(ফাইল ছবি) আইনি বৈধতা, কাজের সুযোগ, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন অধিকারের দাবিতে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে টানা এক বছর আন্দোলন করেন অনিয়মিত অভিবাসীরা। ছবি: রয়টার্স
(ফাইল ছবি) আইনি বৈধতা, কাজের সুযোগ, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন অধিকারের দাবিতে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে টানা এক বছর আন্দোলন করেন অনিয়মিত অভিবাসীরা। ছবি: রয়টার্স

বেলজিয়ামের গুইনেজ চার্চ এবং ব্রাসেলস বিশ্ববিদ্যালয়ে বহুল আলোচিত অনশনের প্রায় এক বছর পর এখনও উদ্বিগ্ন আন্দোলনে অংশ নেয়া ব্যাক্তিরা। কারণ আন্দোলন শেষে দায়ের করা ৪৪২টি নিয়মিতকরণের আবেদনের মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেয়েছে। এই হতাশাজনক ফলাফলের কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট অনিয়মিত অভিবাসীরা বেলজিয়ামের কট্টর অভিবাসন নীতিকেই দায়ী করছেন।

২০২১ সালের মে মাসে বৈধতার দাবিতে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের বেগুইনেজ চার্চ এবং ব্রাসেলস বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ দখল করে টানা অনশন করা অনিয়মিত অভিবাসীদের উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা কাটেনি। 

বেলজিয়ামে অভিবাসীদের অধিকার আদায়ে কাজ করা অভিবাসন সংস্থা ‘সিরে’ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, “আন্দোলনের এক বছর পরে অনথিভুক্ত অভিবাসীদের ৪৪২টি নিয়মিতকরণের আবেদনের মধ্যে শুধুমাত্র ৫৫টি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। যেটি প্রতি চারটি আবেদনের মধ্যে মাত্র একটি সাফল্য।”

আরও পড়ুন>>বেলজিয়ামে ৫০০ আফগানের আশ্রয় আবেদন বাতিল

অভিবাসীদের রেসিডেন্স কার্ড প্রদানের দায়িত্বে থাকা বেলজিয়াম সরকারের বিদেশ বিষয়ক দপ্তর বা ফরেনার্স অফিস জানিয়েছে, “এ পর্যন্ত ৫৩টি আবেদন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পেয়েছে।”


তবে জেনে রাখা ভাল, একটি ফাইলে একাধিক ব্যক্তি বৈধতা পেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পরিবারগুলো সাধারণত একক আবেদনের মাধ্যমে নিয়মিতকরণের জন্য আবেদন করে থাকেন। সেখানে তাদের সন্তানেরাও যুক্ত থাকে।”

বেগুইনেজ চার্চ আন্দোলনের অনিয়মিত অভিবাসীদের মুখপাত্র আহমেদ মানার বলেন, “এই ফলাফল অত্যন্ত দুঃখজনক এবং আন্দোলনরতদের হতাশ করেছে। অভিবাসীরা ক্ষুব্ধ এবং সরকারের ব্যবহারে তারা অপমানিত হয়েছে। সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু তা সম্পূর্ণভাবে রক্ষা করা হয়নি।”

পড়ুন>>বেলজিয়ামে অপ্রাপ্তবয়স্ক বিদেশিরা আইনি অভিভাবকের সংকটে

গত বছর টানা দুই মাস অনশনের পর ধর্মঘটকারীদের স্বাস্থ্যের অবস্থা অবনতি হলে আন্দোলনকারী এবং সরকারের মধ্যে একটি মৌখিক চুক্তি হয়েছিল। সরকার প্রতিটি আবেদন আলাদাভাবে যাচাই বাছাইয়ের ভিত্তিতে সমস্ত আবেদন আমলে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যা কয়েক বছরের আন্দোলন সংগ্রামের পর অনিয়মিত অভিবাসীদের মধ্যে বৈধতা প্রাপ্তির আশা জাগিয়েছিল।

‘সিরে’ অভিবাসন সংস্থার রাজনৈতিক শাখার পরিচালক সোফি দেভিলে বলেন, যেসব অভিবাসীরা বৈধতা পেয়েছেন তাদের মত ঠিক একই ফাইল জমা দিয়েও অনেকেই সফল হয়নি। যেমন, শিশুদের সঙ্গে থাকা একক বাবা অথবা মা নিয়মিত হয়েছেন। কিন্তু একই অবস্থায় থাকা অবিবাহিত অথবা একক নারী ও পুরুষ আবেদনকারীরা বৈধতা পাননি।

আহমদ মানারের পাশপাশি অধিকার ও অভিবাসন সংস্থাগুলোও এটিকে একটি “অস্বচ্ছ” এবং “স্বেচ্ছাচারী” পদ্ধতির ফলাফল দাবি করে এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে।

পড়ুন>>ডিটেনশন সেন্টারের ধারণক্ষমতা দ্বিগুণ করছে বেলজিয়াম

সিরে সংস্থার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “যারা নিয়মিতকরণ থেকে বাদ পড়েছেন, তাদের মধ্যে বেলজিয়ামে পড়াশোনা করা প্রাক্তন ছাত্ররাও রয়েছেন। যারা বেশ কয়েক বছর ধরে বেলজিয়ামে বৈধভাবে বসবাস করেছেন। যাদের পুরো পরিবার এখানে দীর্ঘদিন ধরে বৈধভাবে বসবাস করছে। নেতিবাচক সিদ্ধান্তপ্রাপ্তদের মধ্যে বেকারি শ্রমিক ও পাঁচক, ইলেকট্রিসিয়ান, নার্স ও দরজিও আছেন যাদের সবার জীবন এক জায়গায় থেমে আছে।”

আরও পড়ুন>>বেলজিয়ামে লটারিতে জেতা আড়াই কোটি টাকা তুলতে পারছেন না এক অভিবাসী

তবে বেলজিয়ামের অভিবাসন কার্যালয়ের মুখপাত্র ডমিনিক এরনল্ডের মতে, অভিবাসীদের উপস্থাপিত যুক্তগুলো বৈধতা প্রদানের মানদণ্ডের সাথে মানবিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু বেলজিয়ামের বর্তমান আইন অনুযায়ী এসব যুক্তি বৈধতার অনুমতি পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। তবে এসব যুক্তিগুলির সংমিশ্রণ অনেক আবেদনের ফলাফলকে প্রভাবিত করবে।” 



এমএইউ/আরআর


 

অন্যান্য প্রতিবেদন