সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্নে দ্বিতীয়বারের মত অনুষ্ঠিত হল 'শরণার্থীদের সংসদ' নামে একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ। প্রতি বছর সুইজারল্যান্ড বসবাসরত বিভিন্ন জাতীয়তার কয়েক ডজন শরণার্থীকে নিয়ে এই প্রতীকী সংসদের আয়োজন করা হয়ে থাকে।
সুইজারল্যান্ডের চার প্রান্ত থেকে আসা দশটি ভিন্ন জাতীয়তার প্রতিনিধিত্বকারী ৯০ জন শরণার্থীকে নিয়ে ৮ ই মে দেশটির বার্ন শহরের টাউন হলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল 'শরণার্থীদের প্রতীকী সংসদ।'
বার্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের সহায়তায় দ্বিতীয়বারের মত অনুষ্ঠিত এই প্রতীকী সংসদের লক্ষ্য ছিল, সংশ্লিষ্ট শরণার্থীদের বিভিন্ন সুপারিশ ও অভিজ্ঞতা যেন সুইস সমাজে ইন্টিগ্রেশন এবং আশ্রয়ের অধিকার আইনে কাজে লাগানো যায়।
আন্তর্জাতিক এনজিও ন্যাশনাল কোয়ালিশন বিল্ডিং ইনস্টিটিউটের (এনসিবিআই) সহ-পরিচালক আন্দি গিও সুইস সংবাদমাধ্যম লুসিফাইকে বলেন, ''এনসিবিআই-এর সুইস শাখা সংস্থাটির 'আওয়ার ভয়েসে' প্রকল্পের মাধ্যমে এই উদ্যোগের আয়োজন করে। অংশ নেয়া শরণার্থীরা তাদের নিজস্ব অবস্থান ও ইন্টগ্রেশন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। তারা জানেন ভবিষ্যতে তাদের জন্য সুইস সমাজে আরও ভালো সম্ভাবনা থাকা দরকার।
আয়োজকদের সূত্র আরও জানায়, প্রতীকী সংসদে অংশ নেয়া শরণার্থীদের সুইজারল্যান্ডের রাজনীতি, আইন ও সমাজ সে সম্পর্কে যে জ্ঞান সেটি সুইস নাগরিকত্ব পেতে যে পরিমাণ জ্ঞানগত দক্ষতার প্রয়োজন হয় তার চেয়ে অনেক বেশি।
সুপারিশ গেল সুইস সংসদে
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) জানায়, “একটি সাধারণ সংসদের মতো, অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে আইনি প্রস্তাবগুলি প্রস্তুত করা হয়। যা পরে পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে উপস্থাপন করা হয় এবং ভোটাভুটিতে নিয়ে যাওয়া হয়।"
অবশ্য ৮ মে প্রতীকী সংসদের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন শুরুর আগে অন্যান্য অনেক এনজিও ও সংশ্লিষ্ট শরণার্থীদের বেশ কয়েকটি অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
এসব সভায় প্রতীকী সংসদে প্রস্তাবিত আইনগুলি পরিমার্জিত করার জন্য প্রায় দশটি বিষয়ভিত্তিক কমিশন গঠন করে নিজেদের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
পড়ুন>> সুইজারল্যান্ডে আশ্রয় কেন্দ্রে র্নিযাতনের শিকার শরণার্থীরা, অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন
এই ২০২২ সেশনের প্রতীকী সংসদ শেষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে মোট দশটি প্রধান সুপারিশ গৃহীত হয়। যেখানে রয়েছে ইউক্রেন থেকে আসা সব দেশের শরণার্থীদের একই ভাবে দেখা ও সুবিধা দেয়া, সাধারণ আশ্রয়পদ্ধতির মধ্য দিয়ে না গিয়েও ইউক্রেন থেকে আসাদের সর্বোচ্চ এক বছরের নবায়নযোগ্য বসবাসের অনুমতি দেয়া ইত্যাদি।
শরণার্থীদের প্রতীকী সংসদে গৃহীত সুপারিশগুলি সুইস সংসদ সদস্যদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া প্রতীকী সংসদের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বেশ কিছু নির্বাচিত সংসদ সদস্য অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত পরিবেশবিদ লিজা মাজোন, স্থানীয় ক্যান্টনের উচ্চকক্ষ হিসেবে পরিচিত কাউন্সিল অফ স্টেটস এর প্রতিনিধি বিখ্যাত সোশ্যালিস্ট রাজনীতিবিদ মোস্তফা আতিসি এবং স্থানীয় বাসেল-সিটির ক্যান্টনের নিম্নকক্ষের একজন প্রতিনিধি।
মূলধারায় শরনার্থীদের বক্তব্য তুলে ধরা
২৫ বছর বয়সী আফগান নারী এবং শরণার্থী সংসদের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নাহিদ হায়দারির উদ্ধৃতি দিয়ে ইউএনএইচসিআর জানায়, “লোকেরা সর্বদা আমাদের নিয়ে কথা বলে, কিন্তু সরাসরি আমাদের সাথে নয়। আমাদের কণ্ঠগুলো সবসময় রাজনৈতিক বিতর্কগুলোতে অনুপস্থিত থাকে। কারণ সক্রিয় উপস্থিতির জন্য নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ এবং নাগরিকত্ব পাওয়ার মতো আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।”
এই সংসদের মাধ্যমে এবার শরনার্থীরা তাদের দাবি সুইস সংসদ ও মূলধারায় ছড়িয়ে দিতে চান।
ইরিত্রিয়া থেকে আসা ৩৪ বছর বইসি স্লাদিন রোমোদান বলেন, “যতদিন আমি সুইজারল্যান্ডে আছি, আমি আমার ভবিষ্যত এবং আমার সন্তানদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাই।”
পড়ুন>>ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের সাহায্য করতে নাজেহাল ধনী সুইজারল্যান্ড
তিনি ২০১৬ সাল থেকে তার স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে নিয়ে সুইজারল্যান্ডে বসবাস করছেন।
লুসিফাই এর সাথে সাক্ষাৎকারে এনসিবিআই এর সহ পরিচালক আন্দি গিও বলেন, “প্রায়শই, প্রতীকী সংসদে উপস্থিত জনসাধারণ অবাক হয়ে দেখে যে, অত্যন্ত গঠনমূলকভাবে এসব শরনার্থীরা তাদের দাবিদাওয়া ও সুপারিশগুলো তুলে ধরছে।”
ভবিষ্যতে আয়োজকরা প্রতিটি সুইস ক্যান্টনে একই ধরনের শরণার্থী সংসদের আয়োজন করতে চান।
মূল প্রতিবেদন মায়া কুর্তুয়া। ফরাসি থেকে ভাষান্তর মোহাম্মদ আরিফ উল্লাহ।
এমএইউ/আরআর