লিবিয়াতে জন্মেছেন দাউদ৷ তার বাবা-মায়ের শিকড় অবশ্য গিনিতে৷ এদিকে, দাউদের বাগদত্তা আয়েশাও লিবিয়াতে জন্মেছেন, বড় হয়েছেন৷ তবে লিবিয়া নয়, আয়েশার জাতীয়তা মালির৷ লিবিয়াতে জীবনের এতটা সময় কাটিয়ে ফেললেও সেদেশে আদৌ কি তাদের ভবিষ্যৎ রয়েছে? কারণ উত্তর আফ্রিকার দেশটির নাগরিকত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা তাদের কারো নেই৷
লিবিয়ার বেনগাজিতে ১৯৯০ সালে জন্মেছিলেন দাউদ সিল্লা৷ বেনগাজি এবং ত্রিপোলিতেই বেড়ে উঠেছেন এই তরুণ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি লিবিয়াতে থাকি, এখানেই বড় হয়েছি৷ আমার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাসহ সবটাই লিবিয়ান স্কুলে৷ আমার ডিপ্লোমাও রয়েছে ফরাসি ভাষায়৷’’
দাউদের জন্মের আগে তার বাবা-মা লিবিয়ায় চলে এসেছিলেন৷ সত্তরের দশকে তার বাবা একটি ফেলোশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে গিনি থেকে লিবিয়ায় আসেন৷ দাউদ বলেন, ‘‘আমার বাবা বেনগাজির গ্যারিউনিস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন৷ তারপর গিনিতে আমার মাকে বিয়ে করে লিবিয়াতে স্থায়ীভাবে ফিরে আসেন৷’’
ত্রিপোলিতে গিনির মানুষেরা
দাউদ পেশাদারভাবে ফুটবল খেলতেন৷ তারপর লিবিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে যায়৷ তার কথায়, ‘‘আমি লিবিয়ার বেশ কয়েকটি স্পোর্টস ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম৷ একাধিক ফুটবল ক্লাব আমাকে অর্থের বিনিময়ে খেলতে ডেকেছে৷ তবে লিবিয়ার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় এই ক্লাবগুলোর উপর তার প্রভাব পড়ে৷ এর ফলে ফুটবল ছেড়ে আমাকে অন্য চাকরি খুঁজতে হয়৷’’
তার বক্তব্য, ‘‘ত্রিপোলিতে গিনি থেকে আসা একটি গোষ্ঠী রয়েছে৷ আমরা সামাজিক কাজে, সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলা সংক্রান্ত নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করি৷ কোনো কাজের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ এলে একসঙ্গে তার সমাধান খুঁজে পাওয়ার জন্য দেখাসাক্ষাত করি৷’’
তার কথায়, ‘‘আমি ভাগ্যবান যে সামাজিক একটি কর্মকাণ্ডের সময়ই আমার বাগদত্তা আয়েশার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল৷’’
লিবিয়ায় ভবিষ্যৎ নেই?
আয়েশাও লিবিয়াতে জন্মগ্রহণ করেছেন, বেড়ে উঠেছেন এবং পড়াশোনা করেছেন৷ এখন তিনি মিসরাতা শহরে থাকেন৷ তবে তার জাতীয়তা হল মালির৷
আয়েশা জানান, তিনি এবং দাউদ দ্রুত বিয়ের পরিকল্পনা করছেন৷ তবে তারা ভবিষ্যতের বিষয়ে নিশ্চিত নন৷
লিবিয়াতে আইনি অবস্থান দুর্বল হওয়ার কারণে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত তারা৷ শীঘ্রই অন্য কোথাও যাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন এই যুগল৷ আয়েশার কথায়, ‘‘আমরা লিবিয়া থেকে বেরিয়ে অন্যত্র সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভাবছি৷ লিবিয়ায় আমাদের কোনো আইনি সুবিধা বা অধিকার নেই৷’’

‘‘লিবিয়া ছেড়ে যাইনি, তবে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবো না’’
দাউদ বলেন, ‘‘জন্মের পর কখনো লিবিয়া ছেড়ে কোথাও যাইনি৷ সারা জীবন প্রায় লিবিয়াতে কাটিয়ে দিলাম৷’’ লিবিয়ায় তার অভিজ্ঞতা অনেকাংশে ইতিবাচক৷ দেশটির মানুষরাও অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মনে করেনি তাকে৷
তার কথায়, ‘‘লিবিয়ার জনগণের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা রীতিমতো সৌভাগ্যের৷ আমি লিবিয়া জুড়ে বেশ কয়েকটি শহরে বাস করেছি৷ অনেক বন্ধু রয়েছে৷ তারা আমাকে তাদের নিজেদেরই একজন বলে ভাবে৷ আমি কোনো সামাজিক সমস্যার মধ্যে পড়িনি৷ আমি অস্বীকার করি না যে আমি কয়েকবার বর্ণবাদের শিকার হয়েছি৷ কিন্তু সেগুলো গুরুতর কিছু নয়৷ আমি নারীদের পোশাকের দোকানে সেলস কোর্ডিনেটর হিসাবে কাজ করি৷’’
তারা বাড়ি কিনতে পারছেন না
দাউদ জানান, লিবিয়ার নাগরিক হওয়ার কোনো পথ নেই তাদের কারও কাছে৷ বাড়ি পর্যন্ত কিনতে পারবেন না তারা৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে শুধুমাত্র জন্ম এবং স্কুলের সনদ আছে যেখানে আমি পড়াশোনা করেছি৷ একটি স্থায়ী বাসস্থান বা জাতীয়তার জন্য আবেদন করার কোনো উপায় নেই৷ আমি কোনো অ্যাপার্টমেন্ট বা কোনো রিয়েল এস্টেটের মালিক হতে পারবো না বা কিনতে পারব না৷’’
দাউদ বিশ্বাস করেন, লিবিয়ায় জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে ‘অন্যান্য অবৈধ অভিবাসীদের মতো আচরণ’ করা উচিত নয়৷ তার বক্তব্য, তিনি কাজ করেন এবং সবরকম বিল পরিশোধ করতে পারেন৷ তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘‘আমার সংস্কৃতি এবং জীবনধারা অনুযায়ী আমি লিবিয়ান, কিন্তু লিবিয়ার আইন অনুযায়ী লিবিয়ার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই৷’’
আরকেসি/এআই