্রে আলাদা করে রাখা হয়েছিল৷
তখন থেকেই আটক কেন্দ্রগুলিতে, ১৮ বছরের কম বয়সি ছেলেদের প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের সঙ্গে আটকে রাখা হচ্ছে। চলতি বছরের ১০ এপ্রিল জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) একটি বিবৃতিতে এই বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছিল৷ সেখানে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছিল যে সাফি ডিটেনশন সেন্টারেও একই পদ্ধতিতে অভিবাসীদের আটকে রাখা হয়৷

গৃহহীন বেড়েছে
ইসিআরই রিপোর্ট অনুযায়ী, জায়গা থাকা সত্ত্বেও উন্মুক্ত কেন্দ্রগুলি থেকে অভিবাসীদের উচ্ছেদ অব্যাহত। যে সব আশ্রয়প্রার্থী ‘অরক্ষিত নয়’ বলে বিবেচিত, তারা পরিবারের জন্য সর্বোচ্চ ছয় মাস বা এক বছর থাকতে পারবেন। ইসিআরই জানিয়েছে, কাজ খুঁজে পাওয়ার জন্য যে টুকু ভাষা জানা উচিত, এই সময়ে তা শেখা সম্ভব নয়৷ তাই অনেককে অস্থায়ী কাজই বেছে নিতে হয়।"
একটি নতুন নীতির দ্বারা পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে৷ এর ফলে তথাকথিত নিরাপদ দেশগুলি থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীরা প্রথম নয় মাস শ্রমবাজারে প্রবেশ করতে পারছেন না৷
রিপোর্ট বলছে, "এই ব্যক্তিরা আইনত কাজ করতে সক্ষম হওয়ার আগেই উন্মুক্ত কেন্দ্র থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে তাদের।"

প্রত্যাখ্যানের হার অনেক বেশি
মাল্টায় সুরক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তির হারও কমছে। গত বছর কর্তৃপক্ষ ৬৯১ জনের আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যান করে৷ মূলত অগ্রহণযোগ্য হিসাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল তাদের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রত্যাখানের কারণ স্পষ্ট নয়৷
তবে মাল্টা যেগুলিকে নিরাপদ দেশ বলে মনে করে, যেমন বাংলাদেশ, মিশর এবং মরক্কো–সেখানকার বিপুল সংখ্যক আবেদনকারীকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।
যাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, তারা নিজের দেশে ফেরার আগে ১৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে মাল্টায় আটক রয়েছেন৷ যদিও ‘টাইমস অফ মাল্টা’ রিপোর্ট করেছে, জাতীয় আইনে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য সর্বাধিক নয় মাসের আটকের কথা বলা হয়েছে৷
আরকেসি/এসিবি (ইনফোমাইগ্রেন্টস)