সিরীয় তরুণী আয়া আবো দাহেরকে দেশে ফেরত পাঠাতে চেয়েছিল ডেনিশ সরকার৷ ছবিতে আয়া আবো দাহেরকে তার স্কুলের প্রিন্সিপালের সাথে দেখা যাচ্ছে৷ ফটো: রাহিমা আবদুল্লাহ
সিরীয় তরুণী আয়া আবো দাহেরকে দেশে ফেরত পাঠাতে চেয়েছিল ডেনিশ সরকার৷ ছবিতে আয়া আবো দাহেরকে তার স্কুলের প্রিন্সিপালের সাথে দেখা যাচ্ছে৷ ফটো: রাহিমা আবদুল্লাহ

এক দশক ধরে চলা যুদ্ধ থেকে বাঁচতে সিরিয়ার অনেক শরণার্থী ডেনমার্কে আশ্রয় নিয়েছেন৷ কিন্তু দেশটিতে আশ্রয় নেওয়া তরুণীরা ও একা থাকা নারীরা প্রত্যাবাসনের ঝুঁকিতে আছেন৷

ডেনমার্ক সরকারের বিবেচনায়, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কসহ এর পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহ নিরাপদ৷ আর তাই ডেনমার্কে থাকা অনেক শরণার্থীকে সিরিয়াতে ফেরত যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে৷

শরণার্থীদের বিষয়ে ডেনমার্ক সরকার বিভিন্ন ধরনের নীতিমালা হাতে নিয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে ইউরোপে বাইরে থেকে আসা শরণার্থীর সংখ্যা সীমিত করা, তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় থাকতে দেওয়া এবং তাদের দেশে ফেরত পাঠানো৷ তাছাড়া আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়া যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তৃতীয় দেশ রুয়ান্ডার সাথে চুক্তির পরিকল্পনাও ইতিমধ্যে করা হয়েছে৷ 

সমালোচকেরা বলছেন, এসব কারণে ডেনমার্ক শরণার্থীদের জন্য অনুপযোগী হয়ে উঠেছে৷ 

নারীরা ঝুঁকিতে  

সিরীয় তরুণদের বেলায় প্রত্যাবাসনের ঝুঁকি অনেক কম থাকে৷ কারণ দেশে ফেরত পাঠানো হলে সাধারণত তাদের সেনাবাহিনীতে যোগদানে বাধ্য করা হয়৷ বয়স্ক এবং পরিবার নিয়ে আসা শরণার্থীদের বেলায়ও প্রত্যাবাসনের ঝুঁকি কম৷ 

আর এ কারণে ডেনমার্কের শরণার্থী নীতিমালার মূল শিকার হচ্ছেন দেশটিতে আশ্রয় নেওয়া তরুণী এবং একা থাকা নারীরা৷

এমনই একজন সিরীয় তরুণী আয়া আবো দাহের৷ বয়স ২২৷ ডেনিশ সরকার যখন তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা জানায় দাহের তখন মাত্র হাইস্কুল শেষ করেছিল৷ পাঁচ বছর আগে তিনি ডেনমার্কে এসেছিলেন৷ ডেনিশ ভাষা খুব ভাল বলতে পারেন৷ আর এর মাধ্যমে ডেনমার্কের সমাজে তিনি খুব ভালোভাবেই মিশে যেতে পেরেছিলেন৷ 

পড়ুন: ‘কুকুর লেলিয়ে, নির্যাতন করে পুশব্যাক করে বুলগেরিয়ার পুলিশ’

তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এনিয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়৷ সম্প্রতি বৃটিশ গণমাধ্যম দ্যা গার্ডিয়ানের একটি ডকুমেন্টারিতে দাহেরের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়৷    

গার্ডিয়ানকে দাহের জানান, প্রত্যাবাসনের আদেশ পাওয়ার পর তিনি এ বিষয়ে ডেনমার্কের রিফিউজি দপ্তরে আবেদন করেন৷ এরপর বিষয়টি সবার নজরে আসে৷ আবেদনের পর ডেনমার্কে আরো দুই বছর থাকার অনুমতি পান দাহের৷

ডেনমার্কে আশ্রয় পাওয়ার বিষয়ে দাহের অনেক ভাগ্যবতী বলতে হবে৷ কেননা, সিরিয়া থেকে আসা সব শরণার্থী ডেনমার্কে থাকার এমন সুযোগ সবসময় পান না৷ 

গার্ডিয়ানকে দাহের বলেন, ‘‘আমার আশ্রয় আবেদনের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর তারা আমাকে থাকার অনুমতি দিয়েছে৷ সিরিয়াতে কী বিপদ হতে পারে সে বিষয়ে তারা আমার কথা বিশ্বাস করেনি৷ এটা খুব বেদনাদায়ক৷’’

ডেনিশ সরকারের ‘দ্বৈতনীতি’

সমালোচকেরা বলছেন, শরণার্থীদের বিষয়ে ডেনিশ সরকারের নীতি ইউক্রেন থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের যে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়৷ 

জানা গেছে, ইউক্রেনের শরণার্থীদেরকে দেশটির সোশ্যাল হাউজিংয়ে জায়গা করে দিতে নতুন নিয়মও করেছে ডেনিশ সরকার৷ 

পড়ুন: মরক্কোর উন্মুক্ত অভিবাসন নীতির প্রশংসায় জাতিসংঘ

অথচ এমন নিয়ম করার আগে ডেনিশ সরকার ইউরোপের বাইরে থেকে আসা শরণার্থীরা কোন কোন এলাকায় থাকতে পারবে সে বিষয়ে একটি ডিক্রি জারি করেছিল৷

আর গত বছর দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডেনিশ নাগরিকদের আবাসিক এলাকায় ইউরোপের বাইরে থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা ১০ বছরের মধ্যে যেন শতকরা ৩০ ভাগের বেশি না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে একটি বিল প্রস্তাব করে৷ 

নাটাশা মেলের্শ/আরআর

 

অন্যান্য প্রতিবেদন