ফরাসি জাতীয় আশ্রয় আদালত সিনডিএ তে ৭৪৪৭ টি আপিল আবেদন নিয়ে শীর্ষে আছেন বাংলাদেশিরা। তবে গত বছর থেকেই বাংলাদেশিদের বহু আপিল আবেদন শুনানি ছাড়াই প্রত্যাখ্যান করেছে আদালত। এ নিয়ে গত ১৯ মে আদালতের কাছে চিঠি দিয়েছেন প্যারিসের সংসদ সদস্য দানিয়েল অবোনো। চিঠিতে তিনি বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীদেরদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
ফরাসি জাতীয় আশ্রয় আদালত সিএনডিএ এর ২০২১ সালের বার্ষিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আদালতে সর্বোচ্চ আপিল আবেদন দায়ের করা দেশের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছেন বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীরা। তবে আদালত থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে আছেন তারা।
সুরক্ষায় এগিয়ে আফগানিস্তান, পিছিয়ে ভারত
২০২১ সালে ফরাসি আশ্রয় আদালতে ৮১৫০টি আপিল আবেদনের রায়ের বিপরীতে মাত্র ৯৯৬ জন বাংলাদেশি রিফিউজি স্ট্যাটাস (শরণার্থী মর্যাদা) ও সাবসিডিয়ারি প্রেটেকশন (অস্থায়ী সুরক্ষা মর্যাদা) পেয়েছেন। যা মোট আবেদনের মাত্র ১২,২ শতাংশ।
পড়ুন>> ইউরোপে রিফিউজি স্ট্যাটাস ও সাবসিডিয়ারি প্রোটেকশনের মধ্যে পার্থক্য কী?
আশ্রয় আদালত থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পাওয়ার ক্ষেত্রে পুরো তালিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো উভয় দিকেই এগিয়ে আছেন আফগান শরণার্থীরা। ২০২১ সালে আফগানদের পক্ষে মোট ২৯৯৫টি ইতিবাচক রায় দেয় আদালত, যা মোট রায়ের ৬৬,৯ শতাংশ।
সুরক্ষা পাওয়ার দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানের পর এগিয়ে আছে শ্রীলঙ্কা। ২০২১ সালে দেশটির ২২৫০ জনকে সুরক্ষা মর্যাদা দিয়েছে আদালত। যা মোট রায়ের বিপরীতে ২২,৭ শতাংশ।
পড়ুন>> ২০২১ সালে সপ্তম শীর্ষ রেমিট্যান্স গ্রহীতা বাংলাদেশ
সিএনডিএ প্রদত্ত রায়ের ইতিবাচক সিদ্ধান্তের হার বিবেচনায় আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার পরই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান। এছাড়া নেপাল (৯,৪ শতাংশ), পাকিস্তান (৬,২ শতাংশ) ও ভারত (২,৬ শতাংশ) ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়ে যথাক্রমে চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে রয়েছেন এই তিন দেশের আশ্রয়প্রার্থীরা।
বাংলাদেশিদের আপিল আবেদন স্বয়ংক্রিয় প্রত্যাখ্যান নিয়ে চিঠি
সাধারনত রাষ্ট্রহীন ও শরণার্থীদের সুরক্ষার জন্য নির্ধারিত ফরাসি দপ্তর অফপ্রা থেকে প্রাথমিক আশ্রয় আবেদন খারিজ হয়ে গেলেই আশ্রয় আদালত সিএনডিএ তে আপিলের সুযোগ থাকে। নিয়ম অনুযায়ী সিএনডিতে তিনজন অথবা একজন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত আদালতে শুনানিতে সংশ্লিষ্ট আশ্রয়প্রার্থীকে ডাকা হয়।

কিন্তু গত বছর থেকে অজ্ঞাত কারণে বাংলাদেশিদের আপিল আবেদন কোনো প্রকার শুনানি ছাড়াই স্বয়ংক্রিয় প্রত্যাখ্যান করা শুরু করে আশ্রয় আদালত। ভুক্তভোগী আশ্রয়প্রার্থীরাসহ অনেক অধিকার কর্মী ও আইনজীবীরা এ নিয়ে ইনফোমাইগ্রেন্টসের কাছে আদালতের দ্বিচারিতা নিয়ে অভিযোগ করেন।
কিন্তু সিএনডিএ ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াসবেল দেলি ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেছিলেন, বাংলাদেশিদের লক্ষ্য করে পদ্ধতিগতভাবে স্বয়ংক্রিয় প্রত্যাখানের কোন আইনি সিদ্ধান্ত আদালাত নেয় নি।
