যুক্তরাজ্যে রেসিডেন্স কার্ড উত্তোলন করতে আসা সুরক্ষাপ্রাপ্ত শরণার্থীরা। ছবি: ইপিএ
যুক্তরাজ্যে রেসিডেন্স কার্ড উত্তোলন করতে আসা সুরক্ষাপ্রাপ্ত শরণার্থীরা। ছবি: ইপিএ

ব্রিটিশ হোম অফিসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাজ্যে আশ্রয় আবেদনের প্রক্রিয়াকরণে বেশ সময় লাগছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলের মেয়াদকালে আশ্রয় আবেদন যাচাইবাছাইয়ে এই ধীরগতির সমালোচনা করে আসছে অ্যামনেস্টিসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।

ব্রিটিশ হোম অফিস বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২৬ মে প্রাকাশিত পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে আশ্রয় আবেদন করা প্রায় ৭৩,২০০ ব্যক্তি এখনও তাদের আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছেন। অপেক্ষমান আশ্রয়প্রার্থীরা ছয়মাসেরও বেশি সময় আগে আবেদন করেছিলেন।

এই পরিসংখ্যানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় আবেদনের সিদ্ধান্ত দেয়ার সময়সীমা বিলম্বিত হওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। ২০১৯ সালের মার্চ থেকে এই হার চারগুণ বেড়েছে। সে সময় ১৮,৭৩৪ জন আশ্রয়প্রার্থী ছয় মাস বা তারও বেশি সময় ধরে সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করেছিলেন। 

অ্যামনেস্টি ইন্টান্যাশনাল যুক্তরাজ্য একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে প্রীতি প্যাটেলের তিন বছর মেয়াদকালে প্রত্যেক বছর আশ্রয় আবেদনের সময়সীমা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েছে।”

পড়ুন>> ইংলিশ চ্যানেলে অভিবাসীর প্রবেশ ঠেকাল বর্ডার ফোর্স

২০২১ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৫৫ হাজারেরও বেশি আশ্রয় আবেদন নথিভুক্ত হয়েছে (অভিভাবকহীন নাবালকরা ছাড়া) যেটি আগের বছরের তুলনায় বেশি। ২০২১ সালের মার্চে আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৩ হাজার এবং ২০২০ সালের মার্চে ছিল প্রায় ৪০ হাজার। 

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইগ্রেশন অবজারভেটরি জানিয়েছে, “২০২০ ও ২০২১ সালে আশ্রয় আবেদনের সিদ্ধান্তের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় এবং ২০২১ সালের গ্রীষ্মে আফগান সংকটের কারণে আবেদন বৃদ্ধি পাওয়ায় আশ্রয় আবেদনের প্রক্রিয়াকরণের সময় দীর্ঘায়িত হয়েছে।” 

তবে এনজিওগুলো বরাববরই ব্রিটিশ সরকারের দায়িত্বের দিকে আঙুল তুলেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যুক্তরাজ্য-এর শরণার্থী ও অভিবাসীদের অধিকার বিষয়ক পরিচালক স্টিভ ভালদেজ সাইমন্ডস বলেন, “প্রীতি প্যাটেলের আশ্রয় নীতির ব্যর্থতার কারণে আশ্রয় আবেদনের প্রক্রিয়াকরণে বিশাল বিলম্ব হয়েছে। যার ফলে সুরক্ষা খুঁজছেন এমন হাজার হাজার মানুষ অনিশ্চয়তা ও দুর্দশার মধ্যে পড়ে গেছে।”.

তার মতে, “এটি একটি ‘ইচ্ছাকৃত’ ব্যর্থতা যা একটি অপরিমেয় মানবিক এবং আর্থিক ক্ষতি সৃষ্টি করে। প্রীতি প্যাটেলের বিপর্যয়কর নেতৃত্ব আশ্রয়ব্যবস্থাকে মাটিতে নামিয়ে এনেছে।

৭৫ শতাংশ আবেদন সফল

আশ্রয় আবেদনের সাথে সংশ্লিষ্ট ধীরগতি এনজিওগুলোর দৃষ্টিতে আরও অগ্রহণযোগ্য কারণ শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ বিলম্বিত অনুরোধ সফল হয় অর্থাৎ সুরক্ষার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পেয়ে থাকে। 

ব্রিটিশ হোম অফিসের তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের মার্চ মাসের মধ্যে জমা হওয়া ৭৫ শতাংশ আশ্রয় আবেদনেরক্ষেত্রে আবেদনকারী শরণার্থী মর্যাদা অথবা সাবসিডিয়ারি প্রটেকশন পেতে সফল হয়েছেন।  

আরও পড়ুন>> ইংলিশ চ্যানেলে নৌকায় অভিবাসী পারাপারের মূল হোতাকে গ্রেপ্তারের দাবি

এটি ১৯৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেয়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সুরক্ষার হার। যুক্তরাজ্যে সর্বোচ্চ ৮২ শতাংশ পর্যন্ত আবেদন সুরক্ষা পাওয়ার রেকর্ড আছে।

ব্রিটিশ হোম অফিসের মতে, যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হওয়া সুরক্ষা মর্যাদার হার বৃদ্ধি পাওয়ার একটি কারণ। 

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ বিবিসি সাংবাদিক সাইমন জোনস বলেন, ‘‘সুরক্ষার হার থেকে এটি পরিষ্কার যে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করা লোকেরা প্রকৃতপক্ষে আশ্রয়ের অধিকার পাওয়ার জন্য যোগ্য। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে তার করা বক্তব্যের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা উচিত। কারণ তিনি বলেছিলেন, “ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে আসা বেশিরভাগ আশ্রয়প্রার্থী অর্থনৈতিক অভিবাসী।””

গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আশ্রয় আবেদন করেছে আফগানিস্তান, ইরান এবং আলবেনিয়া থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীরা। প্রথম দুটি দেশের আশ্রয়প্রার্থীদের সুরক্ষা পাওয়ার হার যথাক্রমে ৯১ শতাংশ এবং ৮৮ শতাংশ ।

পড়ুন>> রুয়ান্ডায় কেমন থাকবেন ব্রিটেন থেকে যাওয়া আশ্রয়প্রার্থীরা

ইতিবাচক সিদ্ধান্তের এই সর্বোচ্চ পরিসংখ্যানের পরও অভিবাসীরা সামনে আরও প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হওয়ার আশঙ্কায় আছেন। ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রীতি প্যাটেলের নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ হোম অফিস। এই উদ্যোগকে অমানবিক বলে এনজিও, অভিবাসন সংস্থা ও অধিকার সংগঠনগুলো নিয়মিত ক্ষোভ জানিয়ে আসছে। 


এমএইউ/এআই


 

অন্যান্য প্রতিবেদন