রুয়ান্ডা অভিমূখে প্রথম ফ্লাইটের প্রতিবাদে 
১৩ জুন সোমবার যুক্তরাজ্যে বিক্ষোভ হয়েছে। ছবি: রয়টার্স
রুয়ান্ডা অভিমূখে প্রথম ফ্লাইটের প্রতিবাদে ১৩ জুন সোমবার যুক্তরাজ্যে বিক্ষোভ হয়েছে। ছবি: রয়টার্স

ব্রিটিশ সরকার মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্যে অনিয়মিত পথে আসা সাত অভিবাসীর একটি দলকে রুয়ান্ডায় পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বিশেষভাবে বরাদ্দকৃত একটি চার্টার্ড ফ্লাইট লন্ডন থেকে রওনা হয়ে পরদিন সকালে রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে অবতরণ করার কথা রয়েছে। তবে এনজিওগুলো সরকারের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে জুলাই মাসে আদালতে বিস্তারিত আপিল আবেদন করার ঘোষণা দিয়েছে।

শেষ মুহূর্তে আর কোনো জটিলতার কারণে বাতিল না হলে ১৪ জুন সন্ধ্যায় সাত অভিবাসীদের একটি দলকে রুয়ান্ডায় পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ব্রিটিশ সরকার।

অনিয়মিত পথে যুক্তরাজ্যে আগত এসব ব্যক্তিরা একটি বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটে বুধবার সকালে রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে অবতরণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে। কিন্তু ফ্লাইট বাতিল করার জন্য আদালতে দায়ের করা চূড়ান্ত আপিল আবেদন ফলপ্রসু হয়নি। বিচারপতি রবীন্দ্র সিং এর নেতৃত্বে গঠিত আদালত সোমবার সন্ধ্যায় এনজিও ও পাবলিক সার্ভিস ইউনিয়নের করা আপিল আবেদন খারিজ করে দেন।

প্রথম ফ্লাইটের ২৪টি টিকিট বাতিল করা হলেও সাতজন আশ্রয়প্রার্থীকে এখনও ফ্লাইটে তোলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে অভিবাসন সংস্থা কেরার ফর কালে। 

পড়ুন>>যুক্তরাজ্যে পৌঁছাতে গিয়ে প্রতারণার শিকার নেপালি কর্মীরা

সংস্থাটি টুইটারে লিখেছে, “প্রাথমিকভাবে যাদের ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল তাদের মধ্যে ইরানি, ইরাকি, আলবেনীয় এবং একজন সিরীয় ছিলেন।’’

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জানায়, “লন্ডন আশ্রয় আইনের দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে অন্যদেশে স্থানান্তরিত করতে চায়, যা ১৯৫১ সালের জেনেভা কনভেনশনের পরিপন্থি।”

সোমবার যুক্তরাজ্যের লন্ডন এবং ম্যানচেস্টার শহরেও রুয়ান্ডা অভিমুখে প্রথম ফ্লাইটের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে।

আরও পড়ুন>>অভিবাসীদের কাছে গুরুত্ব হারাচ্ছে ইংল্যান্ডের শ্রমবাজার

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো #স্টপরুয়ান্ডা, #স্টপদ্যাফ্লাইট হ্যাশট্যাগে সয়লাব হয়ে গেছে। কিন্তু এই সমস্ত বিরোধিতা সত্ত্বেও বরিস জনসনের কনজারভেটিভ সরকার অবৈধ চ্যানেল অতিক্রমকে নিরুৎসাহিত করার অজুহাতে এই ফ্লাইটগুলো কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর। 

ব্রেক্সিটের পর অবৈধ অভিবাসন রোধে এমন হাজারো প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও অনিয়মিত অভিবাসন বারবার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মঙ্গলবার প্রথম ফ্লাইটের পরেও অভিবাসন সংস্থা ও এনজিওগুলো হাল ছাড়তে রাজি না। অধিকার সংগঠনগুলো যুক্তরাজ্য সরকারের এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে বিশদ আলোচনার জন্য আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

ডিটেনশন অ্যাকশন নামক সংস্থা এক প্রতিক্রিয়ায় জানায়, “আমরা হতাশ, কিন্তু এই নীতির বৈধতার ব্যাপারে বিস্তারিত যাচাইয়ের লক্ষ্যে জুলাই মাসে একটি বৃহত্তর আপিল করা হবে।”

যুক্তরাজ্য সরকার রুয়ান্ডার সাথে এই চুক্তির ঘোষণার পর থেকে সেখানে থাকা আশ্রয়প্রার্থী ও অনিয়মিত অভিবাসীদের মধ্যে বেশ কয়েকটি আত্মহত্যার প্রচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। 

পড়ুন>>যুক্তরাজ্যের কঠিন ও অস্পষ্ট আশ্রয়পদ্ধতি নিয়ে শঙ্কায় আশ্রয়প্রার্থীরা

২০২২ সালের শুরুর পর থেকে ১০ হাজারেরও বেশি অভিবাসী ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে অবৈধভাবে ছোট নৌকায় ব্রিটিশ উপকূলে পৌঁছেছে, যা আগের বছরগুলির তুলনায় বহুগুণ বেশি।  


এমএইউ/এআই 


 

অন্যান্য প্রতিবেদন