পড়ুন>> ফরাসি আশ্রয় আদালতে আপীলের বিষয়ে আপনার যা জানা উচিত
এ বিষয়টি নিয়ে গত ১৯ মে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠি দিয়েছেন প্যারিসের ১৭ নং সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য ও সংসদে ফ্রাঙ্কো-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের প্রেসিডেন্ট দানিয়েল অবোনো। তিনি চিঠিতে অফপ্রাতে আশ্রয় আবেদন করা বাংলাদেশিদের অনুবাদ, প্রশাসনিক সহায়তা বিভিন্ন সমস্যাসহ ইউরোপীয় আইনের বেশ কিছু ধারা উল্লেখ করেছেন। যার ফলে ভুক্তভোগী আশ্রয়প্রার্থীরা তাদের সমস্যার কথা আদালতে শুনানিতে উপস্থিত হয়ে তুলে ধরার অধিকার বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে যুক্তি দিয়েছেন।
শুনানি ছাড়াই স্বয়ংক্রিয় প্রত্যাখ্যানের ক্ষেত্রে একজন আপিল আবেদনকারী নিজেকে আদালতের সামনে উপস্থিত হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হোন বলে ইনফোমাইগ্রেন্টসের কাছে মন্তব্য করেছেন বৃহত্তর প্যারিস অঞ্চলের আওতাধীন হউ-দ্য-সেইন বা ৯২ ডিপার্টমেন্টের বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত আইনজীবী সুহিলা নাদুরসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী।
স্বয়ংক্রিয় প্রত্যাখ্যানের হার ৩১ শতাংশ
সিএনডিএ তাদের ব্যাখ্যায় জানায়, অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রথম পর্যায়ে কারো আশ্রয় আবেদন অফপ্রা থেকে প্রত্যাখ্যাত হলে এবং সেই আশ্রয় আবেদনে নির্দিষ্ট ও গুরুতর কোনো তথ্য ও উপাদান খুঁজে পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে শুনানিতে ডাকা ছাড়াই আদালত একটি অর্দোনোন্স বা প্রত্যাখ্যান জারি করে থাকে।

২০২১ সালের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে আশ্রয় আদালতে মোট দেয়া রায়ের প্রায় ৩১ শতাংশ রায় ‘অরদোনোন্স’ বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রত্যাখান করা হয়েছে। গত বছর মোট ২০৯৬৭টি আপিল আবেদনের রায় দেয় ফরাসি জাতীয় আশ্রয় আদালত সিএনডিএ। যার মধ্যে ৬৯ শতাংশ আপিল আবেদন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শুনানির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।
পড়ুন>> ফ্রান্সে আশ্রয়প্রার্থীরা কেমন আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন?
তবে সিএনডিএ এর বার্ষিক প্রতিবেদনে দেশভিত্তিক কত শতাংশ আবেদন শুনানি ছাড়াই রায় দেয়া হয়েছে সেটি উল্লেখ করা হয় নি।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে ২৫ মে সিএনডিএ ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসাবেল দেলির সাথে কথা বলে ইনফোমাইগ্রেন্টস বাংলা। তবে তিনি জানান, আশ্রয় আদালতের পক্ষ থেকে দেশভিত্তিক নির্দিষ্ট করে কত শতাংশ আবেদন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এবং শুনানি ছাড়াই সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে সেটি নিয়ে আলাদা কোন পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয় না।
এর ফলে ঠিক কত শতাংশ বাংলাদেশিদের আবেদন এই নিয়মে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে সেটি জানা না গেলেও চলতি বছরও বহু আপিল আবেদনের একই প্রক্রিয়ায় রায় দেয়া হচ্ছে বলে ইনফোমাইগ্রেন্টসের কাছে অভিযোগ করেছেন আশ্রয়প্রার্থীরা।
এমএইউ/এআই